ভিটামিনের অভাবও হতে পারে চুল ঝরার নেপথ্য-কারণ। ছবি:ফ্রিপিক।
চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছেন পাঁচ, ছ’টা বা দশটা চুল উঠল। সে একরকম। তা নিয়ে চিন্তা থাকে না। কিন্তু চিরুনি বোলালেই যদি প্রতি বার গোছা গোছা চুল উঠতে থাকে তা হলে তা নিয়ে চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক! ত্বকের রোগের চিকিৎসক অশ্বিনী ভাট বলছেন, ‘‘দিনে ৫০-১০০টা চুল ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতি দিন তার চেয়ে বেশি চুল উঠলে তা নিয়ে ভাবতে হবে।’’
চুল ঝরার সমস্যা হয় অনেকেরই। অযত্ন এর অন্যতম কারণ। ঠিকমতো মাথার ত্বক পরিষ্কার না করলে, স্নান না করলে এমন সমস্যা হতেই পারে। তবে এ ছাড়াও চুল ঝরার একাধিক কারণ থাকতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে, মাথায় খুশকি বা সংক্রমণ হলেও চুল ঝরতে পারে। তবে মাথায় খুশকি নেই, যত্নেও খামতি নেই, তা-ও যদি মাথায় হাত দিলেই চুল উঠে আসে, তার কারণ কী হতে পারে? এর উত্তর অবশ্যই নির্দিষ্ট ভাবে ত্বকের রোগের চিকিৎসক বা চুল নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই বলতে পারেন। তবে, ২০১৮ সালে ‘ডার্মাটোলজি অ্যান্ড থেরাপি’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণালব্ধ ফলাফল বলছে, উপযুক্ত পুষ্টির অভাব হলে চুল ঝরতে পারে।
ভিটামিন বি৭, ভিটামিন সি, ডি-সহ একাধিক খনিজ যেমন চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে, তেমনই তাদের অভাবেও চুল ঝরার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন বি১ : কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সাহায্য করে এই ভিটামিন। চুলের বাড়বৃদ্ধির জন্য শক্তির প্রয়োজন। ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিনের অভাব ঘটলে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। নতুন চুল গজাতেও এতে সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১-এর প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন বি২: রাইবোফ্ল্যাভিন পরিচিত ভিটামিন বি২ নামে। শরীর এবং কেশের বাড়বৃদ্ধির জন্য এই ভিটামিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ভাঙতে এবং কলা-কোষে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। চুলের গোড়া মজবুত করতেও এই ভিটামিনের ভূমিকা থাকে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার দিনে ৪.৭ মিলিগ্রাম রাইবোফ্ল্যাভিন দরকার।
ভিটামিন বি৫: প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড নামেও এটি পরিচিত। শরীরকে শক্তি জোগাতে, কোষ বিভাজনে এটি সাহায্য করে। চুলের গোড়ায় শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ভিটামিন বি৫ খুব জরুরি উপাদান। এর অভাবেও চুল ঝরতে পারে।
ভিটামিন বি৬: প্রোটিন ভাঙতে, চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ভিটামিনটি। ত্বকের রোগের চিকিৎসক অশ্বিনী জানাচ্ছেন, পাইরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬-এর অভাব হলেও চুল ঝরার সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন বি৭: চুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কেরাটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন। বায়োটিনের বা ভিটামিন বি৭-এর অভাব কেরাটিনের উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। এই ভিটামিন গ্লুকোজ়, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিপাকে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে ৩০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে।
শুধু উল্লিখিত ভিটামিন নয়, ভিটামিন ডি, ই, বি৯, বি১২-এর অভাব হলেও তা চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। শুধু চুল শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এই ভিটামিনের প্রয়োজন হয়।
কোন উপায়ে ঘাটতিপূরণ?
স্বাস্থ্যকর খাবার, শাকসব্জি, ফলমূল, ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ, ডিম নিয়মিত এবং মাপমতো খাদ্যতালিকায় থাকা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কোনও ভিটামিনের ঘাটতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টও খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া খাবার তালিকায় নানা রকম বাদাম রাখলেও চুল ভাল থাকবে।