Advertisement
E-Paper

ত্রাণেও দুর্গা সহায়, অসুস্থ হলেও হাঁটছে রোহিঙ্গারা

মায়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশের এই ছবি দেখলে মনে হতে পারে যুদ্ধ বা ভূমিকম্পের অভিঘাতে নিরাশ্রয়রা যেন অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০২
আশ্রয়হীন। ছবি: রয়টার্স।

আশ্রয়হীন। ছবি: রয়টার্স।

রাস্তার দু’ধারে ছোট ছোট টিলা। আর তার গা জুড়ে সারি সারি প্লাস্টিকের ছাউনি।

মায়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশের এই ছবি দেখলে মনে হতে পারে যুদ্ধ বা ভূমিকম্পের অভিঘাতে নিরাশ্রয়রা যেন অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। এঁরা পড়শি মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। প্রায় সকলেই নারী ও শিশু।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ। শনিবার থেকে শরণার্থীর ঢল কমেছে। কিন্তু রবিবার দুপুরে পালংখালি শিবিরে গিয়ে কয়েকশো নতুন শরণার্থীর দেখা মিলল, যাঁরা শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে এসেছেন বলে জানালেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা।

খালি পায়ে দিনের পর দিন হাঁটতে হাঁটতে শরীরে কাটাছেঁড়া, জ্বর-সর্দি আর ডায়ারিয়া নিয়ে রোজই বিভিন্ন স্বাস্থ্য-শিবিরের দ্বারস্থ হচ্ছেন শ’য়ে শ’য়ে মহিলা-শিশু। পালংখালিতে এ দিন হাম আক্রান্ত শিশুও চিহ্নিত হয়েছে। হাম ঠেকাতে টিকাকরণে নেমেছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা।

আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা হিংসায় অস্ত্র ধর্ষণও

বালুখালি-১, বালুখালি, কতুপালং, থাইংখালি এবং পালংখালির শিবিরগুলিতে ত্রাণ বিলি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে মিলছে পরিবার পিছু ২৫ কিলোগ্রাম চাল। এই কর্মসূচির এশিয়া মহাদেশের কর্তা সিলকে বুহর বলেন, ‘‘শরণার্থী মহিলা-শিশুরা গুরুতর অপুষ্টির শিকার। আমরা পুষ্টিকর খাবার ও বিস্কুট দিচ্ছি তাঁদের।’’ কতুপালং শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, মহিলারা লম্বা লাইন দিয়েছেন চাল নিতে।

বিভিন্ন শিবিরে বাঁশ-প্লাস্টিক দিয়ে অস্থায়ী তাঁবুতে শরণার্থীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ শিবিরেই পরিস্রুত পানীয় জল এবং পর্যাপ্ত শৌচাগারের অভাব। সরকারের পাশে কাজ করছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। স্বেচ্ছাসেবীরা জানালেন, গত এক সপ্তাহে অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল হয়েছে। খোলা রাস্তার ধারে রোহিঙ্গারা যে ভাবে থাকছিলেন, পরিবেশ তাতে ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। তাঁদের এখন বিভিন্ন শিবিরে রাখা হয়েছে। বালুখালি ও বালুখালি-১ শিবিরে শৌচাগারের পাশাপাশি টিউবওয়েল বসাচ্ছে বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জনকৌশল প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পানীয় জলের গাড়ি পাঠানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে ভারতও। পাঠাচ্ছে আরও। ত্রাণ এসেছে আরও বেশ কিছু দেশ থেকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পুজো কমিটিও ব্যয় কাটছাঁট করে ত্রাণ পাঠাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের জন্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ‘‘দেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি ভাত-কাপড়ে বাঁচতে পারেন, কয়েক লক্ষ শরণার্থীকেও আমরা ভাত জোগাতে পারব।’’ শরণার্থীদের সুস্থ রাখার যে লড়াই চালাচ্ছে সরকার, বাংলাদেশের মানুষও তাতে সামিল হয়েছেন ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে।

Rohingya কক্সবাজার Cox Bazar মায়ানমার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy