এবড়োখেবড়ো সবুজ মাঠের উপর হাঁটু মুড়ে বসে বছর উনিশের এক তরুণ। পরনে কমলা জাম্পস্যুট। সামনে সেনার পোশাকে বছর দশেকের শিশু। হাতে বন্দুক। চোখেমুখে নৃশংসতার উল্লাস। তার পর হঠাত্ই ‘অপরাধী’র মাখা লক্ষ্য করে গুলি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর আরও তিনটে। ইজরায়েলের চর সন্দেহে নিমেষে খতম মহম্মদ মুসল্লম।
তেরো মিনিটের এই ভিডিওটি আজই ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে আইএস। মুসল্লমকে মেরে ফেলার পর তাঁর বাবা ও দাদা-সহ আরও ১৩ জন ইজরায়েলিকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে জঙ্গিরা। মেরে ফেলার আগে আবার মুসল্লমকে দিয়েই ‘দোষ’ কবুল করিয়েছে জঙ্গিরা। মোসাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কী ভাবে তিনি আইএসের আস্তানায় ঢোকেন তা-ও ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেন নিহত ইজরায়েলি তরুণ। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, পরিবারের সম্মতি নিয়েই নাকি তিনি এই চরবৃত্তি বেছে নেন।
পূর্ব জেরুজালেমে মুসল্লমের পরিবার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহত যুবকের মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মাত্র উনিশেই আমার ছেলেটা চর হয়ে গেল? জোর করে ওর মুখ দিয়ে এ সব বলানো হয়েছে। দুনিয়াকে ভয় দেখাতে গিয়ে আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকেই খতম করে দিল জঙ্গিরা।” মুসল্লমের বাবার বক্তব্য, গত বছর অক্টোবরে তুরস্কে বেড়াতে গিয়েই জঙ্গিদের হাতে পণবন্দি হয় ছেলে। ভিডিওটি দেখেছেন ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষও। এর সত্যতা অবশ্য স্বীকার করেননি তাঁরা।
তবে যে ভাবে এক শিশুকে দিয়ে এই খুন করানো হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় সরব হয়েছে বিশ্বের একটা বড় অংশ। এই প্রসঙ্গে নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নাতাশা আন্ডারহিল বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বিশেষত সিরিয়া আর ইরাকে আইএস যে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে এখানকার শৈশবটাই পুরো শেষ হয়ে গিয়েছে। নৃশংসতা যেন কোনও ভাবেই এদের মনে আর প্রভাব ফেলে না। দিনে দিনে হত্যাযন্ত্রে পরিণত হচ্ছে এরা।”
এর আগেও একাধিক বার শিশু-কিশোরদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে, কাটা মাথা ঝুলিয়ে রাখার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছে আইএস। যদিও এ বারের ভিডিওটি ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ইজরায়েলি সেনার দাবি, ভিডিওতে বন্দুক হাতে এক শিশুকে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত গুলি চালিয়েছে অন্য কেউ। তা ছাড়া যে মুহূর্তে মুসল্লমের মাথায় গুলি লাগে, শিশুটিকে এক বারের জন্যও ক্যামেরায় দেখা যায়নি।
বিতর্ক দানা বেঁধেছে আইএসের অন্য একটি ভিডিও ঘিরেও। গত কালই প্রকাশিত সেই ভিডিওতে ইরাকের একটি পার্কে কিছু শিশু-কিশোরকে মনের আনন্দে খেলতে দেখা গিয়েছে। মসুলের উত্তরে দিলজা শহরের এই পার্কটি তাদেরই তৈরি বলে দাবি আইএসের। জঙ্গিদেরও যে একটা মানবিক দিক আছে, তা প্রমাণ করতেই আইএসের এই ভিডিও-প্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। পার্কে একাধিক বাচ্চা ও তাদের অভিভাবকদের সাক্ষাত্কারও নিয়েছে জঙ্গিরা। আইএসের রাজত্বে সুখেই আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ইরাকি প্রশাসন অবশ্য এই ধরনের প্রচারমূলক ভিডিওকে পাত্তা দিতে নারাজ।