Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

ছেলে খুন হলেও চোখে জল নেই, নাতিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় মারজানের মা

বীতশোক জননী। পুত্রশোকেও শান্ত। সান্ত্বনা দিতেও ম্রিয়মান স্বজনরা। এ কেমন মা। ছেলে হারিয়েও হাহাকার নেই। মানুষ না পাথর। কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে কেবল যন্ত্রণার ছাপ।

মারজানের মা সালমা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

মারজানের মা সালমা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ১৬:৩৩
Share: Save:

বীতশোক জননী। পুত্রশোকেও শান্ত। সান্ত্বনা দিতেও ম্রিয়মান স্বজনরা। এ কেমন মা। ছেলে হারিয়েও হাহাকার নেই। মানুষ না পাথর। কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে কেবল যন্ত্রণার ছাপ। পাবনা সদর উপজেলার আফুরিয়া গ্রামের সালমা খাতুন, হারিয়েছেন পুত্র, নব্য জেএমবি নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজানকে। তাঁর সাফ কথা, “আমার ছেলে অপরাধ করসে, তাই যা হওয়ার হইসে। ছেলের বিচার হইসে, খুশি হইসি। দেশের ক্ষতি করসে আমার ছেলে। আমি দুঃখী ছেলের সন্তানকে লইয়া।”

১০ ভাইবোনের মধ্যে মারজান ছিল দ্বিতীয়। পড়ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। ভাল আরবি জানা বাঙালি কম। পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে মারজানের ভাষা জ্ঞান কাজে লাগত সন্ত্রাসীদের। গত বছর জানুয়ারিতে গ্রামের বাড়িতে এসে খালাত বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করে চট্টগ্রামে চলে যায় মারজান। তার পরই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে জঙ্গি ডেরায় হানা দিয়ে পুলিশ ধরে মারজানের স্ত্রী আফরিন আক্তার প্রিয়তি ওরফে ফতেমা ফেরদৌসীকে। তার বয়স মাত্র ২১। গ্রেফতারের সময় ছিল সন্তানসম্ভবা। ২০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

প্রিয়তি আর তার মেয়ে আপাতত পুলিশ হেফাজতে। স্বামী মারজানের নির্দেশিত পথেই হাঁটছিল প্রিয়তি। অ্যাকশনে সড়গড় হয়েছিল অল্প দিনে। মহিলা জঙ্গি হিসেবে হামলা চালাতে প্রস্তুত ছিল। বন্দুক চালানো শিখেছিল মারজানের কাছেই। বিয়ের পর প্রিয়তিও বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। পরিবার থেকে দূরত্ব রেখে জঙ্গিপনায় অভ্যস্ত হচ্ছিল। তার মত, পথকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ ছিল না। মনে করা হচ্ছে, বিয়ের আগেই মারজান তাকে সন্ত্রাসে দীক্ষা দিয়েছিল। সেটাই যে একমাত্র মুক্তির পথ সেটা বুঝিয়ে ছেড়েছিল। বয়স কম। মারজান যা বুঝিয়েছে তাই বুঝেছে। পুলিশের কাছে ভুল কবুল করেছে প্রিয়তি। সাধারণ জীবনে ফিরতে ব্যাকুল। একা একা জীবন কাটবে কী করে সেই চিন্তাটাও রয়েছে। কে সাহারা দেবে। মেয়েটিরও বা কী হবে। কুঁড়ির মতো নয়নমণি ফুল হয়ে ফুটতে পারবে তো। সেই আর্তি ফুটেছে মারজানের মা সালমার কণ্ঠেও। তিনি জানিয়েছেন, “আমার বাড়ির বউটা জেলের ভিতর রইসে। দেখার মানুষ কেউ নাই।”

একটা সংসার নয়ছয় করার দায় কেবল কী মারজানের? না তাকে যারা এ পথে টেনে এনেছে তাদের। ১ জুলাই ঢাকার গুলশনে জঙ্গিরা যে রক্তস্রোত বইয়েছে তাতে নেপথ্যে নেতৃত্বে ছিল মারজানই। মৃত্যু যে মৃত্যুকে ডেকে আনে সেই সহজ সত্যিটা মারজান মানতে চায়নি। ঢাকার মহম্মদপুরের বেড়িবাঁধে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষমেষ এঁটে উঠতে পারেনি মারজান। অল্প সময়েই মৃত্যুর কোলে ঢলেছে। একই সঙ্গে নিহত সঙ্গি সাদ্দাম। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার দুর্গম বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ এলাকায়। ছয় ছেলেমেয়ের পঞ্চম সাদ্দাম ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়ত। বাড়ি থেকেই কলেজে যাতায়াত করত। বিয়ে করে ফারজানকে। পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর ফারজানকে নিয়ে তার বাবা-মা কোথায় চলে যান জানে না তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সাদ্দামের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা ছিল। একটি জাপানি নাগরিক হত্যা, অন্যটি কার্ডনিয়ায় মাজারের খাদেম হত্যা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকায় সাদ্দামের শ্বশুরবাড়ি। সাদ্দাম সেখানে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বার। শেষরক্ষা হয়নি। ঘুরেফিরে সেই এক প্রশ্ন, সাদ্দামের সন্তান আলোর রাস্তায় হাঁটার সুযোগ পাবে তো।

আরও পড়ুন: রাজধানী ঢাকা থেকে জেএমবি-র ১০ জঙ্গি ধৃত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Bangladesh Cafe Attack Marzan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE