২০২৫ সাল শেষের দিকে। আর কয়েক দিন পরেই নতুন বছরে পা দেবে সারা বিশ্ব। পুরনো ঘটনার রেশ কাটিয়ে পা দেবে ভারতও। তবে ২০২৫ সাল ভারতের জন্য ছিল ঘটনাবহুল। এ বছর ভারত এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী ছিল, যেগুলি দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন বছরে প্রবেশের আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক, সে সব ঘটনাসমূহ।
বছরের শুরুতে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের আসর বসেছিল। প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। চলতি বছরে মেলা শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি থেকে। চলে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৮ এবং ২৯ জানুয়ারির মধ্যরাতে মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে কয়েক কোটি পুণ্যার্থী ত্রিবেণী সঙ্গমে উপস্থিত হয়েছিলেন। রাত থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে। অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে একসময় ব্যারিকেড ভেঙে যায়। পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৩০ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ৬০ জন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন হয়। ৪৮টিতে আসনে জিতে ২৭ বছর পরে দিল্লির ক্ষমতায় ফেরে পদ্মশিবির। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মাত্র ২২টি আসন পায় অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। কেজরীওয়াল নিজের নয়াদিল্লি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ বর্মার কাছে হেরে যান। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি-র রেখা গুপ্ত।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আক্রমণের দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন ‘লশকর-এ-ত্যায়বা’র ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স’ (টিআরএফ)। পরে ওই হামলার কথা অস্বীকার করে তারা। পহেলগাঁও হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ৭ মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে মোট ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। এই সামরিক অভিযানের নাম রাখা হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’।
ওয়াকফ বিল নিয়েও এ বছর উত্তাল হয়েছিল দেশ। ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পক্ষে লোকসভায় ২৮৮টি ভোট পড়েছিল। বিপক্ষে গিয়েছিল ২৩২টি ভোট। অন্য দিকে রাজ্যসভায় ১২৮ জন সাংসদ এই বিলের পক্ষে ভোট দেন এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯৫টি। সংসদের উভয় কক্ষে এই সংশোধিত বিল পাশ হওয়ার পরে গত ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিক্রমে সেটি আইনে পরিণত হয়। পরে এই সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। আদালত জানায়, সংসদে পাশ হওয়া আইনকে অসাংবিধানিক বলা যায় না। তবে ওই আইনের দু’টি ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় শীর্ষ আদালত। প্রথমত, সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ না কি সরকারি, তা জেলাশাসক বা সম পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক ঠিক করতে পারেন। আদালত মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত জেলাশাসক নিতে পারেন না। এটা আদালতের কাজ। দ্বিতীয়ত, আইনে বলা হয়েছে, যিনি ওয়াকফে দান করবেন, তাঁকে অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করার প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু এটি কার্যকর করার কোনও নিয়ম সরকার বানায়নি। ধারা দু’টি স্থগিত রাখা হয়েছে।
আইপিএলের ১৮তম বছরে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বেঙ্গালুরু। চ্যাম্পিনদের দেখতে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ভয়ঙ্কর ভিড় জমেছিল। বিশেষ করে বিধান সৌধ ও চিন্নাস্বামীর বাইরে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। চিন্নাস্বামীর বাইরে হঠাৎ বিশৃঙ্খলা হয়। পদপিষ্ট হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বহু।
১২ জুন অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের অদূরে গ্যাটউইকের উদ্দেশে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান এআই১৭১। ওড়ার কয়েক মিনিটের মাথায় মেঘানিনগরের লোকালয়ে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে সেটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪১ জন বিমানে সওয়ার ছিলেন। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি এটি।
৩ সেপ্টেম্বর পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) কাঠামোর পরিবর্তনে অনুমোদন দেয় জিএসটি কাউন্সিল। বুধবার কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ নতুন জিএসটি হার ঘোষণা করেন। এখন থেকে দু’টি হারে জিএসটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— ৫ এবং ১৮ শতাংশ। ১২ এবং ২৮ শতাংশের যে জিএসটি স্তর ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু পণ্যকে রাখা হয়েছে ৪০ শতাংশ হারের বিশেষ তালিকায়।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় সঙ্গীতশিল্পী জ়ুবিন গর্গের। স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় মারা যান অহমিয়া শিল্পী। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২। জ়ুবিনের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল অসম। অনুরাগীদের দাবি ছিল, খুন হয়েছেন গায়ক। একই দাবি করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। জ়ুবিনের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে ধৃতদের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই খুনের অভিযোগ এনে চার্জশিট দিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।
গত বছর তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)-র নামে দল খুলে তামিলনাড়ুর রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন জনপ্রিয় অভিনেতা থলপতি বিজয়। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর করুরে বিজয়ের সভায় পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ৩৯ জন। প্রাথমিক ভাবে ৩০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিনেতা তথা রাজনীতিককে দেখতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় দ্বিগুণ মানুষ। আট থেকে আশি মিলিয়ে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরে। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় ছ’ঘণ্টা দেরিতে সভাস্থলে পৌঁছোন বিজয়। তত ক্ষণে ভিড় লাগামছাড়া হয়ে যায়। আর তার জেরেই বিপত্তি।
২ নভেম্বর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে মহিলাদের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এই প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল। নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পেয়েছে মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেট। জেমাইমা রদ্রিগেজ়-স্মৃতি মন্ধানাদের সাফল্য বদলে দিয়েছে দেশের মহিলা ক্রিকেটের ছবি।
চলতি বছরে ভাগ্যপরীক্ষা হয়েছে বিহারেরও। ৬ নভেম্বর থেকে দু’দফায় বিধানসভা নির্বাচন হয় বিহারে। ফল প্রকাশিত হয় ১৪ নভেম্বর। বিহার বিধানসভা ভোটে এনডিএ ঝড়ে শোচনীয় ফল করে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি। এ বারে বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ-র ঝুলিতে গিয়েছে ২০২টি আসন, যা সরকার গঠনের জন্য দরকারি সংখ্যা (১২২)-র চেয়ে অনেক বেশি। অন্য দিকে, রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আরজেডির প্রাপ্তি ২৫টি আসন। ২০ নভেম্বর দশম বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন এনডিএ শরিক জেডিইউ-এর প্রধান নীতীশ কুমার।
গত ১০ নভেম্বর লালকেল্লার সামনে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় ১৩ জনের। দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। ওই তদন্তে উঠে এসেছে ফরিদাবাদ মডিউলের যোগসূত্র। বিস্ফোরণের ঠিক আগেই ফরিদাবাদ থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। শুধু ফরিদাবাদ নয়, উত্তর ভারতের একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শ্রীনগরের নওগাম থানায়। পরে ফরেন্সিক পরীক্ষার সময় তাতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং থানায় উপস্থিত পুলিশকর্মী ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মৃত্যু হয়। দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে নেমে একাধিক চিকিৎসককেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
এসআইআর নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। এসআইআর-এর ‘আতঙ্কে’ মৃত্যুও দেখেছে এ রাজ্য। নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে এনুমারেশন ফর্ম জমা নেওয়া এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১১ ডিসেম্বর। তার মধ্যে বুথ ব্যবস্থাপনাও সেরে ফেলা হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার কাজ। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৬ ডিসেম্বর। তার পর সেই তালিকা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ, আপত্তি কমিশনে জানানো যাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই সময়সীমা মেনেই চলবে এসআইআর প্রক্রিয়া।
দেশে নতুন শ্রম আইনও চালু হয়েছে এ বছর। ২৯টি শ্রম আইনকে মিশিয়ে চারটি শ্রমবিধি আনা হয়েছে। সেগুলি হল— মজুরি, কর্মী ও মালিকের সম্পর্ক, কর্মীর সামাজিক সুরক্ষা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কাজের পরিবেশ। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকায় শ্রম থাকায় এই বিধি চালু করার নিয়ম আনতে হবে রাজ্যগুলিকেও। যদিও বেশ কিছু রাজ্য এখনও সব বিধির নিয়ম তৈরি করেনি। আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশে নতুন শ্রমবিধি কার্যকরের পরিকল্পনা কেন্দ্রের।
৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে গোয়ার বাগা সমুদ্রসৈকতের কাছে আরপোরা গ্রামের নৈশক্লাব ‘বার্চ’-এ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। তার কয়েক ঘণ্টা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সেই নৈশক্লাবের দুই মালিক সৌরভ এবং গৌরব লুথরা। দিন কয়েক পরে তাইল্যান্ড থেকে দু’জনকে আটক করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর লুথরা ভ্রাতৃদ্বয়কে ভারতে ফেরানো হয়। দিল্লি বিমানবন্দরে নামতেই তাঁদের গ্রেফতার করে গোয়া পুলিশ।
বছরের শেষে ভারতসফরে আসেন বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার লিয়োনেল মেসি। তাঁর ভারতসফরের নাম দেওয়া হয় ‘গোট ট্যুর অফ ইন্ডিয়া’। ১৪ বছর পর ভারতে এসেছিলেন মেসি। ১৩ ডিসেম্বর তাঁর কলকাতা সফরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়ায়। মেসিকে দেখতে চড়া দামে টিকিট কেটেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। ওই দিন সকাল থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ছিল মেসিময়। তাল কাটে অনুষ্ঠানের সময়। নির্ধারিত সময়েই মাঠে নেমেছিলেন মেসি। কিন্তু দর্শকের অভিযোগ, অনুষ্ঠানের আয়োজক ও মন্ত্রীরাই ঘিরে ছিলেন মেসিকে। অনেক চেষ্টা করেও মেসিকে দেখতে পাননি দর্শক। এর পর ক্ষুব্ধ দর্শকের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। গোলমালের জেরে মেসিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। বিশৃঙ্খলা ছড়ায়। গ্রেফতার করা হয় মেসি সফরের প্রধান উদ্যোক্তাকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পোড়ে কলকাতার।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার জন্য ভারতের অধিকাংশ পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। ফলে সে দেশে ভারতের রফতানি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প বাজার খুঁজতে চাইছে নয়াদিল্লি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। ইতিমধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্ত করে ফেলেছে ভারত। শূন্য শুল্কের বাণিজ্যচুক্তি হয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ওমানের সঙ্গেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ভারতের আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই।
ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে দু’দিনের সফরে ৪ ডিসেম্বর রাতে ভারতে এসেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রোটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে নিজে তাঁকে স্বাগত জানাতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে হায়দরাবাদ হাউসে মোদী এবং পুতিন বৈঠক সারেন। তবে কূটনৈতিক মহলের দাবি, দুই রাষ্ট্রনেতার সামনে দু’দেশের যে চুক্তিগুলি হল, তাতে কোনও শক্তির প্রদর্শন তো নেই-ই, বরং তা দু’দেশের সচিব-আমলা পর্যায়েই অনায়াসে সম্পন্ন করা যেত। চিন, আমেরিকা বা পশ্চিমি বিশ্বের উদ্দেশে যৌথ ভাবে ভারত-রাশিয়ার তরফ থেকে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি।
এ বছর ভারতে ঘটে যাওয়া যে সব ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে অরাবলী বিতর্কও। সম্প্রতি অরাবলী পাহাড়শ্রেণি নিয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত সংজ্ঞায় বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নয়, বরং আশপাশের এলাকার চেয়ে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূখণ্ডই কেবলমাত্র অরাবলী পাহাড় বলে গণ্য হবে। তাতে সিলমোহর দেয় শীর্ষ আদালত। গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১০০ মিটারের বেশি হলে তবেই সেই পাহাড়কে অরাবলী পাহাড়শ্রেণির অংশ বলা যাবে। এর পর অনেকেই দাবি করেন, এত দিন যে ভূখণ্ড অরাবলী পাহাড়শ্রেণি বলে গণ্য হয়ে এসেছে, তার ৯০ শতাংশই আর পরিবেশ সংরক্ষণ বিধির অধীনে সুরক্ষাযোগ্য থাকবে না। ফলে সে সব এলাকায় সহজেই খননকাজ চালানো যাবে। নির্বিচারে গড়ে তোলা যাবে পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক নির্মাণ। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের পর থেকেই আন্দোলন শুরু হয় বিভিন্ন রাজ্যে। অরাবলী বাঁচাতে সমাজমাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ। গ্রামবাসী, আইনজীবী থেকে রাজনীতিক কিংবা পরিবেশকর্মী— অনেকেই সরব হয়েছেন।
সব ছবি: সংগৃহীত।