Advertisement
E-Paper

আমদানি রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার! জালে বাংলাদেশের ১৩২ অসাধু প্রতিষ্ঠান

ঝকঝকে অফিস, চকচকে ক্যাবিনেট। টেবিলে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে চঞ্চল আঙুল। কর্মব্যস্ত কর্মীরা। নিঃশব্দে অনলাইনে বিশ্বব্যাপী লেনদেন। বিজলি আলোর চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা রিসেপশনিস্ট থেকে চেয়ারম্যানের সপ্রতিভতায়। বাইরে থেকে কেউ ঢুকলে মনে করবে, অলকাপুরীতে ঢুকেছে।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৪:২২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঝকঝকে অফিস, চকচকে ক্যাবিনেট। টেবিলে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে চঞ্চল আঙুল। কর্মব্যস্ত কর্মীরা। নিঃশব্দে অনলাইনে বিশ্বব্যাপী লেনদেন। বিজলি আলোর চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা রিসেপশনিস্ট থেকে চেয়ারম্যানের সপ্রতিভতায়। বাইরে থেকে কেউ ঢুকলে মনে করবে, অলকাপুরীতে ঢুকেছে। আড়ম্বরের আড়ালে যে অন্ধকারের কারবার ভাবনাতেই আসবে না। বরং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অতিরিক্ত সমীহ জাগবে। কোম্পানির মালিকরা ভেবেছিল, এ ভাবেই চলবে। আইন আর সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে টাকার পাহাড় গড়বে। শর্টকাট রাস্তায় সাফল্যের অন্তিম বিন্দু ছোঁবে অনায়াসে। হল কই! রেহাই মিলল না। ধরা পড়ল। পুরস্কার পর্ব শেষ। এবার শাস্তির পালা। তারই প্রহর গোনা। জালে পড়েছে ১৩২টি প্রতিষ্ঠান। বিদেশে অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ। ব্যবসা বন্ধ। ধরাশায়ী হয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টায় লাভ হয়নি। প্রমাণ হাতেনাতে। ব্যাঙ্কিং চ্যানেলে পাচার ৪১৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩০২ টাকা। কড়ায়গন্ডায় হিসেব। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর-এর তদন্ত রিপোর্টে রয়েছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের পাচার করা অর্থের পরিমাণ। ব্যবসার লাইসেন্স নম্বর, সার্কেলের নাম। পার পাবে কী করে! যন্ত্রপাতি আমদানির নামে অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি। হিসেবের খাতায় কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি, সংস্থার সমৃদ্ধি, বিশেষজ্ঞ আনা, বিদেশে সেমিনার করাতে খরচ দেখানো হয়েছে। এ সব জানালার কাজ করেছে। যেখান দিয়ে গলেছে টাকা। চলে গেছে এ দেশ থেকে সে দেশে।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালকরা বিদেশ ভ্রমণের ব্যয়ও নিজস্ব ব্যাঙ্কিং চ্যানেলে সেরেছে। তাদের সাহায্য করেছে ব্যাঙ্ক আর শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা। তাদের হদিশ পাওয়া সহজ ছিল না। অপরাধের ফাঁকফোকর এমন ভাবে ঢাকা ছিল ধরে সাধ্যি কার। অসাধ্য সাধন করল ২১ সদস্যের টাস্কফোর্স। তাতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখার অফিসাররা ছাড়াও ছিলেন শুল্ক, ভ্যাট, ট্যাক্সেস অ্যান্ড ফিন্যান্স এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা। তাঁরা এক বছর ধরে কারখানা, ব্যাঙ্ক, বন্দর, ওয়্যারহাউসে তল্লাসি চালিয়ে তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করেছেন।

অর্থপাচারের ছবিটা এখন স্পষ্ট। প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ চালান ভারতেও। ভারত থেকে ভুয়ো আমদানি পণ্যের হিসেব দেখিয়ে জালিয়াতি করেছে। ভারতের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই বাংলাদেশ তদন্তের জাল বিছিয়েছে। এ সব অসাধু প্রতিষ্ঠান ভারত ছাড়াও অর্থ পাচার করেছে চিন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইল্যান্ড, দুবাই, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডসে। বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইৎজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে। এ সব দেশের যে সব সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা গড়ে তোলা হয়েছে তাদের খোঁজ মিলেছে। সেখান থেকেও তথ্য প্রমাণ পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

সরকারের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকার দরুণ তারা সরকারি সুযোগ সুবিধে পায় অনেক বেশি। ওষুধ, প্লাস্টিক, চামড়া, পোশাক শিল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুল্কে ছাড় পায় যথেষ্ট। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশি মুদ্রার তহবিল বাড়াতে রফতানি বাণিজ্যের দিকে জোর দিয়েছেন বেশি। তাতেই রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৌষমাস। সরকারি সাহায্যের হাত প্রসারিত। না চাইতেই বৃষ্টি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবার কঠোর। সুযোগের অপব্যবহার করে যারা দেশের শত্রুতা করেছে, এক দিক থেকে তারা তো দেশদ্রোহী। যথার্থ শাস্তি তাদের প্রাপ্য। আইনের শাসনে সেই ব্যবস্থা হচ্ছে।

আরও খবর...

চুরি হওয়া রিজার্ভের পুরোটাই ফেরত পাওয়া সম্ভব, বলছে ঢাকা

Currency Smuggled
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy