—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বাংলায় এক প্রবাদ আছে, ‘নামে কী এসে যায়!’ কিন্তু সত্যি কি কিছু যায় আসে না? হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রাজবীর সিংহ যাদব!
নাম-বিভ্রাটের কারণে ১৭ বছর ধরে আদালতের চক্কর কেটেছেন রাজবীর। শুধু তা-ই নয়, ২২ দিন জেলও খাটতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু আদৌ তিনি কোনও অপরাধ করেননি। ভুল হয়েছিল পুলিশের খাতায়। বছর সতেরো আগের কথা। ২০০৮ সালে ৩১ অগস্ট নির্বাচনী বিরোধে নাম জড়িয়েছিল রামবীর সিংহ যাদবের। তাঁর এবং আরও কয়েক জনের নামে এফআইআর দায়ের করে মৈনপুরী পুলিশ। কিন্তু গন্ডগোল হয় এফআইআরের খাতায়। রামবীরের বদলে লেখা হয় রাজবীর! উল্লেখ্য, সম্পর্কে দু’জনে ভাই।
নামের এই ভুলের কারণেই আইনি লড়াইয়ে পড়ে যান রাজবীর। ভুল হয় মৈনপুরী থানার তৎকালীন এসএইচও ওমপ্রকাশের। সেই দেখেই পুলিশ ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর গ্রেফতার করেন রাজবীরকে। ২২ দিন জেল খাটেন। জেল থেকেই তিনি বিশেষ আদালতে আবেদন করেন। রাজবীরের বক্তব্য ছিল, তাঁর নাম ভুল ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই বছর ২২ ডিসেম্বর আদালতে ওমপ্রকাশ বিচারকের সামনে তাঁর ভুল স্বীকার করেন। জেল থেকে মুক্তি পান বটে কিন্তু আইনি লড়াই থামেনি তাঁর। আদালতে এসএইচও-র স্বীকারোক্তি এবং বিচারকের সতর্কীকরণের পরেও মৈনপুরী থানার তৎকালীন এসআই শিবসাগর দীক্ষিত, রাজবীরের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। সেই মামলা ১৭ বছর ধরে চলতে থাকে। অবশেষে আইনি লড়াই জিতলেন ৫৫ বছর বয়সি রাজবীর।
শনিবার মৈনপুরীর এক আদালত রাজবীরকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারক। নির্দেশ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘যে সব পুলিশ কর্মীর জন্য রাজবীরকে ১৭ বছর কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।’’
আদালতে জয় পাওয়ার পরেও রাজবীরের চোখেমুখে বিষণ্ণতা। ১৭ বছর ধরে তাঁকে কী কী কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ ছলছল করে ওঠে তাঁর। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র সঙ্গে বলার সময় রাজবীর বলেন, ‘‘আমি তখন বার বার জোর দিয়ে বলেছিলাম আপনারা যাঁকে খুঁজছেন, আমি সেই ব্যক্তি নই। কিন্তু কেউ শোনেনি আমার কথা। পুলিশ আমাকে তুলে জেলে পাঠিয়ে দেয়।’’ তাঁর অনুযোগ, ‘‘আমি ১৭ বছর ধরে মামলা লড়ছি। এই ১৭ বছর আমি তেমন কাজ করার সুযোগ পায়নি। আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। সব কিছু হারিয়েছি।’’ শেষে রাজবীরের একটাই দাবি, ‘‘আমি শুধু চাই যাঁরা আমার সঙ্গে এমন কাজ করলেন, তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে।’’