Advertisement
E-Paper

ফের সন্ত্রস্ত ঢাকা, এ বার হানা মহিলা মানববোমার

জুলাইয়ে ইদের ছুটির কয়েক দিন আগে ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ধরনের সংগঠিত জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে সেই প্রথম।

কুদ্দুস আফ্রাদ

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৫
আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর জঙ্গিদের ডেরায় পড়ে রয়েছে মহিলার দেহ। শনিবার ঢাকায়। ছবি: এপি।

আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর জঙ্গিদের ডেরায় পড়ে রয়েছে মহিলার দেহ। শনিবার ঢাকায়। ছবি: এপি।

জুলাইয়ে ইদের ছুটির কয়েক দিন আগে ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ধরনের সংগঠিত জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে সেই প্রথম। বড়দিনের ছুটির ঠিক আগের দিন ঢাকা এ বার কেঁপে উঠল মানববোমা বিস্ফোরণে। নিজের গায়ে লাগানো সুইসাইড জ্যাকেটের বোতাম টিপে নিজেকে উড়িয়ে দিল এক মহিলা জঙ্গি। এই ঘটনাও এই প্রথম বাংলাদেশে।

বড়দিন ও ইংরেজি বর্ষবরণের উৎসবে জঙ্গিহানার আশঙ্কা করছিলেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, নানা ভাবে সূত্র পেয়ে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে আশকোনার একটি বাড়ি নব্য জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গিদের ডেরা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ। বাসিন্দারা বোমা ও গুলি ছুড়ে প্রতিরোধ করায় পুলিশ বোঝে সন্দেহ অমূলক নয়। তার পরে বিশেষ বাহিনী ‘সোয়াট’ ১৬ ঘণ্টা ধরে রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালায় বাড়িটিতে। সেই সময়েই একটি ছোট মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে আসে এক মহিলা জঙ্গি। গায়ে পরা সুইসাইড জ্যাকেটের বোতাম টিপে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। মহিলার দেহ উড়ে গেলেও শিশুটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো গিয়েছে। আর এক জঙ্গিও ঘরের ভিতরে বোমা ফেটে মারা যায়। চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।

হোলি আর্টিজান হামলা ও তার পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ইদের জমায়েতে আক্রমণের চেষ্টার পরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে টানা অভিযানে নামে বাংলাদেশ পুলিশ। এর পর থেকে কয়েক মাস দেশে হামলা বা নাশকতা না-ঘটলেও, সম্প্রতি গোয়েন্দারা জানতে পারেন বড়দিন ও নববর্ষে ফের হামলা চালিয়ে অস্তিত্ব জাহিরের পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। শাসক দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের দিন কয়েক আগেই জানান, আপাতত গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও নতুন হামলার ছক কষছে জঙ্গিরা। তার পরই এ দিনের অভিযান। পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম এ দিন আশকোনার ঘটনাস্থলে অভিযান শুরুর আগে জানান, নব্য জেএমবি-র এক মাথা-সহ বেশ কয়েক জন কট্টর জঙ্গি ‘সূর্যভিলা’ নামে তিনতলা বাড়িটির এক তলায় লুকিয়ে রয়েছে। তাদের বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণের জন্য দেড় ঘণ্টা সময় দেওয়া হলেও জঙ্গিরা জানিয়ে দেয়, তাদের সঙ্গে আত্মঘাতী বাহিনীর সদস্যরা তো আছেই, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও মজুদ রয়েছে। আক্রমণ করলে তারা বাড়িটি উড়িয়ে দেবে। এর পরে তারা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে থাকে।

এর মধ্যেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জঙ্গি নেতা, সেনা বাহিনীর পলাতক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়িটিতে রয়েছে। বাংলাদেশ সময়ে সকাল ন’টা নাগাদ পুলিশ শীলার মাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। তিনি মাইকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানালে শীলা ও তৃষ্ণা ছেলেমেয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসে। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। এদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরও বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া চলতে থাকে। সাড়ে বারোটা নাগাদ দরজা খুলে মেয়ের হাত ধরে ওই মহিলা জঙ্গি বেরিয়ে এসে আত্মঘাতী হয়। তার সঙ্গে থাকা শিশুটি বিস্ফোরণে ছিটকে গেলেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়। পুলিশ জানায়, নিহত মহিলার স্বামীও এক জঙ্গি নেতা, তার নাম সুমন।

এর পরে ‘সোয়াট’ বাহিনী অস্ত্র উঁচিয়ে জঙ্গিদের আস্তানায় ঢুকে পড়ে দু’জনকে আটক করে। বছর ১৫-র এক কিশোর জঙ্গির দেহ ঘরেই পাওয়া যায়। তার নাম শহিদ কাদরি। ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াঁ জানান, এই কিশোরই বিভিন্ন নামে জঙ্গিদের কাছে পরিচিত ছিল। মেজর জাহিদ মারা যাওয়ার পরে তাকেই নব্য জেএমবি-র প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা।

এ দিন সন্ধ্যার পরে তল্লাশি স্থগিত রাখা হয়। জঙ্গি ডেরায় প্রচুর বিস্ফোরক আছে বলে আশঙ্কা। গ্যাসের গন্ধও বেরোচ্ছে। সে জন্য রবিবার দিনের আলোয় আবার তল্লাশি করা হবে।

Explosion Bangladesh Dhaka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy