দু’টোই বোয়িং ৭৭৭ জেট। দু’টো বিমান বিপর্যয়ই এক কথায় নজিরবিহীন। এবং দু’টো বিমানই এক সংস্থার!
অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা কেলিন ম্যানের কাছে এমএইচ ৩৭০ ও এমএইচ ১৭-র মিল কিন্তু শুধু এটুকুই নয়। চার মাস আগে মার্চের আট তারিখ, কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিংয়ের পথে উধাও হয়ে গিয়েছিল মালয়েশীয় বিমান সংস্থার এমএইচ ৩৭০। ম্যানের ভাই আর ভাইয়ের বৌ ছিলেন ওই অভিশপ্ত বিমানে। সেই স্মৃতি ফিকে হওয়ার আগেই এল দ্বিতীয় আঘাত। শুক্রবার সকালে খবর পেলেন, ইউক্রেনের রুশ সীমান্ত ঘেঁষা ডনেৎস্কের গ্রাবোভো গ্রামে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, তাতে ছিলেন তাঁর সৎ মেয়ে ও জামাই।
কেলিন এ দিন জানান, মার্চ মাসে বন্ধুদের সঙ্গে বিদেশে ছুটি কাটিয়ে স্ত্রী মেরির সঙ্গে এমএইচ ৩৭০-এ উঠেছিলেন তাঁর ভাই রডনি বুরো। তাঁদের শেষ খবরটুকু এখনও জানেন না বাড়ির লোক জন। আশায় বুক বাঁধতে ইচ্ছে করলেও ভরসা পান না। আর এখন তো ভেঙে পড়েছেন আরওই। এক মাসের ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ফিরছিলেন সৎ মেয়ে মারি ও জামাই অ্যালবার্ট রিজক। কান্নায় বুজে আসা গলায় কোনও মতে বললেন, “খবরটা শোনা মাত্র পুরনো মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে এল। কেউ কি আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে!”
নিয়তির এই পরিহাস মানতে পারা কঠিন, এক কথায় স্বীকার করছেন বুরো পরিবারের সকলেই। যাদের বিমানে ওঠার মাসুল দিতে হল প্রিয়জনদের, সেই মালয়েশীয় বিমান সংস্থার অবশ্য কোনও দোষ দেখছেন না কেয়লিন ম্যান। তাঁর কথায়, “সংস্থার কোনও গাফিলতি তো এখনও প্রমাণ হয়নি। এ রকম যে হতে পারে সে কথাই বা কে ভেবেছিল।”
ক্ষেপণাস্ত্র হানায় এমএইচ ১৭ ভেঙে পড়ার খবর শোনার পর, নিজেদের শোকের পাহাড় সরিয়ে বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন এমএইচ ৩৭০-তে নিখোঁজদের আত্মীয়রা। মালয়েশীয় বিমান সংস্থার প্রতি ম্যানের খারাপ অনুভূতি না থাকলেও সব কিছু এত সহজে মানতে পারছেন না ঝ্যাং হোঙজি। তাঁর মতে, ওই বিমান সংস্থাটাই অপয়া। প্রথম বার কোনও আন্তর্জাতিক উড়ানে চেপেছিল লি জিনমাওয়ের মেয়ে। আর সেটাই হল শেষ বার। জানালেন, “এত জন বিমান যাত্রী ঝলসে গেল। তাঁদের কাছের লোকেরা যেন লড়াই করার সাহসটা পান।” লি-এর সন্দেহ, মালয়েশিয়ার সরকার বোধহয় কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর কু-নজরে পড়েছে। এমএইচ ৩৭০ দুর্ঘটনায় মা-কে হারিয়েছিলেন টঙ। কেন বারবার একই মডেল নম্বর, একই সংস্থার বিমান বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আর এক আত্মীয়-হারা লিখেছেন, “কান্না থামাছে না। সহজ-সরল, সাধারণ মানুষগুলোর জন্য কারা এ রকম মারণ-ফাঁদ পাতে!”
কী, কেন, কী ভাবে এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো এক দিন খুঁজে পাওয়া যাবে। শুধু ফিরে আসবে না মানুষগুলোই।