Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

রাম রুখতে ভাতের লড়াই অস্ত্র করতে চায় তৃণমূল, আন্দোলন-ভোট সেতুবন্ধন করবে অভিষেকের স্লোগান

১০০ দিনের কাজে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে গোটা রাজ্যে পাড়ায় পাড়ায় সহায়তা শিবির করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সেখানে ১০০ দিনের কাজ এবং তার বকেয়া সম্পর্কে মানুষকে বোঝানো হবে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৪
Share: Save:

বিজেপি যে সারা দেশের মতো বাংলাতেও মেরুকরণের পুরনো অস্ত্রে শান দেবে, তা এক রকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাতে গতি যোগ করবে ‘রাম আবেগ’। সেই রামের পাল্টা ভাতের লড়াইকেই লোকসভা ভোটে মূল হাতিয়ার করতে চলেছে তৃণমূল। শুক্রবার জেলা নেতৃত্ব, সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে সেটি একপ্রকার স্পষ্টই করে দিয়েছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেকের শুক্রবারের নির্দেশ থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট—

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এক, অভিষেক আবার ১০০ দিনের বকেয়া অর্থের লড়াই শুরু করছেন। বস্তুত, ১০০ দিনের কাজের বকেয়া অর্থ নিয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিলেন অভিষেক। তিনিই জেলায় জেলায় ঘুরে ওই ‘কেন্দ্রবিরোধী আখ্যান’ তৈরি করেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, পুরো বিষয়টিকে তুঙ্গে তুলে নিয়ে গিয়ে লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেড সমাবেশ করে সেখান থেকে ভোটের ময়দানে ঝাঁপানো। মাঝখানে কিছুদিন ভাটা দেখা গেলেও শুক্রবার অভিষেকের নির্দেশ বুঝিয়েছে, তিনি দলকে আবার সেই রাস্তাতেই নিয়ে যেতে চাইছেন। অভিষেকের পরিকল্পনা ছিল, নভেম্বরে ফের দিল্লিতে আন্দোলন আছড়ে ফেলার। তার পরে নবজোয়ারের ধাঁচে আরও একটি যাত্রা করে, সারা বাংলা ঘুরে ব্রিগেডে কেন্দ্রীয় সমাবেশ করে লোকসভা ভোটে ঢুকে পড়ার। তাতে মাঝে ছেদ পড়লেও অভিষেক সেই রুটিরুজি হাতিয়ার করেই ভোটে যেতে চাইছেন।

দ্বিতীয়ত, মাঝখানে কিছু দিন ‘দূরত্ব’ রাখলেও অভিষেক আবার দলের কাজে সর্বাত্মক ভাবে মনোনিবেশ করেছেন। শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ বা ঘাটালের সাংসদ দেবের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করানোর পিছনে অভিষেকের ভূমিকা ছিল। শুক্রবারের বৈঠক বলছে, অভিষেক ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে আবার গোটা রাজ্যের রাজনীতিতে মনোনিবেশ করছেন। যা তৃণমূলের পক্ষে ‘স্বস্তিজনক’।

তৃতীয়ত, অভিষেক বরাবরই মনে করেছেন ধর্ম নয়, কর্মের ভিত্তিতে ভোট হোক। তাঁর বক্তব্য, রামকে আশ্রয় করে বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে ভোট জিততে চাইছে। তার পাল্টা আখ্যান তৈরি করতে হবে ‘কর্ম’ দিয়ে। সেই লক্ষ্যেই তিনি এগোচ্ছিলেন। মাঝখানে কিছু দিন তাতে ভাটা পড়লেও লোকসভা ভোটের আগে আবার সেই আখ্যান তৈরির দিকেই এগোচ্ছে তৃণমূল।

চতুর্থত, রাজভবনের সামনের ধর্না থেকে অভিষেক স্লোগান দিয়েছিলেন ‘জমিদারি মানব না’। বাংলার রাজনীতিতে যে শব্দবন্ধ ফিরে এসেছিল পাঁচ দশক পর। শুক্রবারের বৈঠকে অভিষেক সেই সুরেই ভোটের স্লোগান ঠিক করে দিয়েছেন— ‘জমিদারি হটাও, বাংলা বাঁচাও’। অর্থাৎ আন্দোলনের সঙ্গে নির্বাচনের সেতুবন্ধন করেছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে রাস্তার স্লোগানকেই ব্যবহার করতে চাইছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’।

১০০ দিনের কাজে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে গোটা রাজ্যে পাড়ায় পাড়ায় সহায়তা শিবির করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সেখানে ১০০ দিনের কাজ সম্পর্কে মানুষকে বোঝানো হবে। কী ভাবে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে বাংলাকে, তা-ও জানবেন সাধারণ মানুষ। আগামী রবিবার থেকে পরের রবিবার এক সপ্তাহ ওই শিবির চলবে। তার পরে ১ এবং ২ মার্চ ওই বিষয় নিয়ে গোটা বাংলায় সভা করবে শাসকদল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেড রোডের ধর্না থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেছিলেন, ১০০ দিনের কাজে বাংলার যে ২১ লক্ষ শ্রমিকের মজুরি বকেয়া রয়েছে তা রাজ্য সরকারই মিটিয়ে দেবে। যদিও বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেই কর্মসূচির কিছু পরিমার্জন করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা হিসাব করে দেখেছি ২১ লক্ষ নয়, সংখ্যাটা হবে ২৪ লক্ষ শ্রমিক। তাই সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে টাকা পৌঁছনোর জন্য আরও কিছু দিন বেশি সময় লাগবে। ১ মার্চ তা দেওয়া হবে।’’

শুক্রবার অভিষেক যে কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল, রাজ্য সরকার টাকা দেওয়ার আগে তৃণমূল পাড়ায় পাড়ায় আবহ তৈরি করে রাখবে। তার পর ১ ও ২ মার্চ সভা করে জনতাকে জানান দেবে, ‘মোদী দেননি, দিদি দিয়েছেন।’ সামগ্রিক ভাবে ভোটের আগে সাংগঠনিক ঝাঁকুনি দেওয়ার পাশাপাশি লোকসভার অভিমুখও এই ভাবেই ঠিক করে দিতে চেয়েছেন অভিষেক।

১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা এবং সড়ক যোজনায় বাংলার প্রতি ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে দিল্লিতে আন্দোলন নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক। তার পর কলকাতার রাজপথে মিছিল, রাজভবনের অদূরে টানা ধর্নায় ‘অন্য’ অভিষেককে দেখেছিল বঙ্গ রাজনীতি। কিন্তু তার পরে সেই আন্দোলন থমকে গিয়েছিল। যা নিয়ে অভিষেকও ‘বিরক্ত’ ছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়ছে বলেই শুক্রবারের বৈঠকের পরে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ১০০ দিনের বকেয়া টাকা দেবে মমতার সরকার আর তা প্রচার করবে অভিষেকের সংগঠন। সরকারের কাজ সঠিক ভাবে প্রচার না হওয়ার কারণে ২০১৯-এ খারাপ ফল হয়েছিল বলে তৃণমূল মনে করে। তার পরেই প্রশান্ত কিশোরেরা এসে বাংলায় ‘দিদিকে বলো’ শুরু করেছিলেন। এই রকম ধারাবাহিক নানাবিধ কর্মসূচির ফায়দা তৃণমূল তুলেছিল ২০২১ সালের ভোটে। এ বারও সেই পথেই হাঁটতে চলেছে শাসকদল।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE