‘পেশোয়ারের শিশুমেধ কাঁদিয়েছে আমাদের সকলকে’ ঊর্দু ভাষায় আর্তি এই খুদেরও। শনিবার শ্রীনগরে। ছবি:পিটিআই।
শতাধিক পড়ুয়ার মৃত্যু পাকিস্তান যে সহজে মানবে না, সে আশ্বাস আগেই দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সেই মতো শুরুও হয়ে গিয়েছে তালিবান-নিধন অভিযান। পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে হামলা চালিয়ে দু’দিনের মধ্যেই ১১৯ জন তালিবানি জঙ্গিকে খতম করেছে পাক সেনা। অন্য দিকে শুরু হয়েছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে দোষী সাব্যস্তদের ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া। গত রাতেই এমন দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে পাক প্রশাসনের দাবি। প্রথম দফায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা। সেনা সূত্রে খবর, যে কোনও সময় তাদের ফাঁসি দেওয়া হতে পারে।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ফের বহাল করার পরও সমালোচনা শুনতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। একাংশের যুক্তি, পাক সেনার তালিবান-বিরোধী অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই শতাধিক পড়ুয়াকে খুন করেছে জঙ্গিরা। এই অবস্থায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে দোষী সাব্যস্তদের ফাঁসিতে ঝোলানোর অর্থ তালিবানের ক্ষোভ আরও বাড়ানো। যার জেরে ফের প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। সুতরাং এই ফাঁসির সিদ্ধান্তে ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত পাকিস্তানের।
তবে পাক প্রশাসন সে সব যুক্তি মানেনি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে কোনও মতেই সুর নরম করা হবে না সে বার্তা দিতেই তড়িঘড়ি মহম্মদ অকিল ওরফে ডক্টর উসমান নামে এক জঙ্গিকে শুক্রবার ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। প্রশাসনের দাবি, ২০০৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দফতরে হামলা চালানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় অকিল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় আরসাদ মাহমুদ নামে আর এক জঙ্গিরও। ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের উপর হামলার অন্যতম চক্রী ছিল মাহমুদ। দুই জঙ্গিকেই পঞ্জাব প্রদেশের ফয়জলাবাদ জেলে স্থানীয় সময় রাত ন’টা নাগাদ ফাঁসি দেওয়া হয় বলে খবর। বৃহস্পতিবার রাতে ছ’জন জঙ্গির ফাঁসির পরোয়ানা সই করেছিলেন পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। তার মধ্যে দু’জনের ফাঁসি হল। বাকি চার জনের যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।
এর পাশাপাশি জারি রয়েছে সেনা অভিযানও। শনিবার আরও ২৮ জন তালিবানি জঙ্গিকে খতম করেছে পাক সেনাবাহিনী। শোনা যাচ্ছে মারা গিয়েছে মঙ্গলবারের হামলার অন্যতম চক্রী উমন মনসুরও। আবার আমেরিকার দাবি, শনিবার পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয়েছে ছ’জন সন্ত্রাসবাদীর। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে পাকিস্তানে তুঙ্গে সন্ত্রাস- বিরোধী তৎপরতা।
এবং এই অভিযানে পড়শি আফগানিস্তানকে পাশে পাচ্ছে পাকিস্তান। তেমনই জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। তাঁর দাবি, পাক-আফগান সীমান্ত কী ভাবে আরও বেশি করে সুরক্ষিত করে তোলা যায় সে নিয়ে দু’দেশই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য শুক্রবারও মুখ খুলেছিলেন সরতাজ। এক পাক দৈনিকের দাবি, গত কাল তিনি জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবারের হামলা পাকিস্তানের কাছে ৯/১১ কাণ্ডের মতোই ভয়াবহ। সে ভয়াবহতার জবাব দিতেই তালিবান-নিকেশ অভিযানের আয়োজন।
তবে এ কাজে কত দূর সাফল্য আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারত। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের কার্যকরী স্থায়ী প্রতিনিধি ভগবন্ত বিষ্ণোই জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অর্থের জোগান পেয়ে যাচ্ছে লস্কর ই তইবার মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। তা অবিলম্বে বন্ধ না করলে যে কোনও ধরনের জঙ্গি-বিরোধী অভিযান ঠিক কতটা সফল হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।