Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Bangladesh News

দুই শিশুপুত্রকে কী ভাবে খুন, ঘাতক বাবার স্বীকারোক্তি শুনলে শিউরে উঠবেন

জন্মদাতা বাবা নিজে হাতে মারল দুই ছেলেকে। নৃশংস ভাবে। এক ছেলের বয়স ১১, অন্য জনের আট। শিউরে দেওয়া সেই কাণ্ডের বর্ণনা ঘাতক বাবা নিজের মুখে দিল থানায় বসে। বাংলাদেশের শ্রীহট্টে ওসমানিনগরের চিন্তামণি গ্রামের বাসিন্দারা সব জেনেশুনে বিস্ময়ে হতবাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:১৪
Share: Save:

জন্মদাতা বাবা নিজে হাতে মারল দুই ছেলেকে। নৃশংস ভাবে। এক ছেলের বয়স ১১, অন্য জনের আট। শিউরে দেওয়া সেই কাণ্ডের বর্ণনা ঘাতক বাবা নিজের মুখে দিল থানায় বসে। বাংলাদেশের শ্রীহট্টে ওসমানিনগরের চিন্তামণি গ্রামের বাসিন্দারা সব জেনেশুনে বিস্ময়ে হতবাক।
খুনের ঘটনার আগের দিন সুপারি গাছের গুঁড়ি কেটে ধারালো সুরকি তৈরি করছিল বাবা ছাতির মিয়া। পরিবারের অন্যরা জিজ্ঞেস করলে ছাতির মিয়া বলে- সুরকি দিয়ে মাছ ধরব। আর ওই সুরকি দিয়েই হাওরের নির্জন জায়গায় দুই ছেলে রুজেল ও মামুনকে খুন করে সে। কেন খুন করল দুই ছেলেকে? এখনও জবাব বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে খুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছে ছাতির।

পুলিশি জেরায় ছাতির মিয়া জানিয়েছে, গত সোমবার দুই ছেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে যায় সে। এগারো বছরের বড় ছেলে রুজেল মিয়াকে মাছ দিয়ে বাড়ি পাঠায়। আর এই সুযোগে হাওরের নির্জন জায়গায় সে আট বছরের মামুন মিয়াকে খুন করে। সুপারি গাছে গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা সুরকি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে। তার পর হাওরের ডোবায় লাশ ফেলে দেয়। ওদিকে বড় ছেলে রুজেল বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি মাছ দিয়ে আবার হাওরে চলে যায়। যাওয়ার সময় মাকে বলে, বাবা বলেছে তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে। নয়ত মারধর করবে। রুজেল ফিরে যাওয়ার পর ছাতির মিয়া সুরকি দিয়ে তার মাথার পিছন দিকে পরপর আঘাত করে। এ কারণে রুজেলের মাথার পেছনের অংশ থেঁতলে যায়। এর পর রুজেলের লাশও ডোবার মধ্যে ফেলে সে পালিয়ে যায়।

খুনের পর সে গ্রামের কালীমন্দিরের পাশের নির্জন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে ছাতির। এবং সেখানেই দু’দিন কাটায়। কোনও খাবারদাবর ছাড়াই।
খিদের তাড়নাতেই হোক বা অন্য কোনও কারণে বুধবার ভোরে ছাতির মিয়া ওই জঙ্গল থেকে রাস্তায় বেরোয়। স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়তেই আবার পালিয়ে যায় জঙ্গলে। ওখানে গিয়ে একটি নির্জন জায়গায় সে শুয়ে পড়ে। পরে গ্রামের লোকজন ওখান থেকেই তাকে আটক করে। ছাতির মিয়াকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। এরপর ওসমানিনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে ছাতির মিয়াকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। ছাতির মিয়াকে নিয়ে আসা হয় শ্রীহট্টের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। ওখানে ছাতির মিয়াকে সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মহঃ মনিরুজ্জামান।
সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রীহট্টের পুলিশ সুপার জানান, “ছাতির মিয়া তার দুই সন্তান রুজেল ও মামুনকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। সুপারি গাছের গুঁড়ি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ধারালো সুরকি দিয়ে সে এক এক করে ধরে দুই পুত্রকে হত্যা করেছে। কী কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটি এখনও জানা যায়নি।”
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পর তিনি এবং জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্তারা ঘটনাস্থল ও চিন্তামনি গ্রামে গিয়েছেন। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাথমিক ধারণা, স্ত্রী নুরমণির সঙ্গে বিরোধ ছিল ছাতির মিয়ার। সে স্ত্রীকে সন্দেহ করতো। আর এই সন্দেহের কারণেই বিরোধ। এর জেরে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিল নুরমণি। স্বামীর বাড়ি ফিরেছেন দিন ২০ আগে। ফিরে আসার পর থেকে ছাতির মিয়া স্ত্রীর হাতের রান্না খাননি বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন।

ধরা পড়ার পর ছাতির মিয়া।—নিজস্ব চিত্র

পুলিশ সুপার বলেন, এখনও মামলা হয়নি। শোকাহত পরিবারের সদস্যরা দ্রুত এজাহার দাখিল করবেন। এর পর মামলায় ছাতির মিয়াকে আদালতে হাজির করা হবে। আদালতে সে জবানবন্দি দিতে চাইলে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনের পর ছাতির মিয়াকে ওসমানিনগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছাতির মিয়াকে রেখে পুলিশ আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা।
এদিকে পারিবারিক সূত্র খবর, নুরমণি ও ছাতির মিয়ার বিয়ের পর থেকে বেশ ভালোই চলছিল সংসার। পেশায় কৃষিকাজ করা ছাতির মিয়া কয়েক বছর ধরে স্ত্রীকে সন্দেহ শুরু করে। স্ত্রীর পরকীয়া রয়েছে বলে তার ধারণা। আর এই ধারণা থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। স্ত্রীকে মারধরও করত ছাতির মিয়া। বটি দিয়ে বউকে মারতেও দৌড়েছে এক বার। স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন নুরমণি। চলে যান বাপের বাড়ি। এর পর সালিশির মাধ্যমে নুরমণিকে নিয়ে আসেন ছাতির।

আরও পড়ুন: ৬৮ বছর পর ভোটের আনন্দে ভাসছে ছিটমহলবাসী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bangladesh Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE