Aroop Biswas

বাঁচালে বাঁচাতে পারে মঙ্গলের এসআইআর তালিকা! আপাতত আশা-আশঙ্কা নিয়ে ‘সুদিনের’ দিকে তাকিয়ে অরূপ-ঘনিষ্ঠেরা

যুবভারতী কেলেঙ্কারির পরে শনিবার থেকে বিদ্ধ হচ্ছেন অরূপ। সমালোচিত হচ্ছে ছবি তোলা কেন্দ্র করে তাঁর ভূমিকা এবং সেই সূত্রে মেসির অকালপ্রস্থানের ঘটনা। তবে অনুগামীরা আশায়, মঙ্গলবার থেকেই পরিস্থিতি ঘুরে যাবে। এসে পড়বে এসআইআরের খসড়া তালিকা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫৫
মেসির সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

মেসির সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

যুবভারতী কেলেঙ্কারিতে ফুটবল জনতার কাঠগড়ায় রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। লিয়োনেল মেসি কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে ছেড়ে যায়নি জনতার বাক্যবাণ। মেসির সঙ্গে তাঁর ছবি তোলানোর আকুলতা দেখে রসিকতা করে তাঁকে ‘ছবি বিশ্বাস’ বলে ডাকাও শুরু হয়েছে। দলের অন্দরেও অরূপের বিরোধীরা মওকা বুঝে ময়দানে নেমে পড়েছেন। প্রকাশ্যে নয় যদিও। তবে ঘনিষ্ঠমহলে তাঁরা যা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে না যে, তাঁরা অরূপের বিড়ম্বনায় খুব দুঃখিত। উল্টে আনন্দই প্রকাশিত।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আপাতত মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা তাকিয়ে মঙ্গলবারের দিকে। ওই দিন রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। অরূপের অনুগামীদের আশা, তার পরেই আলোচনার অভিমুখ পাল্টে যাবে। ঘটনাচক্রে, মেসিও সোমবার রাতেই ভারত ছেড়ে আমেরিকায় ফিরে যাচ্ছেন।

নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন এসআইআর-উত্তর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। সেই সূত্রেই অরূপ-অনুগামীদের আশা, সেই তালিকা প্রকাশের পরেই রাজ্যের মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু পাল্টে যাবে। যুবভারতী থেকে তার অভিমুখ হয়ে যাবে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা না-থাকা, তালিকা থেকে কত নাম বাদ গেল, জেলাওয়ারি পরিসংখ্যান এবং সেই মর্মে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

এসআইআরের ‘প্রক্রিয়াগত’ ত্রুটির কথা তুলে গোড়া থেকেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে তৃণমূল। বৈধ কোনও ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ গেলে দিল্লি অভিযানেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। এমনকি, এসআইআরে নাম বাদ পড়ার পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক নেতা উদ্বেগও গোপন করছেন না একান্ত আলোচনায়। তবে যুবভারতী কেলেঙ্কারি সেই হিসাব উল্টে দিয়েছে। আপাতত সেই এসআইআরের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন অরূপের অনুগামীরা। তাঁদের মতে, এই অগ্নিগর্ভ আবহে সেটিই একমাত্র যুবভারতী থেকে নজর ঘোরাতে পারে।

যুবভারতীর ঘটনার পর শনিবার রাত থেকেই বিজয়গড়, নেতাজিনগর, সূর্যনগর-সহ টালিগঞ্জ বিধানসভার বিভিন্ন এলাকার অরূপ-ঘনিষ্ঠেরা দৃশ্যতই মুহ্যমান ছিলেন। তবে সেই অবস্থাতেই তাঁরা আশা করতে শুরু করেছেন, মঙ্গলবার থেকে ছবি বদলাবে। মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ এক তরুণ নেতার কথায়, ‘‘দাদা বিপাকে পড়েছে বলে এখন অনেক চামচিকেও বড় বড় কথা বলছে। তবে এই পরিস্থিতির মেয়াদ মেরেকেটে ৭২ ঘণ্টা।’’

সন্দেহ নেই দলের মধ্যেও ফাঁপরে পড়েছেন অরূপ। রাজ্য সরকারে তাঁরই ডেপুটি তথা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি তো যুবভারতী কেলেঙ্কারি সম্পর্কে বলেই দিয়েছেন, ‘‘বিভিন্ন ভিডিয়ো এবং ছবিতে যাঁদের দেখলাম, তাঁদের প্রত‍্যেকেরই দায়। যাঁদের জন‍্য মেসি দ্রুত মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, দায় তাঁদের সকলের।’’ মনোজ কি অরূপকেই নিশানা করেছেন? অনেকের বক্তব্য, সরাসরি না-বললেও, নিশানা যে সে দিকেই তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। অরূপ এ হেন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তৃণমূলের অনেকে ঘনিষ্ঠমহলে আনন্দও গোপন করছেন না। পূর্ব বর্ধমানের এক বিধায়ক যেমন শনিবার রাতে ঘনিষ্ঠমহলে এমন বলেছেন যে, ‘‘গত বছর একটা উৎসবের মঞ্চে অকারণে আমায় ওর কাছে অপমানিত হতে হয়েছিল। এ বার বুঝুক ঠেলা!’’

অরূপ এবং ফিরহাদ হাকিম (ববি) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কতটা ‘আস্থাভাজন’ তা বোঝাতে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেকেই দক্ষিণ কলকাতার এই দুই নেতাকে ‘দিদির ডান কান এবং বাঁ কান’ বলে অভিহিত করেন। শাসকদলের অনেকের বক্তব্য, অতীতে ববি নানা ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন। কখনও নারদ মামলায় তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, কখনও আবার তাঁর চেতলার বাড়িতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। এমনটা অরূপের ক্ষেত্রে কখনও দেখা যায়নি। তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হানা দিলেও সরাসরি অরূপের ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেনি। সে ভাবে দেখতে গেলে মন্ত্রী হওয়ার পরে তৃণমূলের জমানায় এই প্রথম বিতর্কের মুখে অরূপ। যে বিতর্ক আন্তর্জাতিক মহলকেও আলোড়িত করেছে। অনুগামীরা অবশ্য আশায়, সোমবার রাত পোহালে মঙ্গলে বেলা গড়ানোর আগে খেলা ঘুরবে।

Advertisement
আরও পড়ুন