Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

প্রার্থীরা দূরের মাঠে, পদ্মে আশা-আশঙ্কা

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বাংলার জন্য বিশেষ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিজেপি এই এক জায়গার মুখকে অন্য জায়গায় পাঠানোর পথে হেঁটেছে।

BJP

—প্রতীকী ছবি।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৫
Share: Save:

হরিণঘাটার বিধায়ককে পাঠানো হয়েছে বর্ধমান পূর্বে লড়তে। আসানসোলের বিধায়ক মেদিনীপুরে লোকসভা ভোটের ময়দানে। মেদিনীপুরের সাংসদ বর্ধমান-দুর্গাপুরে গিয়ে নতুন করে ইনিংস শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদকে নিয়ে আসা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। বনগাঁর বিধায়ক লড়তে যাচ্ছেন বারাসতে। দলের বেশ কিছু চেনা মুখকে ঘরের মাঠের বদলে এ বার ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’ খেলতে নামিয়েছে বিজেপি! দলের নেতৃত্বের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর নামে ভোট হবে। তাই এই মাঠ বদলে বিশেষ কিছু এসে যাবে না। কিন্তু লোকসভা ভোটে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুফল ঘরে আসবে নাকি হিতে বিপরীত হবে, সেই আশা-আশঙ্কার দোলাচল তৈরি হয়েছে বিজেপি শিবিরের অন্দরে।

দীর্ঘ টালবাহানার পরে নিজের মেদিনীপুর কেন্দ্রের বদলে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে লড়তে পাঠিয়েছে দল। ওই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এ বার টিকিট পাননি। রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে নিজের কেন্দ্র ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতায় লড়তে আসতে হয়েছে। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল লোকসভার উপনির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এ বার তাঁকে লড়তে হচ্ছে দিলীপের ছেড়ে আসা মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে। নদিয়ার হরিণঘাটা কেন্দ্র লোকসভার ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী বনগাঁ লোকসভা আসনের অন্তর্গত। কিন্তু হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকারকে বিজেপি প্রার্থী করেছে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে। বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে দল টিকিট দিয়েছে বারাসত লোকসভা কেন্দ্র থেকে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বাংলার জন্য বিশেষ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিজেপি এই এক জায়গার মুখকে অন্য জায়গায় পাঠানোর পথে হেঁটেছে। কিন্তু এর পিছনে যুক্তি কী? বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, সাংগঠনিক রদবদলকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় যে ভাবে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল, তার প্রভাব যাতে লোকসভা নির্বাচনে না পড়ে, সেই কারণে এই প্রার্থী বদলের কৌশল। অপর অংশের মতে, বিদায়ী সাংসদদের কাজের ‘প্রত্যাশা’ পূরণ না হওয়ায় ফলে নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল, সেই সম্ভাবনা খারিজ করতেই এই কৌশল। যদিও বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে এই যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, লোকসভা নির্বাচন হবে মোদীর মুখকে সামনে রেখে। নির্বাচনে মানুষ মোদী সরকারের কাজের মূল্যায়ন করে ভোট দেবেন। সেখানে কে প্রার্থী থাকছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সকলেই ‘মোদীর প্রতিনিধি’। কেন্দ্র বদলে ভিতরে ভিতরে অসন্তুষ্ট হলেও দিলীপ প্রকাশ্যে এই সুরেই বলছেন, ‘‘কার কেন্দ্র কোনটা? সব কেন্দ্রই আমার! যেখান থেকে দাঁড় করাবে, সেখান থেকেই জিতব!’’ মোদী সরকারের কাজ এবং বিজেপির পরিচয়ের জোরে অন্যত্র গিয়ে লড়াই করতে অসুবিধা হবে না বলে দাবি করছেন অগ্নিমিত্রাও।

রাজ্যে এ বার বিজেপির প্রার্থী তালিকায় বিধায়ক-সংখ্যাও যথেষ্ট। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ১১ জন বিধায়ককে প্রার্থী করেছে। বিজেপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ৭ জন বর্তমান বিধায়ক ও এক জন পদত্যাগী বিধায়ক। দলীয় সূত্রের মতে, বিধায়কদের ‘গ্রহণযোগ্যতা’কে লোকসভা ভোটের ময়দানে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তাই নিজের এলাকায় যে বিধায়কদের জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাঁদেরকেই ভোটে প্রার্থী করা হয়েছে। যদিও দলে অন্য অংশের বক্তব্য, বাংলায় এ বার প্রার্থী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাই পরিষদীয় দলের একাধিক সদস্য নির্বাচনে টিকিট পেয়েছেন। যদিও বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ এক বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘দাদাকে পরিষদীয় দলের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়েছে। সবাই একসঙ্গে দিল্লি চলে গেলে পরিষদীয় দলের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে! তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সব দিকের মধ্যে সমতাবিধান করতে হয়েছে।’’

বিজেপির কৌশল নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করছে অন্যান্য দল। রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের নেতা বাবুল সুপ্রিয়ের মন্তব্য, ‘‘বর্তমান সাংসদদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বিজেপি লড়াইয়ের আগেই হার স্বীকার করে নিয়েছে। হারের ভয়েই এই স্থানান্তর। কত ভোটে হার হবে, সেটা সময় বলবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মতে, ‘‘মানুষ পাঁচ বছর অন্তর জনপ্রতিনিধিদের কাজের বিচার করেন। তাঁদের নিজেদের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিলে মানুষকে সেই সুযোগ আর দেওয়া হয় না। কাজ যাচাই করার বিষয়টাকে এই কৌশলে আড়াল করা যায়। বিজেপি যে কাজের নিরিখে ভোট করতে চায় না, সাংসদদের কেন্দ্র বদল, বিধায়কদের অন্যত্র প্রার্থী করা থেকে সেটাই আবার বোঝা যাচ্ছে।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE