পুজো এলেই ছটফট করতে থাকি, কখন বেড়াতে যাব।
পুজো মানেই লম্বা ছুটি। পুজো মানেই পাহাড়ি পথে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। আমার পাহাড় ভীষণ প্রিয়। তাই পুজো এলেই ছটফট করতে থাকি, কখন বেড়াতে যাব। পাহাড়ে চড়ব। পাহাড়ও আমায় বড্ড ভালবাসে। তাই এক বছর পাহাড় আমায়, আমার বন্ধুদের অজগর সাপের মতোই তার পাকদণ্ডী রাস্তা দিয়ে গ্রাস করে নিতে চেয়েছিল। কোনও মতে প্রাণ হাতে সে বার সমতলে ফিরতে পেরেছিলাম। বাড়ি এসে বলেছিলাম, অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে বেরিয়েছিলাম, তাই পাহাড় তার দখলে আমায় রাখতে পারেনি!
সেটা ঠিক দুর্গাপুজোর পরেই। লক্ষ্মীপুজোয় ঘটেছিল। সাল ২০১০-এর নভেম্বর। রোটাং পাস বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সামনে পড়ি। সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছিল সেই খবর। প্রবল তুষারপাতে রাস্তা বন্ধ। গাড়ি যাচ্ছে না। আমরা সবাই আটকে পড়েছি। রাত হয়ে গিয়েছে। সরু, এক ফালি পাহাড়ি রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে। চারিদিক দুধসাদা বরফে মোড়া। আলো বলতে মাথার উপরে পূর্ণিমার চাঁদ। ওই আলোয় পথ দেখে সেই রাতে আমরা ৩০ কিমি পথ হেঁটে নীচে নেমেছিলাম! এক দিকে ভয়াল সৌন্দর্য। আর এক দিকে বাঁচার প্রবল আকুতি। সেই দৃশ্য আজও ঘুমে-জাগরণে ফিরে ফিরে আসে।
এ বছর অনেক আগেই আমার পুজো এসে গিয়েছে। কালো মেঘ সরিয়ে আকাশে নীল চাদর। তাতে সাদা মেঘের বুটি। ঝলমলে রোদ, কাশ ফুল। এ সব দেখছি। আর আনন্দের চোটে দেদার বাইরের খাবার খাচ্ছি। বিরিয়ানি, মাটন ঘুরে ফিরে পাতে পড়ছে। মা সাবধান করছেন, ‘‘এ বার কিন্তু মোটা হয়ে যাবি।’’ আমি কানে দিয়েছি তুলো! পাড়ার প্যান্ডেল যদিও পুরো তৈরি হয়নি। সে তো কলকাতার কোনও মণ্ডপই সম্পূর্ণ হয়নি এখনও। আলো লাগানোর পর্ব চলছে। আমি এতেই খুশি। যদিও গত বছর থেকে বাঙালির এই আনন্দে কালো ছায়া ফেলেছে অতিমারি। আমার যেমন কেনাকাটার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। আর আগে? কিনে কুলিয়ে উঠতে পারতাম না। তবুও পুজো এলে বাঙালিকে বোধ হয় ঠেকিয়ে রাখা যায় না। কারণ, প্রতিটি মানুষের অনুভূতিতে জড়িয়ে এই বিশেষ উৎসব। তাই যতই অতিমারি আসুক, সব সাবধানতা মেনে সবাই নিজের মতো করে ঠিকই উদ্যাপন করবেন।
আমার কথাই ধরুন। প্রতি বছর রাজ্যের বাইরে বেড়াতে যাই। অতিমারির কারণে সেই ঝুঁকি নিচ্ছি না। তা বলে ঘরে বন্দি হয়েও থাকব না। এ বারের পুজোয় আমি উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে। চার বন্ধু মিলে দার্জিলিংয়ের আশপাশে ঘুরে বেড়াব। চার বন্ধুর তালিকায় আমি, গীতশ্রী রায়, শ্রীতমা রায়চৌধুরী রয়েছি। বেড়ানোর তালে নিজের জন্য কিচ্ছু কিনিনি। প্রচুর জ্যাকেট আছে। সে গুলো দিয়েই শৈলশহরে আমি রঙিন! তা ছাড়া, বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে পোশাক অদল বদল তো করবই। মা-বাবা-ঠাকুমাকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছি। মাকে শাড়ি, সালোয়ার। বাবার জন্য প্যান্ট-শার্ট। ঠাকুমার জন্য শাড়ি।
এ ভাবেই বছর আসবে বছর যাবে। আমার হা-পিত্যেশ অপেক্ষাও থেকে যাবে। তারকা হওয়ার সুবাদে পঞ্চমী পর্যন্ত পুজো উদ্বোধনে। বিচার করায়। সেই সুযোগে কলকাতার সেরা পুজো, মণ্ডপ, প্রতিমা দর্শন হয়ে যাবে নির্বিঘ্নে। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসন দর্শনার্থীদের পুজো দেখাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তার পরেই প্রকৃতি আর রুকমা একাকার... সেথায় আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy