বাড়ির অমতে বিয়ে, মাথা কেটে খুন মেয়ে ও জামাইকে

ফরজানার স্মৃতি ফিকে হয়নি এখনও। ঠিক এক মাসের মাথায় ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। পরিবারের লোকেরাই সর্বসমক্ষে হাত-পা বেঁধে মাথা কেটে খুন করল মেয়ে-জামাইকে। অপরাধ? বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন তরুণী। বছর তেইশের মুয়াফিয়া বিবির বাড়ি পূর্ব পাকিস্তানের সাতরা গ্রামে। পাশের গ্রাম হাসানাবাদে থাকতেন সাজ্জাদ আহমেদ। পড়শি গ্রামের মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন সাজ্জাদ। তরুণীর সম্মতি মিলতেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এক বাক্যে না করে দেন তরুণীর বাড়ির লোক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লাহৌর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৪ ০১:২৪
Share:

ফরজানার স্মৃতি ফিকে হয়নি এখনও। ঠিক এক মাসের মাথায় ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। পরিবারের লোকেরাই সর্বসমক্ষে হাত-পা বেঁধে মাথা কেটে খুন করল মেয়ে-জামাইকে। অপরাধ? বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন তরুণী।

Advertisement

বছর তেইশের মুয়াফিয়া বিবির বাড়ি পূর্ব পাকিস্তানের সাতরা গ্রামে। পাশের গ্রাম হাসানাবাদে থাকতেন সাজ্জাদ আহমেদ। পড়শি গ্রামের মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন সাজ্জাদ। তরুণীর সম্মতি মিলতেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এক বাক্যে না করে দেন তরুণীর বাড়ির লোক। কারণ, ছেলে নিচু জাতের। মেয়েকে ওই ঘরে বিয়ে দেওয়া অসম্ভব। এর পরেই পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন দু’জনে।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৮ জুন সাজ্জাদের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালান মুয়াফিয়া। ওই দিনই তাঁরা আদালতে বিয়ে করেন। বাড়িতে কী কাণ্ড হচ্ছে, আন্দাজ করতে পেরেছিলেন দু’জনেই। তাই নতুন বৌকে নিয়ে হাসানাবাদে ফেরেননি সাজ্জাদ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো পরিবেশ শান্ত হয়ে গিয়েছে, এই মনে করেই সম্প্রতি বাড়ি ফিরে যান।

Advertisement

গত কাল মুয়াফিয়ার বাড়ির লোক জানতে পারে, হাসানাবাদে এসেছেন ওঁরা। সেই মতো আজ সাজ্জাদের বাড়িতে চড়াও হয় মুয়াফিয়ার পরিবারের ৭ জন। তার মধ্যে তরুণীর বাবা দিলশাদও ছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে মেয়ে-জামাইকে। টানতে টানতে নিয়ে আসে গ্রামের মূল সড়কে। তত ক্ষণে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে। ছোটখাটো একটা ভিড়ই জমে গিয়েছে সেখানে। সকলের সামনেই শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। বেধড়ক মারধরের পর বেঁধে ফেলা হয় হাত-পা। এর পর জামার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে ছোরা। ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় মুণ্ড। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নববিবাহিত দম্পতির রক্তাক্ত শরীর।

এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ‘পরিবারকে অসম্মান করায়’ মেয়েকে তিনি উচিত শাস্তি দিয়েছেন, ঘুরে ঘুরে সেই আস্ফালনও করেন দিলশাদ।

এফআইআরে এই সবই জানিয়েছেন ছেলের বাড়ির লোক। সাজ্জাদের ভাই জামাল জানান, দাদারা বাড়ি ফিরতে চাননি। কিন্তু মুয়াফিয়ার বাড়ির লোক বারবার করে বলে, ওঁদের মাফ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে বাড়ি ফিরতে অনুরোধ জানায় মুয়াফিয়ার মা-ই। আক্ষেপের সুরে জামাল বললেন, “ওটা আসলে একটা ফাঁদ ছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। চলছে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজও।

কিন্তু ওই পর্যন্তই। পাক মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত বছরই ৮৬৯ জনকে সম্মান রক্ষায় খুন করা হয়েছে। ঠিক এক মাসে আগে ২৮ মে ভিড়ে ঠাসা লাহৌর হাইকোর্টের সামনে অন্তঃসত্ত্বা ফরজানা ইকবালকে থেঁতলে মারা হয়েছিল। তাঁকে বাঁচাতে স্বামী যখন পুলিশের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন, তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, কিছু করার নেই। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ হস্তক্ষেপ করায় পরের দিন ৪ জনকে ধরা হয়। মুয়াফিয়া-সাজ্জাদের কথা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসবে কি না, দোষীরা শাস্তি পাবে কি না, তা জানে শুধু সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন