Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

‘ভাতায় ভাত জোটে, ভাল থাকা যায় কি’

যদিও লক্ষ্মীর ভান্ডার কিংবা উজ্জ্বলা গ্যাস প্রাপকদের অনেকের গলায় অন্য সুর শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ভাতায় ভাত জুটলেও ভাল থাকা কি যায়?

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রশান্ত পাল  , রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৮:৪৫
Share: Save:

তৃণমূলের চালু করা লক্ষ্মীর ভান্ডার বনাম বিজেপির রাজ্যে প্রস্তাবিত অন্নপূর্ণা প্রকল্প— মহিলা ভোট-ব্যাঙ্ককে লক্ষ্য রেখে দুই যুযুধান দল প্রচারে এ নিয়ে সুর চড়াচ্ছে। তুলনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রশ্ন সেখানে যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে বেকারত্বের মধ্যে ভাতার কয়েক হাজার টাকা মহিলাদের কি আদৌ সন্তুষ্ট করছে? বুথে যাওয়ার আগে দুই জেলার মহিলাদের এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে।

পুরুলিয়া জেলায় লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ২৬ হাজার, বাঁকুড়া জেলায় সংখ্যাটা প্রায় ৯ লক্ষ। তৃণমূলের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুফল তারা বিধানসভা, পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে পেয়েছে। সে কারণে লোকসভা ভোটের মুখে ওই প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০০ ও ১২০০ টাকা করেছে। পাল্টা বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন, রাজ্যে তারা ক্ষমতায় এলে অন্নপূর্ণা প্রকল্প চালু করে মহিলাদের তিন হাজার টাকা ভাতা দেবেন।

যদিও লক্ষ্মীর ভান্ডার কিংবা উজ্জ্বলা গ্যাস প্রাপকদের অনেকের গলায় অন্য সুর শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ভাতায় ভাত জুটলেও ভাল থাকা কি যায়? আড়শার বিলচারি গ্রামের আশালতা মাহাতো জানাচ্ছেন, লকডাউনে কাজ হারিয়ে তাঁর পরিযায়ী শ্রমিক স্বামী গ্রামে ফিরেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে গ্রামে ব্যবসা করার আশায় তিনি ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলেন। পাননি। স্বামী ফের ভিন্‌ রাজ্যে কাজে ফিরেছেন। ছোট ছেলেও কলেজের পড়া ছেড়ে সে পথেই গিয়েছেন। আশালতার কথায়, ‘‘লক্ষীর ভান্ডারের টাকায় সংসারে কিছুটা সুরাহা হয় বটে, কিন্তু বড় ছেলেটা স্নাতকোত্তর ও বিএড করে বসে রয়েছে। টিউশন পড়িয়ে কতই বা রোজগার করে! ছোট ছেলেও বলল, পড়ে কি আর চাকরি জুটবে? এখানে যদি কাজের সংস্থান হত, তাহলে স্বামী-ছেলেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে পড়ে থাকতে হত না।’’

পুরুলিয়ার জয়পুরের বালিভাসা গ্রামের জবা মাহাতোর একমাত্র ছেলে স্নাতক হওয়ার পরে কিছুদিন কাজের সন্ধানে ঘোরাঘুরি করে ভাইজাগে কাজ করতে গিয়েছেন। জবা বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকাটা নিয়মিত পাই ঠিকই। কিন্তু এখানে চাকরির সুযোগ থাকলে ছেলেটাকে বাইরে পড়ে থাকতে হত না।’’ অযোধ্যাপাহাড়ের ভুদা গ্রামের মালতী লায়ার স্বামী ও এক ছেলে দিনমজুরি করেন। তিনি জানান, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকায় সংসারে সুরাহা হয় ঠিকই, কিন্তু কাজ থাকলে স্বামী-ছেলে আরও বেশি রোজগার করতে পারতেন।

বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জের প্রৌঢ়া শিবানী রজক লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প, স্বামী তফসিলি বন্ধু প্রকল্পে ভাতা পান। বিনামূল্যে রেশনের চালে পেট চলে যায়। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ছেলেটা স্নাতকোত্তর। ওর একটা চাকরি হলে সংসারটা বেঁচে যেত। ৪০ বছর বয়স হলেও চাকরি নেই বলে ওর বিয়ে দিতে পারছি না। এ যন্ত্রণার কথা কাকে বলব!’’

লক্ষ্মীর ভান্ডারের সঙ্গে অনেকে কেন্দ্রের উজ্জ্বলা প্রকল্পেরও তুলনা টানছেন। আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের শিবানী মাহাতো জানান, গ্যাস আসায় ডালপালা জ্বেলে রান্না করার ঝক্কি মিটেছিল। কয়েকবার হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস ভরিয়েছেন। এখন সিলিন্ডার তুলে রেখে সেই ডাল-পালাতেই ফিরেছেন। তাঁর কাছে নিয়মিত লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা অবশ্য অনেকখানি। একই কথা শোনান বান্দোয়ানের বুড়িঝোর গ্রামের বাসিন্দা যমুনা সিংহ।

পরিযায়ী শ্রমিক স্বামীর পাঠানো টাকা সংসার চালাতেই শেষ হয়ে যায় বাঁকুড়ার বধূ মঞ্জু কর্মকারের। তবে তাঁর কাছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকার মূল্য কম নয়। তিনি বলেন, ‘‘লক্ষীর ভান্ডারের টাকা আমার মতো বধূদের নিজস্ব রোজগার তৈরি করেছে। নিজের মতো কেনাকাটা করতে পারি। তবে চাইব, ছেলেরা পড়াশোনা শেষ করে যাতে নিজ নিজ মেধা অনুযায়ী কাজ বা ব্যবসার সুযোগ পায়, সেটাও যেন সরকার নিশ্চিত করে।’’

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নানা কারণে মহিলাদের হাত খরচ বেড়েছে। তাই তাঁদের বেশি টাকা দেওয়ার কথাই আমরা বলছি। তবে কেন্দ্র রাজ্যে কর্মসংস্থানের জন্য কী কী করছে, তা-ও আমরা প্রচার করছি।’’ তৃণমূলের বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক (অসম্পূর্ণ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE