Cholera Prevention

কলেরা কি চোখ রাঙাচ্ছে কলকাতায়? ডায়েরিয়ার থেকে লক্ষণ আলাদা, বিপদ বাড়ার আগেই সতর্ক হোন

বর্ষার সময়ে জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়েই। দূষিত জল, খাবার থেকেই সংক্রমণ ঘটে। তাই এই সময়টাতে সাবধান থাকা জরুরি। কলেরা থেকে বাঁচতে কী করণীয়?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ১৮:২৮
What are the cause and symptoms of Cholera and how to prevent it

কলেরার লক্ষণ ডায়েরিয়ার থেকে আলাদা, কোন কোন উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে চিন্তা যখন মধ্যগগনে, তখন আরও একটি রোগের প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। তা হল কলেরা। কলকাতায় চার বছরের এক শিশুকন্যা আক্রান্ত। তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এর আগে পিকনিক গার্ডেন রোডের বাসিন্দা আরও এক যুবক কলেরায় আক্রান্ত হন। স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা বেড়েছে, রোগটি আবার ফিরে এল কি না। কারণ, কলেরা নিয়ে বাঙালির ইতিহাসে একাধিক কালো অধ্যায় রয়েছে। ১৯ শতক থেকে একাধিক বার বঙ্গবাসী কলেরার প্রকোপে পড়েছে। ঘন ঘন ভেদবমি, প্রচণ্ড দুর্বলতা আর তার পরেই মৃত্যুমুখে ঢলে পড়া। তাই কলেরা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছেই।

Advertisement

কলেরার প্রকোপ বাড়ছে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়, এমনই মত মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিকের। তিনি বলেন, “বর্ষার সময়ে জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়েই। দূষিত জল, খাবার থেকেই সংক্রমণ ঘটে। তাই এই সময়টাতে সাবধান থাকা জরুরি। বিশেষ করে ছোটদের ও বয়স্কদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। রাস্তায় বিক্রি হওয়া সব রকম খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।”

কলেরা কতটা বিপজ্জনক?

কলেরা একটা সময়ে প্রাণঘাতী রূপ নিলেও এখন তার প্রকোপ অনেক কমেছে। তবে একেবারে নির্মূল যে তাকে করা যায়নি, এটাই চিন্তার। মূলত জলবাহিত রোগ হওয়ায় বর্ষাকালে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, দূষিত খাবার ও জলের সান্নিধ্যে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে, এমনটাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। ভিব্রিও কলেরি নামক এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে কলেরা হয়। জমা জল, মানুষের মলমূত্রের মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া ছড়াতে পারে। বাসি খাবার খাওয়া, দূষিত জল কোনও ভাবে পেটে গেলেই মুশকিল। তা ছাড়া জল কোথায় রাখছেন, কোন পাত্র থেকে জল খাচ্ছেন এই সবও কিন্তু পেটের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কী কী লক্ষণ বুঝতে হবে?

ডায়েরিয়ার থেকে কলেরার লক্ষণ কিছুটা আলাদা। চিকিৎসক রণবীর জানালেন, ডায়েরিয়ার সময়ে পেটে যন্ত্রণা হয়, কিন্তু কলেরায় তা নয়। পেটে ব্যথা, পেট ফোলা বা তীব্র যন্ত্রণা কোনওটাই হয় না। অথচ ঘন ঘন বমি হতে থাকে এবং রোগী বার বার মলত্যাগ করেন। মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় না। কলেরায় শরীর থেকে প্রচুর জল ও খনিজ উপাদান বেরিয়ে যায়, ফলে জলের ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন অতি তীব্র হয়। বার বার জল পিপাসা পায় রোগীর। হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং ত্বকও শুষ্ক হতে থাকে।

কলেরার লক্ষণ দেখা দিলে সবচেয়ে আগে ওআরএস খাওয়াতে হবে রোগীকে, যাতে শরীরে জলের ঘাটতি না হয়। বার বার জল ও তরল খাবার খাওয়ালে ভাল। সেই সঙ্গেই ডক্সিসাইক্লিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। খুব দরকার পড়লে স্যালাইন দেওয়া হয় রোগীকে।

সতর্ক থাকুন

বর্ষার সময় কল বা ট্যাপের জল সরাসরি পান করা থেকে বিরত থাকুন। পানীয় জল ফুটিয়ে তবেই পান করা ভাল।

যদি ওয়াটার ফিল্টার বা পিউরিফায়ার ব্যবহার করেন, তবে সেগুলি সঠিক ভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পিউরিফায়ারও যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে, তা হলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

যে বোতল থেকে জল পান করছেন বা যে পাত্রে জল রাখছেন, সেটি পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। অনেকেই বাড়িতে কুঁজো বা মাটির পাত্রে জল রাখেন। সেখান থেকে গ্লাস ডুবিয়ে জল খান। এর থেকেও কিন্তু ব্যাক্টেরিয়ার আদানপ্রদান হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

বাইরে খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে বরফ মেশানো থাকলে তা এড়িয়ে চলুন, কারণ, বরফ তৈরির জল দূষিত হতে পারে।

রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা জরুরি। আনাজপাতি, শাকপাতা ভাল করে নুন জলে ধুয়ে তবেই রান্না করতে হবে। কাটা ফল, কাঁচা স্যালাড এই সময়ে কম খাওয়াই ভাল।

এই সময়ে বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। ফাস্ট ফুড একেবারেই নয়। ঘরের হালকা খাবার এই সময়ে খুবই উপকারী। তেলমশলা যুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলুন। রান্না করা খাবার এবং অবশিষ্ট খাবার পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন যাতে মশা-মাছি বা পোকামাকড় বসতে না পারে। ফ্রিজে রাখা বাসি খাবার খাবেন না।

Advertisement
আরও পড়ুন