ভোটে ধরাশায়ী রাজাপক্ষে, খুশি দিল্লি

১০ বছর পরে পরিবর্তন এল কলম্বোয়। নির্বাচনে নিজেরই প্রাক্তন সহযোগী মৈত্রীপালা সিরিসেনার হাতে ধরাশায়ী হলেন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে। শ্রীলঙ্কায় এই রাজনৈতিক পরিবর্তনে খুশি নয়াদিল্লি। এলটিটিই-র বিরুদ্ধে অভিযানের সময়ে তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ-সহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমা হচ্ছিল রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে। তামিলদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৫
Share:

মৈত্রীপালা সিরিসেনা ও রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘে

১০ বছর পরে পরিবর্তন এল কলম্বোয়। নির্বাচনে নিজেরই প্রাক্তন সহযোগী মৈত্রীপালা সিরিসেনার হাতে ধরাশায়ী হলেন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে। শ্রীলঙ্কায় এই রাজনৈতিক পরিবর্তনে খুশি নয়াদিল্লি।

Advertisement

এলটিটিই-র বিরুদ্ধে অভিযানের সময়ে তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ-সহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমা হচ্ছিল রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে। তামিলদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। এই বিষয়ে কলম্বোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে ভারতকে।

এক সময়ে রাজাপক্ষে সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন সিরিসেনা। নির্বাচনের আগে হঠাৎ পক্ষ বদল করে বিরোধী পক্ষে যোগ দেন তিনি। রাজাপক্ষে-বিরোধী হাওয়ার আঁচ পেয়ে তাঁকে সমর্থন করে প্রধান বিরোধী দল ইউএনপি, বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল জেএইচইউ ও তামিল ও মুসলিম দলগুলি। ফলে, বিরোধীদের বড় অংশের সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি।

Advertisement

মোট ভোটের ৫১ শতাংশের বেশি সিরিসেনার পক্ষে যাওয়ার পরে তাঁর জয়ের কথা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই অবশ্য হার স্বীকার করে নিয়েছিলেন রাজাপক্ষে। ভোটের হিসেব অনুযায়ী, তামিল, মুসলিম-সহ সংখ্যালঘুদের বড় অংশ ভোট দিয়েছেন সিরিসেনাকে।

ফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলম্বোর ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন সিরিসেনা ও নয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘে।

রাজাপক্ষের মতোই সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত সিরিসেনা। কলম্বোর অভিজাত মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করতে খুব একটা দেখা যায়নি তাঁকে। বরং শ্রীলঙ্কার গ্রামাঞ্চলে রাজাপক্ষের প্রভাবের জবাব দেওয়ার মতোই ভাবমূর্তি তাঁর। হিসেব বলছে, সে কাজ ভাল ভাবেই করেছেন বিজয়ী প্রার্থী। নির্বাচনে জিতলে কোনও বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেননি সিরিসেনা। তামিলদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া বা উত্তর শ্রীলঙ্কা থেকে সেনাবাহিনী সরানোর মতো কোনও সিদ্ধান্ত যে তিনি এখন নেবেন না তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

তা হলে সিরিসেনা জিতলেন কী ভাবে? বিপুল সংখ্যালঘু ভোটই বা পেলেন কেন?

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যে কোনও মূল্যে রাজাপক্ষেকে সরাতে চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার মানুষের বড় অংশ। সিরিসেনা অধিকাংশ বিরোধী দলের সর্বসম্মত প্রার্থী হওয়ায় সংখ্যালঘুদের কাছে অন্য বিকল্পও বিশেষ ছিল না। তাই সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী এই নেতাকেই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।

কূটনৈতিক সূত্রের আরও দাবি, সিরিসেনাকে সামনে রেখে বিরোধীরা ভোটে জিতেছেন ঠিকই। কিন্তু নয়া সরকারে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবেন বিক্রমাসিঙ্ঘে। উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত এই নেতা সেনা প্রত্যাহার, স্বায়ত্তশাসনের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ‘সদর্থক’ পদক্ষেপ করবেন বলেই মনে করছে দিল্লি। এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে দিল্লির কয়েক দফা কথা হয়েছে বলেও বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর। জয় ঘোষণার পরে সিরিসেনাকে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়েছেন, সিরিসেনা মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন। এই জয় তারই ফল। শান্তিপূর্ণ শ্রীলঙ্কা গঠনে ভারত তাঁর পাশে আছে।

সাউথ ব্লকের কর্তারা জানাচ্ছেন, শ্রীলঙ্কায় ভারতের মতোই সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজাপক্ষে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে তিনি ক্রমশ পারিবারিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছিলেন। এলটিটিই-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ে রাজাপক্ষে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু পরে মিত্র দেশ হিসেবে তাঁকে নিয়ে অনেক বার বিপাকে পড়তে হয়েছে ভারতকে। সিরিসেনা-বিক্রমাসিঙ্ঘে সে অস্বস্তি ঘোচাবেন বলেই আশা মোদী সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন