রহস্য-ধ্বনি। এই নামটিই মনে ধরেছে বিজ্ঞানীদের। ভারত মহাসাগরের অন্দর থেকে ভেসে আসা ‘নয়া’ সূত্রের উৎস খুঁজতে তোড়জোড়ও শুরু করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের আশা, এই ধ্বনিই হয়তো তাঁদের পৌঁছে দিতে পারে এমএইচ ৩৭০-র কাছে। তবে এটাও সত্যি, এ রকম বহু সূত্র আগেও মিলেছে। এ বার তাই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আগে আশাবাদী হতে রাজি নন তাঁরা।
গত ৮ মার্চ গভীর রাতে নিখোঁজ হয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ ৩৭০। যাত্রী ও বিমানকর্মী মিলিয়ে ছিলেন ২৩৯ জন। কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। এ ক’দিনে একাধিক তত্ত্ব ও তথ্য সামনে এসেছে। তোলপাড় হয়েছে ভারত মহাসাগরের একটা বিস্তীর্ণ অংশ। কিন্তু বিমানের খোঁজ মেলেনি। মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা জানালেন, নয়া যে ধ্বনির সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, তার উৎস অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৩০০০ মাইল দূরে। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে ডুবে থাকা দু’টি হাইড্রোফোনে সেটি আলাদা আলাদা ভাবে ধরা পড়েছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এ শব্দের সঙ্গে এমএইচ ৩৭০-র যোগটা কোথায়? জটিল গাণিতিক হিসেব থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যে সময় এমএইচ ৩৭০-র সঙ্গে উপগ্রহের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তারই কাছাকাছি সময়ে ওই শব্দটি ধরা পড়ে হাইড্রোফোনগুলিতে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডুবে যাওয়া বাতাসভর্তি কোনও ‘কন্টেনার’ যদি জলরাশির চাপে দুমড়ে মুচড়ে যায় তা হলে যে শব্দ তৈরি হয়, রহস্য-ধ্বনি অনেকটা সে রকমই। সবটাই অনুমান। পারথের কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান-বিশেষজ্ঞ অ্যালেক ডানকানের বয়ানে, “ওই শব্দের এমএইচ ৩৭০-র সঙ্গে যোগ থাকার সম্ভাবনা ২৫ থেকে ৩০%।” বিশেষজ্ঞরা এ-ও জানাচ্ছেন, যে এলাকায় শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে প্রায়ই মৃদু-ভূকম্পন হয়ে থাকে। ফলে রহস্য-ধ্বনির উৎস সেটিও হতে পারে। আবার অন্য কোনও প্রাণীর গতিবিধি বা বিমানের জেরেও সমুদ্রে ওই শব্দ তৈরি হতে পারে। সব চেয়ে বড় সমস্যা, যে রহস্য ধ্বনি নিয়ে নয়া উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তা এতটাই ক্ষীণ যে সাধারণ ভাবে সেটি মানুষের শুনতে পাওয়ার কথা নয়। বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়াচ্ছে আরও একটি তথ্য। যে সম্ভাব্য এলাকায় বিমানটির যাত্রা শেষ হয়ে থাকতে পারে বলে ইনমারস্যাট চিহ্নিত করেছিল, নয়া ধ্বনির উৎপত্তিস্থল তা থেকে অনেকটা দূরে।
সব মিলিয়ে আশার থেকে ঢের বেশি সন্দেহের উদ্রেক করছে এই রহস্য ধ্বনি। তা এতটাই জোরালো যে নয়া এলাকায় আদৌ তল্লাশি চলবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে অস্ট্রেলীয় প্রশাসন। আপাতত আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে সেটি নিয়ে। তার পর কী হয়, সেটা সময়ই বলবে।