এই সেই রেডিও মোল্লা ।
স্কুলবাসে সে দিন মালালা ইউসুফজাইকে মারার নির্দেশ এসেছিল ‘রেডিও মোল্লা’র তরফেই। তার পর কেটে গিয়েছে দু’বছর। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সাহসিনী মালালা আজ নোবেলজয়ী। আর ‘রেডিও মোল্লা’ ওরফে মোল্লা ফজলুল্লা সাধারণ জঙ্গি নেতা থেকে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সর্বেসর্বা। মঙ্গলবার পেশোয়ার আর্মি পাবলিক স্কুলের শিশুমেধ কাণ্ডেও তারই প্রত্যক্ষ নির্দেশ ছিল বলে মনে করছে পাক প্রশাসন। আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে তার খোঁজ পেতে ইতিমধ্যেই কাবুল রওনা হয়েছেন পাক সেনা-প্রধান রহিল শরিফ। যে কোনও মূল্যে ফজলুল্লার প্রত্যর্পণ চাইছে পাকিস্তান।
স্কুলে হামলা চালানোর দায় গত কালই স্বীকার করে নেয় পাক তালিবান গোষ্ঠী। আত্মঘাতী ৬ জঙ্গির ছবিও আজ প্রকাশ করেছে তারা। আফগান তালিবান প্রাথমিক ভাবে ঘটনার নিন্দা করলেও, পাক গোয়েন্দা সূত্রের খবর এই হামলার পিছনে ফজলুল্লার মতোই একই রকম সক্রিয় উমর নারায় নামের আরও এক জঙ্গি কম্যান্ডার। অভিযোগ, আফগানিস্তান থেকেই যাবতীয় কার্যকলাপ তার। স্কুলে হামলা চালানোর ঘটনায় তারও কিছু কথোপকথন ইতিমধ্যেই পাক প্রশাসনের হাতে। তাই পাকিস্তান নাগাল পেতে চাইছে উমরেরও। তবে এই মুহূর্তে নওয়াজের পাখির চোখ শুধুই ‘রেডিও মোল্লা’।
কে এই ‘রেডিও মোল্লা’? বছর চল্লিশের এই তালিবান নেতার জন্ম ১৯৭৪ সালে, পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকায়। বাবা-মার দেওয়া নাম, ফজল হায়াত। কিশোর বয়স থেকেই সন্ত্রাসে হাতেখড়ি। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-নফাজ-ই-শরিয়ত-ই-মোহাম্মদির নেতা হয়ে ওঠে মোল্লা ফজলুল্লা। নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে দলের প্রতিষ্ঠাতা সুফি মহম্মদের মেয়েকে বিয়েও করে। তার পর শুধুই উত্থান। আমেরিকায় ৯/১১ ঘটনায় জেল হয় মহম্মদের। জামাইকে নির্দেশ চালাচালি হতে থাকে জেল থেকেই। পাক প্রশাসনের দাবি, তখন থেকেই আরও কট্টর হতে শুরু করে ফজলুল্লা। ২০০৮-এ শ্বশুর জেল থেকে ফিরে এলেও ক্ষমতা থাকে জামাইয়ের হাতেই। ২০০৯-এ সংগঠন বাড়াতে পাক-তালিবানের সঙ্গে হাত মেলায় তেহরিক-ই-মহম্মদি। তালিবানের মাথা তখন হাকিমুল্লা মেহসুদ। অচিরেই তার ডান হাত হয়ে ওঠে ফজলুল্লা। সে সময় একার হাতেই প্রায় ৪,০০০ জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেয় সে। গড়ে তোলে নিজের বাহিনী। তার অঙ্গুলিহেলনে সমান্তরাল সরকার চালু হয়ে যায় সোয়াট উপত্যকায়। পাক গোয়েন্দাদের দাবি, এই সময় তালিবানি রাজত্ব চালাতে ফজলুল্লার প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে এফ এম রেডিও। শুরু হয় ব্যাপক ‘জেহাদি’ প্রচার। রাতারাতি মোল্লা ফজলুল্লা হয়ে ওঠে ‘রেডিও মোল্লা’।
সোয়াট ছেড়ে এক সময় আফগানিস্তানে পালিয়ে ফের পাকিস্তানেই ফিরে আসে ফজলুল্লা। ২০১২-য় ফের নতুন করে এলাকা দখল শুরু করে। মালালাকে খুনের নির্দেশও এই বাড়বাড়ন্তের সময়ই। সে তখনও হাকিমুল্লার ছত্রচ্ছায়াতেই। ২০১৩-র নভেম্বরে মার্কিন ড্রোন হামলায় হাকিমুল্লা নিহত হলে টিটিপি-র সর্বেসর্বা হয় রেডিও মোল্লা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও হাত মেলানোর দিকে এক ধাপ এগোয় রেডিও মোল্লা। তবে সবটাই রেখে-ঢেকে। তাই গত কালের হামলা নিজেদের অস্তিত্ব ফের জানান দিতেই, নাকি মালালার নোবেল জয়ের প্রতিবাদে পাকিস্তানের দাবি, উত্তর শুধুই রেডিও মোল্লার কাছে।