Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International

প্রাণভিক্ষা চাইছেন না ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মির কাসেম আলি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছেন না। কাশিমপুর কারাগারের সুপার প্রশান্ত কুমার শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:৪৩
Share: Save:

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা মির কাসেম আলি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছেন না। কাশিমপুর কারাগারের সুপার প্রশান্ত কুমার শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

প্রশান্ত কুমার জানান, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা এ নিয়ে দুপুরে মির কাসেমকে তারা প্রশ্ন করেছিলেন। মির কাসেম সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। তারা মির কাসেমের এই বক্তব্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।

মির কাসেম রাস্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় তাঁর প্রাণদণ্ড বাস্তবায়নে আর কোনও বাধা রইল না।

গত মঙ্গলবার ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ নামে পরিচিত জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা মির কাসেম আলির ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ আপিল বেঞ্চ। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত মার্চেই তাঁকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এর পরে অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে সাত দিন সময় দেওয়া হয় মির কাসেমকে। তবে ফাঁসির রায় শোনার পরে জামাতের অধিকাংশ নেতাই অপরাধ স্বীকার করতে রাজি হননি। একই পথে গেলেন মির কাশেমও।

সামান্য এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান জামাতের এই নেতার সম্পদের পরিমাণ এখন কম করে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাঙ্ক, ইবনে সিনা, দিগন্ত টেলিভিশন, নয়া দিগন্ত সংবাদপত্র-সহ অন্তত একশো বাণিজ্য সংস্থার মালিক মির কাসেম আলি। যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি মার্কিন ল’ফার্মকে তিনি ২৭৫ কোটি টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা অঞ্চলের ডালিম হোটেলে মির কাসেম আলির বাহিনী দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন করে খুন করেছে অজস্র মুক্তিকামী মানুষ ও সংখ্যালঘুকে। এই হোটেলে নির্যাতিতদের সাক্ষ্যই দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পরে ফাঁসির দড়ির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল পাক সেনাদের তৈরি আল বদর বাহিনীর কম্যান্ডার মির কাসেম আলিকে।

পাকিস্তান আমলে চন্দ্রমোহন নাথের তৈরি ‘মহামায়া ভবন’টি দখল করে ডালিম হোটেল পত্তন করেছিলেন জামাতের তত্কালীন ছাত্র নেতা মির কাসেম আলি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে এই হোটেলকেই নির্যাতন ও মৃত্যুর কারখানা হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে জানিয়েছেন, হুডখোলা জিপে চড়ে চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াত কাসেমের সশস্ত্র বাহিনী। তালিকা ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে এনে নগ্ন করে নির্যাতন করা হতো। শেষে তাদের খুন করে দেহ ফেলে দেওয়া হতো জলা-জঙ্গলে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করার ঠিক আগে কাসেম ও তাঁর বাহিনী পালিয়ে গেলে স্থানীয় মানুষ হোটেলটি থেকে বন্দিদের উদ্ধার করেন। চট্টগ্রামে আল শামস ও রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বেও ছিলেন এই কাসেম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে গা-ঢাকা দেওয়া মির কাসেম ১৯৭৭-এ ফের প্রকাশ্যে আসেন সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়। সৌদি দূতাবাসে চাকরি শুরুর পরে একের পর এক এনজিও খুলে কোটি কোটি ডলার বিদেশি সাহায্য তিনি কামাতে থাকেন বলে অভিযোগ। ১৯৮৩ সালে এরশাদের আমলে ‘ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ’ পত্তন করে শিল্পপতি হয়ে ওঠেন। চিকিৎসা ব্যবসায় নেমে গড়ে তোলেন ইবনে সিনা ট্রাস্ট। গড়ে তোলেন বাংলাদেশের সব চেয়ে আধুনিক ছাপাখানা। একই সঙ্গে জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হন মির কাসেম আলি।

জামাতে ইসলামির বিপুল অর্থের জোগানদার ছিলেন এই নেতা। শুনানি চলার সময়ে দেশের অর্থনীতিতে মির কাসেমের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শাস্তি কমানোর আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার বিরোধিতা করেন।

আরও পড়ুন:
ফাঁসি বহাল ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ মির কাসেমের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mir Quasem Ali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE