বাবার চোখের সামনেই ক্ষেপণাস্ত্র হানায় মৃত্যু শিশুর

আপেলের রস আর লজেন্স চাই— বাবার কাছে আব্দার করেছিল ছোট্ট ছেলেটি। বাবা বলেছিলেন, কাজ থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবেন। তাই সকাল থেকেই বাবার জন্য পথ চেয়ে ছিল সে। অপেক্ষা অপেক্ষাই রয়ে গেল। কারণ বাবার চোখের সামনেই ইউক্রেনের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে শেষ হয়ে গেল ছোট্ট প্রাণটি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ডনেৎস্ক শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০১:১৯
Share:

আপেলের রস আর লজেন্স চাই— বাবার কাছে আব্দার করেছিল ছোট্ট ছেলেটি। বাবা বলেছিলেন, কাজ থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবেন। তাই সকাল থেকেই বাবার জন্য পথ চেয়ে ছিল সে। অপেক্ষা অপেক্ষাই রয়ে গেল। কারণ বাবার চোখের সামনেই ইউক্রেনের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে শেষ হয়ে গেল ছোট্ট প্রাণটি।

Advertisement

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষের বলি বছর চারেকের শিশুটি। এখনও চলছে গত বছর এপ্রিলে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘর্ষ। ন’মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষে বলি হয়েছেন বহু নিরীহ নাগরিক। এ পর্যন্ত অন্তত ৪৮০০ জন নিহত হয়েছেন। তবে ইউক্রেন সরকার নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে এখনও কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি।

সারা রাত হাড়ভাঙা খাটনির পর কাকভোরে বাড়ি ফিরছিলেন ভ্লাদিমির ববরিশেভ নামে বছর তিরিশের এক শ্রমিক। বাড়ির কাছে এসে তিনি দেখেন একটি ক্ষেপণাস্ত্র সোজা নেমে আসছে তাঁর বাড়ির দিকে। মুহূর্তের মধ্যেই তাসের ঘরের মতো তাঁর চোখের সামনে ভেঙে পড়ল বাড়িটি। ওই দৃশ্যে হতবাক ভ্লাদিমিরের যখন হুঁশ ফিরল, তখন যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সেই সময় বাড়ির ভিতরেই ছিলেন ভ্লাদিমিরের স্ত্রী এবং দুই ছেলে। কোনও রকমে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে স্ত্রী ও ছেলেদের উদ্ধার করে বাঁচানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছে ভ্লাদিমিরের ছোট ছেলে চার বছরের আর্তিওম। স্ত্রী ও বড় ছেলে প্রাণে বাঁচলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক। দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে বড় ছেলে বছর সাতেকের মিখাইল।

Advertisement

হাল্কা বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশায় মোড়া রাস্তা দিয়ে যখন ছোট্ট প্রাণহীন দেহটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখনও খুব কাছ থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলির আওয়াজ। তবে গোলাগুলি এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই মোমবাতি নিয়ে শিশুটির শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসেছিলেন ১০ জন। শেষ বারের মতো নাতিকে দেখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আর্তিওমের ঠাকুমা। কফিনে শায়িত ছোট্ট নিথর দেহটির পাশে একটি সফট টয় রাখতে রাখতে তিনি বলেন, “ছেলেটা একটা খরগোশ চেয়েছিল!”

ছেলেকে শেষ শয্যায় দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সদ্য পুত্রহারা ভ্লাদিমির। ঘটনায় তিনি ইউক্রেন সেনাকেই দায়ী করেছেন। বারবার সবার কাছে তিনি একটাই প্রশ্ন করে চলেছেন, “আমার ছেলে কি জঙ্গি ছিল?” স্ত্রী ও বড় ছেলে মিখাইলের জ্ঞান ফিরলে তাদের কী জবাব দেবেন, তা ভেবে উঠতে পারেননি ভ্লাদিমির।

পকেটে তখনও রয়েছে আর্তিওমের জন্য কেনা আপেলের রস ও লজেন্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন