প্রথম বার কলকাতায় এসে ঠাকুর দেখতে গিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়েছিলেন তিনি। এত ভিড়, এত মানুষ, এত আলো, চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল যেন তাঁর। বড় হওয়ার পরে কলকাতায় এসে পুজো কাটালেও, তাঁর কথায়, ‘‘বিখ্যাত চেনামুখ হয়ে যাওয়ার পরে বন্ধুবান্ধবরা আর আমার সঙ্গে বেরোতে চায় না, এমনকি আমার বান্ধবীও না! তাই পুজোর সময় বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে।’’
এই বছর? বললেন, ‘‘এই বছরে পুজোয় হয়তো দেশেই থাকছি না! আমার বরাবরের ইচ্ছা ছিল আমি কখনও বিদেশ গেলে যেন সেখানকার ভ্রমণ দপ্তর থেকে তা স্পনসর করা হয়। এই বছর আমার প্রথম বিদেশ যাওয়া, সঙ্গে এই স্বপ্নও সফল হচ্ছে।’’ কোথায় পাড়ি দিচ্ছেন তা হলে? জানালেন, ‘‘উত্তর আমেরিকা সফরে যাচ্ছি, সঙ্গে থাকবে বান্ধবী অন্তরা।’’
কলকাতার পুজো কেমন কাটে? হেসে উত্তর দিলেন, ‘‘আমার কলকাতার বাড়িতে যেহেতু বাবা মা কেউ থাকেন না, তাই আমার বাড়িটা সারা বছরই বন্ধুদের ক্লাবঘর বলতে পারেন। পুজোয় বন্ধুরা মিলে এক সঙ্গে আড্ডাটাই আমাদের কাছে আসল, একই বন্ধুদের গ্রুপ হওয়ায় আলাদা করে বান্ধবীর জন্য সময় বের করার দরকার পড়ে না।’’
আর ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি? বললেন, ‘‘অবশ্যই করে পড়াশুনা বন্ধ থাকার মতো নিখাদ আনন্দকে ভুলতে পারি না। পুজোর ক’টা দিন ধুবুলিয়ার বাড়িতে বইপত্র বন্ধ রেখে ঘুরে বেড়ানোর যে আনন্দ, পড়াশুনো মিটে যাওয়ার পরে আজ সেই আনন্দ আর পাই না। আগে কী হত, মা ষষ্টীর দিনেই ৬০ টাকা দিয়ে দিলে আমি সপ্তমীর মধ্যেই নিজের টাকা সব শেষ করে দাদা আর দাদার বন্ধুদের কাছে টাকা চেয়ে খেলনা চাইতাম। ছোট বলে আমায় ওরা প্রশ্রয় দিত!’’
ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা কিরণ ও তাঁর প্রেমিকা দুজনেরই না-পসন্দ। তাই জনপ্রিয় প্যান্ডেলগুলি ঘুরে দেখা হয় না বললেই চলে। তাই ঘরোয়া ভাবেই পুজো কাটান ওঁরা।
ছিমছাম পুজো কাটানোর সিদ্ধান্ত কী তাঁর নিজেরই, না কি বান্ধবীর দাবি মেনে বশ্যতা স্বীকার করা? অকপট গলায় বললেন, ‘‘আমি ছেলেদের স্কুলে পড়েছি, তার উপরে আবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি, (হাসি) তাই আজ অবধি মেয়ে বন্ধু বিশেষ কেউ একটা নেই বললেই চলে! আমার জীবনে এক মাত্র মহিলা, অন্তরা! পুজোর প্রেম বলতে ওর সঙ্গেই ঘোরাঘুরি। আমাদের বন্ধুদের গ্রুপেও তেমন মেয়ে নেই, অন্তরা যা বলে তাই-ই হয়।’’
আর বন্ধুরা মিলে ঠাকুর দেখতে বেরলে? বললেন, ‘‘আমার মতে মেয়েদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরনোই উচিত নয়, একা অন্তরাকে নিয়েই আমরা বন্ধুরা পেরে উঠি না! ওর হঠাৎ-হঠাৎ খিদে পায়, ও যেখানে বলবে, সেখানে যেতে হয়। আমরা তো ভেড়ার পালের মতোই চলি ওর সঙ্গে সঙ্গে, এর সঙ্গে আরও মেয়ে থাকলে তো, আরও চাপ!’’
আর এই এত জনপ্রিয়তা, এত বছর ধরে সবার মধ্যে চেনামুখ হয়ে ওঠা, এতে তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণে কি কোনও বদল এসেছে? উত্তর এল, ‘‘২০১৭-১৮ এর দিকে প্রথম প্রথম জনপ্রিয়তা পেলে হয়তো মানুষ একটু হামবড়া হয়ে ওঠে। মার ক্ষেত্রেও শুরুর দিকে তা হয়নি এমন বলব না। অনেক ক্ষণস্থায়ী মানুষ এসেছে জীবনে, কিন্তু খুব দ্রুত আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যে, অন্তরার সঙ্গে আমার সম্পর্কের যা ভিত, তা ক্ষণস্থায়ী মানুষদের নষ্ট করতে দিলে চলবে না। দীর্ঘ ৭ বছরের সম্পর্ক আমাদের, মাঝে মধ্যে মনে হয় কেমন ভাইবোনের মতো দু’জন দু’জনকে চিনে গিয়েছি আমরা। এক সঙ্গে কত কিছু করলাম, পাশাপাশি এতটা বড় হলাম, তাই বলব যে না, সমীকরণে বদল আসেনি। এসেছে।’’
নতুন ‘কন্টেন্ট’ বা ভিডিয়ো কি আসবে এই পুজোয়? জানালেন, ‘‘নেটদুনিয়ায় মানুষ এখনও এক ডাকে আমায় !ওহ, কি লাগছে!’র কিরণ বলেই চেনে, একবার এই রকম জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলে সবাই একই অঙ্ক কষে এগোতে চায়। তবে আমি নতুন কিছু করতে চাই, এক্কেবারে অন্য রকম যা বাংলার ইউটিউব জগতে এর আগে কখনও হয়নি।’’
কবে দেখবে মানুষ এই সব? বললেন, ‘‘১৬ই অক্টোবর বেরিয়ে যাচ্ছি, তাঁর আগেই ভিডিয়ো এসে যাবে। পুজোর সময়ে জনপ্রিয়তার সবটাই ভাল, শুধু পাড়ার দাদারা খুব বড়লোক ভেবে লম্বা চওড়া চাঁদা চেয়ে বসে এটাই একটু চিন্তা, (হাসি)।’’
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy