গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেই প্রথম দফায় ১৬ আসনে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে রাজ্য বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার সেই ঘোষণা করতে গিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছিলেন, এই ১৬ জনের মধ্যে নতুন মুখ ১৪। বিমানের দাবি ‘ভুল’ নয়। এটা ঠিকই যে, ওই তালিকার ১৪ জন লোকসভা ভোটে এই প্রথম প্রার্থী হলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ভোটের ময়দানে জেতা-হারার অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। সে দিক থেকে বামেদের প্রথম তালিকার ১৬ জনের মধ্যে আট জন ভোট ময়দানে একেবারেই ‘নতুন’। কিন্তু বাকি আটের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়।
বামেদের প্রথম দফার প্রার্থিতালিকার কারা নতুন?
হুগলি কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ ভোটের ময়দানে নতুন মুখ। তিনি দলের রাজ্য কমিটির সদস্য। হুগলি সিপিএমের অনেকে বলেন, চুঁচুড়ার এই নেতা দীর্ঘ দিন ‘কোণঠাসা’ ছিলেন জেলা পার্টিতে। হুগলি সিপিএমে অনিল বসু যুগের অবসান হতেই ধাপে ধাপে মনোদীপ সংগঠনে জায়গা করে নেন। হাওড়া সদরের সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তিনিও ভোটের ময়দানে নতুন। জলপাইগুড়ি থেকে সিপিএম প্রার্থী করেছে ৩৬ বছর বয়সি যুবনেতা তথা হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক দেবরাজ বর্মণকে। তিনিও সংসদীয় গণতন্ত্রে ভোটের ময়দানে এ বারই প্রথম নামছেন। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শীতল কৈবর্ত্য, তমলুকের প্রার্থী তথা তরুণ আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও নতুন মুখ। বালুরঘাটের আরএসপি প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্ত, কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায়ও ভোটের লড়াইয়ে এ বারই প্রথম।
কিন্তু এই আট জনকে বাদ দিলে বাকি আট জনের ক্ষেত্রে তা নয়। তাঁরা আগেও ভোটের ময়দানে ল়ড়েছেন। কেউ জিতেছেন। কেউ হেরেছেন। কারও কারও জেতা-হারা দুইয়েরই অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন দমদমে সিপিএম প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকে। সুজন যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ। পাশপাশিই, তিনি ছিলেন যাদবপুরের বিধায়ক। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যাদবপুরে তৃণমূলের প্রার্থী দেবব্রত মজুমদারের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন সুজন।
মেদিনীপুর কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী গত লোকসভাতেও ওই আসন থেকে লড়েছিলেন। কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ওই আসনে গত লোকসভায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন তৃণমূলের মানস ভুঁইয়া। আসানসোলের সিপিএম প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন জাহানারা খান। তিনি এখন দলের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী। পাশাপাশিই রাজ্য কমিটির সদস্য। জাহানারা ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জামুড়িয়া থেকে সিপিএমের হয়ে জিতেছিলেন। বিধায়ক হিসাবেও সক্রিয় ছিলেন এই মহিলানেত্রী। কিন্তু দু’বারের জেতা জাহানারাকে ২০২১ সালে প্রার্থী করেনি সিপিএম। তাঁর জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছিল জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষকে। তা নিয়ে দলের মধ্যেই বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। সে দিক থেকে জাহানার এখনও ভোটে হারার রেকর্ড নেই। যদিও তিনি এর আগে লোকসভা ভোটে লড়েননি।
অন্য দিকে, কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদিও ভোটে লড়েছেন অতীতে। এক বার জিতেছেন। এক বার হেরেছেন। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে নদিয়ার পলাশিপাড়া থেকে জিতেছিলেন সাদি। ২০১৬ সালে তিনি ওই কেন্দ্রেই তৃণমূলের তাপস সাহার কাছে হেরে যান। যে কেন্দ্রের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। যিনি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আপাতত জেলবন্দি। বাঁকুড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্তও আগে ভোটে লড়েছিলেন। বাঁকুড়ার তদানীন্তন তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্রের মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হয়েছিল। তাতে লড়েছিলেন নীলাঞ্জন। কিন্তু হারতে হয়েছিল তাঁকে। দুই তরুণ নেতানেত্রী সৃজন ভট্টাচার্য এবং দীপ্সিতা ধরও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে লড়ে পরাস্ত হয়েছিলেন। সৃজন লড়েছিলেন হুগলির সিঙ্গুর থেকে। দীপ্সিতা প্রার্থী ছিলেন হাওড়ার বালিতে। এ বার দীপ্সিতা শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের টিকিট পেয়েছেন। সৃজন প্রার্থী যাদবপুরে। বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার অধুনা প্রয়াত হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্রবধূ সায়রা শাহ হালিম এ বার দক্ষিণ কলকাতায় সিপিএম প্রার্থী। দক্ষিণ কলকাতা আসনের জন্য বিশেষ আলোচনা সিপিএমে হয়নি। বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সায়রাকেই বেছে নেওয়া হয়। একে মহিলা, তার উপর সংখ্যালঘু। তা ছাড়া ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএম যখন প্রায় সব আসনে তৃতীয় হয়েছিল, তখন দেখা গিয়েছিল বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন সায়রা। তিনি পারিবারিক সম্পর্কে অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহের ভাইঝি। এঁদের অনেককেই ‘নতুন মুখ’ বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু ভোটের ময়দানে এঁরা ‘নতুন’ নন। ‘নতুন’ লোকসভার ভোট ময়দানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy