মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দিঘার জগন্নাথধাম নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ওই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের দিন সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতিকে। তাঁকে শো কজ় করেছে ওড়িশা সরকার। এ বার জগন্নাথধাম বিতর্কে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, দিঘায় জগন্নাথধাম তৈরি হওয়ায় অনেকের তা ‘গায়ে লেগেছে’। ওই মন্দিরকে হিংসা করা হচ্ছে বলেও মনে করেন মমতা। ওড়িশা সরকারকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
সোমবার মুর্শিদাবাদে গিয়েছেন মমতা। দুপুরে বহরমপুরে নেমে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। দিঘা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক করলে তা নিয়ে প্রশ্ন হয় না, কালীঘাট নিয়ে প্রশ্ন হয় না। আমি দুর্গাপুজো করি, কালীপুজো করি, প্রশ্ন হয় না। জগন্নাথধামটা গায়ে লেগেছে।’’ দিঘার মন্দির নিয়ে অভিযোগ, ২০১৫ সালে পুরীর মন্দিরের নবকলেবরে ব্যবহৃত পবিত্র নিম কাঠের অবশিষ্টাংশ দিয়েই বানানো হয়েছে দিঘার জগন্নাথের বিগ্রহ। সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ওরা বলছে, আমি নাকি নিমগাছ চুরি করেছি। আমার বাড়িতেই তো চারটে নিমগাছ আছে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত খারাপ সময় আসেনি যে নিমগাছ চুরি করতে হবে। জগন্নাথের মূর্তি কিনতে পাওয়া যায়। অনেকের বাড়িতেও আছে। ওটা দয়িতাপতি নিয়ে এসেছেন অন্য জায়গা থেকে। শুনেছি, তাঁকে ওড়িশায় ডাকা হয়েছে, প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমরা তো সকলে পুরীতে যাই। আমরা তো এত প্রশ্ন করি না। এত গায়ে লাগছে কেন? এত হিংসে কেন? হিংসের কোনও ওষুধ হয় না।’’
এর পরেই ওড়িশা সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘ওড়িশায় আলুর টান পড়লে কিন্তু বাংলা তার জোগান দেয়। আপনাদের যখন সাইক্লোনে সব উড়ে যায়, রাস্তার পাইপ নষ্ট হয়ে যায়, আমরা এখান থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠাই। বাংলা থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক পুরীতে যান। দিঘায় আমরা একটা জগন্নাথধাম করলে আপনাদের অসুবিধা কী?’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘ওড়িশায় নাকি বাংলায় কথা বললেই মারধর করা হচ্ছে। অন্যান্য রাজ্যেও এটা হচ্ছে। বাংলাতেও কিন্তু দেড় কোটি বাইরের লোক আছেন। আমরা কারও উপর অত্যাচার করব না। এটাই বাকিদের সঙ্গে বাংলার তফাত। ওড়িশা সরকারের সঙ্গে কথা বলব। অন্য রাজ্যের সঙ্গেও কথা বলব। মুখ্যসচিব চিঠি দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রসচিবকে। আমরা কারও সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি চাই না। সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’’
গত বুধবার অক্ষয়তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয়। প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় জগন্নাথের বিগ্রহে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েতদের (দয়িতাপতি) মধ্যে কারা সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং কোন কাঠ দিয়ে দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা জানতে ওড়িশা সরকার অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তার পর সোমবার রাজেশকে শো কজ় করার খবর প্রকাশ্যে আসে। বিগ্রহে ব্যবহৃত কাঠ নিয়েও বিতর্ক চলছে। তার মাঝেই পড়শি রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ মমতার।