কী পরিমাণ জাল নোট পাচারের দূরপ্রসারী ছক কাটতে পারলে তবে পাতালঘর বানাতে হয়!
জাল নোট মজুত করে রাখার জন্য আস্ত একটা পাতালঘর আবিষ্কারের পরে ব্যাপারটা বাস্তব না সিনেমা, প্রথমে বুঝতেই পারছিলেন না গোয়েন্দা অফিসারেরা। একতলা বাড়ির প্রশস্ত বৈঠকখানা ঘরের মেঝেতে পাতা কার্পেট। তবে সেই ঘরে চেয়ার মাত্র দু’টি। কার্পেট সরাতেই ঘরের মাঝখানে একটি ঢাকনা। সেটা তুলতেই দেখা গেল, সিঁড়ি নেমে গিয়েছে। ১০-১২ ধাপ নামার পরে আট ফুট বাই আট ফুটের একটা ঘর। ওই ঘরেই জাল নোট রাখা হতো থরে থরে সাজিয়ে।
জাল নোট মজুত রাখার ওই পাতালঘরটি রয়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার সাহাপাড়ায়। কিছু দিন আগে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসারেরা জাল নোট মজুত রাখার ওই পাতালঘরে ঢুকেছিলেন।
এনআইএ জানাচ্ছে, যে-বাড়িতে ওই পাতালঘর, তার মালিক হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিল শেখ। জাল নোটের কারবার সংক্রান্ত একটি মামলায় গত ২৮ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে এনআইএ। ২০১৫-র ১২ মে কালিয়াচকের সুজাপুর গ্রামে হাজার ও পাঁচশোর জাল নোটে ন’লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। সেগুলো হাবিল পাঠিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। কলকাতার এনআইএ আদালতে দেওয়া চার্জশিটে হাবিলের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে হাবিলকে এখনও হাতে পায়নি এনআইএ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার পুলিশ হাবিলকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে। কলকাতা থেকে এনআইএ-র অফিসারেরা বাংলাদেশে গিয়ে হাবিলকে জেরা করেন। তখনই পাতালঘরের সন্ধান পাওয়া যায়। হাবিলকে নিজেদের হেফাজতে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে আবেদন করেছে এনআইএ।
আরও খবর
রোজ ভ্যালি থেকে নেওয়া টাকা কি দলেই ঢালতেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়?
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, একদা সাহাপাড়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হাবিল তাঁর ভগ্নিপতির সূত্রে জাল নোটের ব্যবসার সংস্পর্শে আসেন। ব্যবসা জমে যায় অচিরেই। এতটাই জমে যায় যে, আট বছর আগে তৈরি হয় পাতালঘর।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘হাবিল শেখের কথা আমরা জানতে পারি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু সে যে মাটির তলার ঘরে জাল নোট মজুত করে রাখে, সেটা কল্পনা করা যায়নি।’’ মালদহের দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে হাবিল মাসে গড়ে এক কোটি টাকার জাল নোট পাচার করত বলে গোয়েন্দা অফিসারদের দাবি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সাহাপাড়ার ওই বাড়ি থেকে মালদহের কালিয়াচক এক ঘণ্টারও কম রাস্তা। সেখান থেকে ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহার করে মোবাইলে কলকাতায় কথা বলা যায় অনায়াসে। তদন্তে জানা গিয়েছে, দুবাই থেকে সমুদ্রপথে কন্টেনারে ঢাকায় পাঠানো কোটি কোটি টাকার জাল নোট চট্টগ্রামে গিয়ে সংগ্রহ করে নিত হাবিলের লোকজন। তারা সেই নোট পৌঁছে দিত ঢাকায়। সেখান থেকে দফায় দফায় তা পৌঁছত সাহাপুরের ওই পাতালঘরে। আর সেখান থেকে মালদহের কালিয়াচকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy