Advertisement
Suman Mukhopadhyay's Puja Plans

‘পুজোয় থাকব এমন বাড়িতে যে, ভেবেই শিহরণ লাগছে,’ বললেন সুমন মুখোপাধ্যায়

কোথায় থাকবেন তিনি, যাতে এত উত্তেজনা? জানালেন।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১৭
Share: Save:

এ বার পুজোয় আমি আমেরিকায়। প্রায় তিন মাস থাকব। চলেও এসেছি এখানে। আসার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়-তে থিয়েটার নিয়ে কিছু কাজকর্ম করা। নিউ ইয়র্কও যাব।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের আরবানা শ্যাম্পেনে একটা ক্যাম্পাস আছে। ছেলে রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে একটা বাড়িতে একদা রবীন্দ্রনাথ এসে উঠতেন। আমার উত্তেজনার বিষয় হচ্ছে, এই বাড়িতেই আমি থাকব। এই বাড়িতে থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নিয়ে কাজ করব।

আমি হাওড়ার যে বাড়ির ছেলে সেই বাড়িতে সাবেক দুর্গা পুজো হয়। কলকাতায় থাকলে নবমীর দিন যাই। ওই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছেলেবেলা, কৈশোর, প্রথম যৌবন। পুজোয় কাদামাটি খেলা, লরি করে সবাই মিলে কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আনা থেকে ধুনুচি নাচ, সিদ্ধি খাওয়া— সবই করতাম।

তার পর তো কলকাতায় চলে এলাম। থাকতাম হেস্টিংস অঞ্চলের একটা সরকারি আবাসনে। মাত্র ৬৪টা বাড়ির খুব ছোট আবাসন। সেখানেও হাওড়ার বাড়ির পুজোর আমেজটা ছিল। কলকাতার পুজোর দেখলাম আলাদা উত্তেজনা। তখন অবশ্য এত ভিড় হত না।

পুজোর সময় এলে অল্প বয়সের কথা মনে পড়ে। কত কী না করেছি! তার মধ্যে একটা ঘটনা মনে পড়ছে। এক বার 'হম কিসিসে কম নেহি' দেখেছিলাম। পাছে ধরা পড়ে যাই, সেই ভয়ে দুই বন্ধু মিলে দু’দিনের টিকিট কেটেছিলাম। এক দিন ফার্স্ট হাফ দেখেছিলাম, আরেক দিন সেকেন্ড হাফ।

পুজোর আরেকটা ঘটনা বলি। সেটা বড় বিষাদের। ১৯৮৩ সালের ১৩ অক্টোবর চলে গেলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তমীর দিন। পুজোর আনন্দটাই বেদনায় পরিণত হল। হেস্টিংসে আমাদের ছোট ফ্ল্যাটে নাট্য জগতের প্রায় সমস্ত মানুষজন জড়ো হলেন— কী ভাবে, কোথায় স্মরণ সভা হবে, এই সব আলোচনা হতে লাগল। সে বার পুজোটা এই ভাবেই কেটে গেল।

পুজোতে ছেলেবেলায় ফ্যাশনেবল জামাকাপড় কখনও পরার সুযোগ পাইনি। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ‘শেষের কবিতা’র বিখ্যাত লাইন মনে মনে বলতাম— সবার ফ্যাশন আছে আমার স্টাইল।

যখন মুম্বইতে ছিলাম, ওখানকার কোনও পুজোতেই কোনও দিন যাইনি। এমনকি ফিল্মস্টারদের পুজোর নিমন্ত্রণ থাকলেও না। বাড়িতেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি।

ইদানীং পুজোয় বিভিন্ন ক্লাব গুলিকে অনুদান দেওয়া হয়। নাটকের দলকেও অনুদান দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, অনুদান আরও ভাল কাজে লাগা উচিত। যে লোকশিল্প বা লোকজ আঙ্গিকগুলি দিন কে দিন বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে, যেমন গম্ভীরা, ছৌ, লেটো, পটের গান যাঁরা করেন, সেই সব শিল্পীদের অনুদান দেওয়া উচিত।

শেষে বলি, আমেরিকা এসেছি বলে পুজো কিন্তু একদম মিস করে যাব, এমনটা নয়। বাঙালি মহলে এখানে হাজার একটা পুজো। কোনও না কোনও পুজোয় এক আধদিন হাজির হবই। তবে এ বারে আমেরিকায় পুজো কাটানোর শিহরণটা সত্যিই অন্য রকম! যে কথা গোড়াতেই বলেছি!

অনুলিখন- সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE