Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024 Result

হিন্দু ভোটে থাবা বসিয়েছে বামেরা, মত বিজেপির

বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ১৯৪১টি। বিজেপি নেতাদের দাবি, ভোটের দিন ১৭০০-র বেশি বুথে এজেন্ট ছিল।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৮:৫৪
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের আগে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতারা বুথ শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারবার। বুথ স্বশক্তিকরণ কর্মসূচিও নেওয়া হয়। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল বেরোতে দেখা যায়, ২০১৯-র তুলনায় বিজেপির পরাজয়ের ব্যবধান বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই কেন্দ্রের অধীন সাতটি বিধানসভাতেই ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। এই ফলাফল বুথ স্তরে বিজেপির সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দলের অন্দরে।

বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ১৯৪১টি। বিজেপি নেতাদের দাবি, ভোটের দিন ১৭০০-র বেশি বুথে এজেন্ট ছিল। আগের লোকসভা নির্বাচনের থেকে তুলনায় যা অনেক বেশি। বুথে শক্তি বেড়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। ভোট মেটার পরে মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে জেলা নেতারা বৈঠক করেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে প্রতিটি বিধানসভায় প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়। ফল বেরোতে দেখা যায়, কোনও বিধানসভা এলাকা থেকেই লিড পায়নি বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে এই আসনটি তৃণমূল জিতেছিল ৮৯,৩১১ ভোটে। এ বার তারা জিতেছে ১,৬০,৫৭২ ভোটে। ফলপ্রকাশের দিন পরাজিত বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘দলের মণ্ডল স্তরের নেতারা রায়না বিধানসভা এলাকা থেকে দশ হাজারের বেশি ভোটের লিড দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। অতচ দেখা যাচ্ছে, দল ওই কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েছে ৪৩,৫৬৫ ভোটে।’’

অন্য বিধানসভাগুলিতেও দলীয় হিসাব মেলেনি। ফলাফল বলছে, জামালপুরে ৩৬,৩৬৮, কালনায় ১০,১৫৯, মেমারিতে ৩২,৮৩১, পূর্বস্থলী উত্তরে ৩,২৩৮, পূর্বস্থলী দক্ষিণে ২১,৩৬২ এবং কাটোয়া বিধানসভায় তৃণমূলের থেকে ১২,৪১৫ ভোট কম পেয়েছে বিজেপি। বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘সব কিছু হাওয়ায় হয় না। শাসক দলের জয়ের ব্যবধান দ্বিগুণ হওয়া প্রমাণ করে, নিচুস্তরে সংগঠনে অনেক খামতি রয়েছে। ফল বেরোনোর আগে মণ্ডল স্তর থেকে যে হিসাব দেওয়া হয়েছিল তার ধারে কাছেও ফল হয়নি।’’ লোকসভা ভোটের মাস ছয়েক আগে বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে যুক্ত হয় রায়না, মেমারি এবং জামালপুর বিধানসভা। এই তিন বিধানসভা থেকে বিজেপি পিছিয়ে রয়েছে মোট ১,১২,৭৬৪ ভোটে।

সাংগঠনিক ত্রুটির কথা মানতে নারাজ বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার আমাদের ভোট বেড়েছে। কর্মীরা সাধ্যমতো লড়াই করেছেন। পথে ঘাটে মানুষের কথা শুনে বিশ্বাস করেছিলাম, এ বার জয় নিশ্চিত। তাঁদের কথা যেমন মেলেনি, তেমনই বিভিন্ন সংস্থার করা বুথফেরত সমীক্ষাও মেলেনি।’’

ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে পরাজয়ের তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে জেলা বিজেপি। প্রথমত, সংখ্যালঘু প্রভাবিত বুথগুলিতে তারা ভোট পেয়েছে খুবই কম। এই সব বুথগুলিতে তিন-ন’টি ভোট পেয়েছেন অসীম। দ্বিতীয়ত, হিন্দু প্রভাবিত অজস্র বুথে অসীম এগিয়ে থাকলেও তৃণমূলের ভোটের উল্লেখযোগ্য ক্ষয় হয়নি। বিজেপির দাবি, বাম-কংগ্রেসের পাওয়া ১,৭৬,৮৯৯ ভোটের বড় অংশই এসেছে হিন্দুপ্রধান বুথ থেকে। গত লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোট বামেদের বাক্স থেকে বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল। তৃতীয়ত, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জেরে মহিলা ভোটারদের বড় অংশের ভোট গিয়েছে তৃণমূলের বাক্সে।

এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘সর্বত্র না হলেও মহিলা ভোটারদের অনেকেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ফলে প্রভাবিত হয়েছেন। ভোটে জিতলে লক্ষ্মীর ভান্ডার আমরা বন্ধ করে দেব বলে তৃণমূল অপপ্রচার চালিয়েছে। এর পাল্টা প্রচার করতে পারিনি।’’ দলের একাংশের দাবি, প্রচারেও ঘাটতি ছিল। কবিগানের মাধ্যমে প্রার্থী কিছু জায়গায় প্রচার করেছিলেন। সর্বত্র পৌঁছতে পারেননি তিনি। অনেক এলাকায় প্রার্থীর কবিগান শুনতে ভিড় হলেও ভোট-বাক্সে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE