Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে ঘর গোছাতে তৎপর বিজেপি

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যে কোনও ভোটে মতুয়াদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মতুয়াদের বড় অংশের সমর্থন বিজেপির দিকে ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৭
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

যে কোনও দিন লোকসভা ভোট ঘোষণা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ৬ মার্চ বারাসতে সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সভাকে ঘিরে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় নিজেদের ঘর গোছাতে তৎপর। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষকে আনার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে মতুয়া সমাজের মহিলাদের উপস্থিতি বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে দল। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসকে সামনে রেখে ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভার নাম দেওয়া হয়েছে মাতৃ বন্দনা। মতুয়া মা-বোনেদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সভায় আসবেন।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যে কোনও ভোটে মতুয়াদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মতুয়াদের বড় অংশের সমর্থন বিজেপির দিকে ছিল। জেলার পাঁচটি লোকসভা আসনের মধ্যে বনগাঁ ও ব্যারাকপুর আসনে জিতেছিল বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। স্বরূপনগরে তৃণমূল প্রার্থী বীণা মণ্ডল জয়লাভ করেন।

তবে বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় অন্তর্দ্বদ্ব তীব্র আকার নেয়। বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন।

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির ফাটল বার বারই চোখে পড়েছে গত কয়েক বছরে। সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল এখানে এক শিবিরে। রামপদ দাসকে কয়েক মাস আগে সরিয়ে দেবদাসকে জেলা সভাপতি করা হয়। যা দলের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তারপর জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ আরও প্রকাশ্যে আসে। দলের উদ্বাস্তু সেলের ব্যানারে আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। সব পক্ষকে এক সঙ্গে দলীয় কোনও কর্মসূচিতে কার্যত দেখাই যায় না।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, বিরোধ ভুলে প্রধানমন্ত্রী সভাকে কেন্দ্র করে বিজেপি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় দলের ফাটল মেরামত করতে। দেবদাস বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় ২০ হাজার মানুষ নিয়ে যাওয়া হবে। যার মধ্যে আশি শতাংশ মহিলা থাকবেন।’’ বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, "আপাতত আমরা ভেদাভেদ ভুলে প্রধানমন্ত্রীর সভা সফল করতে চেষ্টা করছি। যেখানে সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল, তা কাটিয়ে উঠছি। ভেদাভেদ নিয়ে পড়ে আলোচনা করা যাবে। গ্রামে গ্রামে আমরা মহিলাদের কাছে সন্দেশখালির নারী নির্যাতনে কথা কাছে তুলে ধরছি। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য মহিলাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।"

গোষ্ঠীকোন্দলের পাশাপাশি মতুয়াদের একটা বড় অংশ এখনও সিএএ কার্যকর না হওয়ায় বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। তা ছাড়া, সম্প্রতি অনেক মতুয়া সমাজের মানুষের কাছে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি এসেছে। দেবদাস বলেন, ‘‘মতুয়া সমাজের মানুষের জন্য আলাদা বাস এবং ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা ট্রেনে যেতে চাইবেন, তাঁদের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা থাকছে।’’

বিজেপির এই পদক্ষেপকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়ে বিজেপি মতুয়াদের ভাঁওতা দিয়েছে। বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট করে একটা কাজও দেখাতে পারবে না মতুয়াদের জন্য। মতুয়া ঠাকুরবাড়ির জন্য যদি কেউ উন্নয়ন করে থাকেন, তা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কিছু মতুয়া সমাজের মানুষকে হয় তো প্রলোভন দেখিয়ে সভায় নিয়ে যাবে, তবে এ বার ভোটে মতুয়ারা বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দেবেন।’’

দেবদাসের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘মতুয়ারা জানেন, তাঁদের নাগরিকত্ব যদি কেউ দেয়, তা কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হয়ে যাবে। মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গেই আছেন।’’

প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবার বারাসতে কাছারি ময়দানে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং মহিলা মোর্চার মুখপাত্র বৈজয়ন্ত পান্ডা, রাজ্য নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য মহিলা মোর্চার সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মহিলা মোর্চার ব্যানারে এই সভা হলেও বিজেপির সমস্ত সংগঠনই এর পিছনে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মহিলাদের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ তুলে ধরা হবে সভা থেকে। জগন্নাথের দাবি, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনার সঙ্গে বারাসতে প্রধানমন্ত্রীর সভার সরাসরি কোনও যোগ নেই।" বৈজয়ন্তের দাবি, সন্দেশখালি সহ রাজ্যের সব জায়গা থেকেই নারীরা এই সভাইয় উপস্থিত হবেন।

Narendra Modi BJP Barasat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy