(বাঁ দিকে) মৃত রেলকর্মী ওমপ্রকাশ। (ডান দিকে কালো পোশাক পরা) ওমপ্রকাশের কন্যা। ছবি: সংগৃহীত।
ঘরে ঢুকতেই কটু গন্ধ নাকে পেলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর। এক কোণে একটি খাট। সেই খাটে নগ্ন অবস্থায় এক তরুণী। কঙ্কালসার চেহারা। আর ঘরের আর এক কোণে এক বৃদ্ধকে দেখা গেল। তাঁরও একই অবস্থা। তবে দেহে প্রাণ ছিল না। দেহটি দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, অনেক দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মহোবা থেকে হাড়হিম করা এক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বাড়ি এবং সম্পত্তি হাতানোর লোভে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী এবং তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যাকে পাঁচ বছর ধরে তাঁদেরই বাড়িতে বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠল কেয়ারটেকার দম্পতির বিরুদ্ধে।
মৃত রেলকর্মীর নাম ওমপ্রকাশ সিংহ রাঠৌর। তিনি রেলের সিনিয়র ক্লার্কের পদে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে ওমপ্রকাশের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। কন্যাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু বয়সজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন মাঝেমধ্যেই। ফলে কন্যাকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারতেন না। তাই দু’জনের দেখাশোনার জন্য রামপ্রকাশ কুশওয়াহা এবং তাঁর স্ত্রী রামদেবীকে কাজে রেখেছিলেন ওমপ্রকাশ। ওমপ্রকাশ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার পর সেই সুযোগকে কাজে লাগান কেয়ারটেকার দম্পতি। ওমপ্রকাশের দোতলা বাড়ি। অভিযোগ, ওমপ্রকাশ এবং তাঁর কন্যাকে বাড়ির একতলায় স্থানান্তরিত করেন কেয়ারটেকার রামপ্রকাশ ও তাঁর স্ত্রী । তার পর দোতলা পুরো দখল করে নিয়ে নিজেরা থাকতে শুরু করেন।
ওমপ্রকাশের এক আত্মীয় অমর সিংহ জানিয়েছেন, যখনই কোনও আত্মীয় ওমপ্রকাশের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, কেয়ারটেকার দম্পতি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দিতে চাইতেন না। বরং দাবি করতেন, ওমপ্রকাশ কারও সঙ্গে দেখা করতে চান না। কিন্তু ওমপ্রকাশ এবং তাঁর কন্যাকে যে বাড়ির একতলার একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেটা কেউ আঁচ করতে পারেননি। পাঁচ বছর ধরে বাবা-মেয়ের উপর অত্যাচার চালানো হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হত না। অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যু হয় ওমপ্রকাশের। কিন্তু ওমপ্রকাশের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেই আত্মীয়েরা ওই বাড়িতে যান। বাড়ির একতলার দরজা খুলে দেখতে পান, বিছানায় নগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওমপ্রকাশের কন্যা। দেখে মনে হবে কোনও বৃদ্ধা। দেহে মাংস বলে কিছু নেই। পুরোটাই অস্থিচর্মসার। কয়েক হাত দূরেই পড়ে ওমপ্রকাশের কঙ্কলাসার দেহ। কেয়ারটেকার দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।