৭৩ বছর পর ডুবে যাওয়া রুপো ফিরল টাঁকশালে

যাওয়ার কথা ছিল লন্ডন। গন্তব্যে পৌঁছেওছে। খালি এই যাত্রা শেষ করতে গিয়ে পেরিয়ে গিয়েছে ছ’-ছ’টা যুগ। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। যুদ্ধের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটেন। ধুঁকতে থাকা রাজকোষের হাল ধরতে শেষমেশ ভারত থেকেই পাঠানো হয়েছিল জাহাজ ভর্তি রুপো। ১৯৪১-এর গোড়ায় ২৮০০টা রুপোর বাট আর ৮৫ জন কর্মী নিয়ে লিভারপুলের উদ্দেশে কলকাতা ছেড়েছিল এসএস গেয়ারসোপ্পা।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫১
Share:

যাওয়ার কথা ছিল লন্ডন। গন্তব্যে পৌঁছেওছে। খালি এই যাত্রা শেষ করতে গিয়ে পেরিয়ে গিয়েছে ছ’-ছ’টা যুগ।

Advertisement

তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। যুদ্ধের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটেন। ধুঁকতে থাকা রাজকোষের হাল ধরতে শেষমেশ ভারত থেকেই পাঠানো হয়েছিল জাহাজ ভর্তি রুপো। ১৯৪১-এর গোড়ায় ২৮০০টা রুপোর বাট আর ৮৫ জন কর্মী নিয়ে লিভারপুলের উদ্দেশে কলকাতা ছেড়েছিল এসএস গেয়ারসোপ্পা। এতটা রুপো বলে কথা, তাই আগে আগে ছিল নৌসেনার পাহারাদার জাহাজও।

কিন্তু আয়ার্ল্যান্ডের দক্ষিণে পৌঁছনোর পরই নাবিক খেয়াল করেন, জ্বালানি প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই কনভয় ভেঙে, তিনি গালওয়ের দিকে মুখবদল করেন জাহাজের। দামাল ঝড়ের সঙ্গে প্রতিদিন পাল্লা দেওয়া তো আছেই। কিন্তু তার থেকেও ভয়ানক ঘটনা ঘটে এক দিন। হঠাৎই তাঁরা নজরে পড়ে যান নাৎসি বাহিনীর। ১৭ ফেব্রুয়ারি জার্মান ডুবোজাহাজের হানায় মোটে কুড়ি মিনিটের মধ্যেই তলিয়ে যায় এসএস গেয়ারসোপ্পা।

Advertisement

অতলান্তিকের প্রায় জমে যাওয়া জলেই প্রাণ বাঁচাতে লাইফবোট ভাসিয়েছিলেন জনা তিরিশেক কর্মী। অকূল দরিয়ায় সওয়ারি, তবু খাওয়ার জল নেই এত টুকু। খাবার-দাবারও প্রায় শেষ। কনকনে ঠান্ডায় পচন ধরছে আঙুলে। উপরি বলতে তো আছেই বাঁধ ভাঙা ঢেউ। কখন কোন দিক থেকে আছড়ে পড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, কেউ জানে না। ডাঙার খোঁজে ১৩ দিন কাটিয়ে শেষমেশ বালির চরে পা রেখেছিলেন মোটে এক জনই রিচার্ড এরেস।

১৯৪১ থেকে ২০১১। সত্তর বছর পর মার্কিন সংস্থা ওডিসির চোখে পড়ে গেয়ারসোপ্পা। ৪১২ ফুটের জাহাজ ডুবে রয়েছে সমুদ্রতল থেকে ৩০০ মাইল নীচে। টাইটানিকের গভীরতা থেকেও যা কি না বেশ কিছুটা বেশি। চার বছর ধরে ব্রিটেনের টাঁকশাল আর ওডিসির যৌথ উদ্যোগে চলছে উদ্ধার কাজ। অতলান্তিক

থেকে ২৭৯২টা রুপোর বাট তুলে আনতে পেরে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত গোটা কর্মকাণ্ডের নায়ক অ্যান্ড্রু ক্রেগ। তাঁর কথায়, এমনটাও যে হতে পারে, আগে ভাবাই যেত না। ক্রেগ অবশ্য কৃতিত্ব দিতে চান নতুন পদ্ধতিকেই। জানালেন, অতলান্তিকের গর্ভে তাঁরা নামিয়েছিলেন দূরনিয়ন্ত্রিত সন্ধানী যান। আর তাতেই কেল্লা ফতে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় শেষ উদ্ধারকাজ।

তবে রুপোর খোঁজে হন্যে হতে গিয়ে খরচও হয়েছে প্রচুর। তাই উদ্ধার হওয়া রুপোর ৮০ শতাংশই রাখবে মার্কিন সংস্থা ওডিসি। মোটে ২০% থাকবে ব্রিটেনের টাঁকশালে।

কম হলেই বা কি, শেষমেশ ঘরের ছেলে যে ঘরে ফিরছে, এতেই খুশি ব্রিটেনবাসী। ৭৩ বছরে যে সম্পূর্ণ হল বৃত্তটা।

গ্যারিসনের নাম লেখা রুপোর মুদ্রা হয়তো এ মাসের শেষেই উঠবে নিলামে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement