সস্ত্রীক ইমরানকে ঢুকতে বাধা সেনা স্কুলে

এসেছিলেন পড়ুয়াদের সান্ত্বনা দিতে। চেয়েছিলেন শোকার্ত বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু বুধবার পেশোয়ারের সেনা স্কুলের গেটেই থমকে যেতে হল নবদম্পতিকে। সন্তানহারা ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের মুখে ছিল একটাই স্লোগান, ‘গো ইমরান গো।’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

পেশোয়ার শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১২
Share:

এসেছিলেন পড়ুয়াদের সান্ত্বনা দিতে। চেয়েছিলেন শোকার্ত বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু বুধবার পেশোয়ারের সেনা স্কুলের গেটেই থমকে যেতে হল নবদম্পতিকে।

Advertisement

সন্তানহারা ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের মুখে ছিল একটাই স্লোগান, ‘গো ইমরান গো।’ তাই নিজের নতুন স্ত্রী রেহম খানকে সঙ্গে করে আজ সেনা স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করেও চরম অস্বস্তিতে পড়তে হল প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খানকে। শুনতে হল, ‘‘মানুষের যন্ত্রণা নিয়ে রাজনীতি করবেন না।’’

গত বছর ১৬ ডিসেম্বর তালিবানের হামলায় তছনছ হয়ে যায় পেশোয়ারের সেনা স্কুল। প্রাণ হারান ১৫০ জন। যার মধ্যে ১৩৪ জনই শিশু। তালিবানের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা হয় বিশ্ব জুড়ে। তার পর থেকে প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল। অথচ এর মধ্যে একবারও দেখা মেলেনি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের শাসক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খানকে। গত এক মাসে একটু একটু করে রক্তের দাগ মুছে ফের উঠে দাঁড়িয়েছে আর্মি পাবলিক স্কুল। সোমবার খুলেছে তাদের দরজা। ক্লাস শুরু হয়েছে পরের দিন থেকে। আজ তাই হঠাৎ ইমরানের আবির্ভাবে তেতে ওঠেন অভিভাবকরা।

Advertisement

সোমবার সকালটা নতুন করে যন্ত্রণা দিয়েছে আবিদ আলি শাহকে। ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করছিলেন তিনি। আগে হলে আবিদের স্ত্রীই সেই কাজ করতেন। সেনা স্কুলে তিনি শিক্ষিকা ছিলেন। সে দিনের হামলায় আবিদ হারিয়েছেন তাঁকে। তাঁদের দুই ছেলেও সেনা স্কুলেই পড়ে। ছোটটির মাথায় গুলি লাগলেও কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছে সে। আবিদের কথায়, “আমার জীবনে শূন্যতা ক্রমশ বাড়ছে। স্ত্রীর না-থাকা সব সময় বুঝতে পারছি।” ভেবেছিলেন, ছেলেদের অন্য স্কুল পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু পরে সে সিদ্ধান্ত পাল্টান। এমন টুকরো টুকরো ঘটনায় ছারখার হয়ে গিয়েছে আবিদের মতো আরও অনেক জীবন। কিন্তু এত দিনে এক বারও কেন ইমরানের দেখা মেলেনি, আজ সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, ইমরান জানতেন প্রিয়জন-সন্তানদের হারিয়ে তাঁর নিজের শহরের মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ তিনি তখন টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা রেহমের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত!

আজ শুধু রেহম নয়, তেহরিক-ই-ইনসাফের বেশ কয়েক জন নেতাও ইমরানের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু কাউকেই রেয়াত করেননি অভিভাবকরা। তাঁদের সাফ কথা, “আমাদের ছেলেমেয়েদের রক্ত নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করুন।” কারও হাতে ছিল ‘গো ব্যাক’ লেখা প্ল্যাকার্ড, কারও মুখে স্লোগান। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাট্টাকও ছিলেন ইমরানের পাশে। ক্রুদ্ধ অভিভাবকরা খাট্টাকের গাড়িতে উঠে তাঁদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক জন বলেন, “এক মাস পরে স্কুল দেখতে এসেছেন ইমরান! কী দরকার ছিল?” এই সময়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও চলে।

শেষ পর্যন্ত অভিভাবকদের শান্ত করে পিছনের গেট দিয়ে ইমরানদের নিয়ে যাওয়া হয়।

ইমরান যদিও রেহমের সঙ্গে বিয়েটা যথেষ্ট অনাড়ম্বর ভাবেই সেরেছেন বলে দাবি তাঁর অনুগামীদের। পেশোয়ারের নৃশংস ঘটনার কথা মাথায় রেখে তিনি বিয়ে প্রথমে পিছিয়েও দিয়েছিলেন। শেষমেশ খুব ঘনিষ্ঠ কয়েক জন আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে গাঁটছড়া বাঁধেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক। সেই প্রশ্নেই আজ সমালোচনার মুখে পড়তে হল তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন