Advertisement
E-Paper

সঙ্ঘাতটা দুই চেতনার, তবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা প্রস্তুত

চেতনাটা তো মুক্তিযুদ্ধের। চেতনাটা ভাষা অন্ত প্রাণ একটা জাতির। শুধু ভাষার জন্য সর্বস্ব বাজি রেখে একটা স্বাধীন দেশ ছিনিয়ে আনা যায়— এমনই বিরল কৃতিত্বে ঋদ্ধ বাংলাদেশের চেতনাটা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

চেতনাটা তো মুক্তিযুদ্ধের। চেতনাটা ভাষা অন্ত প্রাণ একটা জাতির। শুধু ভাষার জন্য সর্বস্ব বাজি রেখে একটা স্বাধীন দেশ ছিনিয়ে আনা যায়— এমনই বিরল কৃতিত্বে ঋদ্ধ বাংলাদেশের চেতনাটা।

সেই বাংলাদেশে বাঙালি আজ বাঙালিরই রক্তপিপাসু! ধর্মবিশ্বাসটাই প্রধান বিবেচ্য হয়ে উঠল কয়েকজন বা অনেক জনের কাছে!

শুরু হয়েছিল ব্লগার, মুক্তমনা, প্রগতিশীল, চিন্তাবিদ, নাস্তিকদের হত্যা দিয়ে। বর্বর, মধ্যযুগীয় মানসিকতাটা ক্রমে আরও নির্দিষ্ট পরিসরে কেন্দ্রীভূত করল মানবতা বিরোধী আক্রোশকে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ শুরু হল। সে সব রুখতে বাংলাদেশ জুড়ে অভিযান শুরু হতেই ঢাকা আর কিশোরগঞ্জে হিংস্র রোষ নিয়ে আছড়ে পড়ল সন্ত্রাস। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ এ বার উঠে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবাদে, প্রতিরোধে। বহু স্বপ্নের রঙে রাঙানো সাধের জন্মভূমিকে এই ভয়ঙ্কর পথে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কিছুতেই সফল হতে দেওয়া যাবে না, সংকল্পে আজ দৃঢ় দেশটা। তবু থামছে না সন্ত্রাস আর অন্ধকারের কারবারিরা। ঢাকা আর কিশোরগঞ্জে সৃষ্ট ক্ষতস্থানের শুশ্রূষায় যখন মগ্ন বাঙালি জাতি, তখন ফের জেলায় জেলায় পুরোহিত আর সেবায়েতকে খুনের হুমকি। ফের আতঙ্কের জাল বোনা শুরু।

দ্বন্দ্বটা আসলে পরস্পর বিরোধী দুই চেতনার মধ্যে। এ সঙ্ঘাত বাংলাদেশে নতুন নয়। মুক্তিযুদ্ধের মতো অমোঘ সন্ধিক্ষণেও রাজাকাররা পূর্ববঙ্গের মাটিতে ছিল। উগ্র এবং বিপথগামী এক কট্টরবাদ থেকে জন্ম নেওয়া মানসিকতাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নগুলোর বিপরীতে দাঁড় করিয়েছিল বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওই অংশকে। স্বাধীনতার পর থেকে সেই উগ্রতাকে পিছনে ফেলে রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নিরন্তর চালিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। বাঙালির স্বাধীনতা, বাঙালির সার্বভৌমত্ব এবং বাঙালির একান্ত নিজস্ব অস্তিত্বের প্রতীক হল বাংলাদেশ— এই বার্তাই চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে পঞ্চগড় থেকে পটুয়াখালি, রাজশাহি থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত। ১৯৭১-এ সংগ্রামের দিনগুলোতে ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে মেতে উল্লাস করছিল যারা, তাদের প্রত্যেককে বিচারের কাঠগড়ায় টেনে এনেছেন হাসিনা। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেই কুখ্যাতদের অনেককেই। সোমবারও বাংলাদেশের আদালত তেমনই তিন জনকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অথচ সেই একই তারিখে দেশের তিন জেলায় পুরোহিত, সেবায়েতদের খুনের হুমকিও শুনতে হয়েছে।

আসলে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু লড়াইটা এখনও জারি। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা বিরল পথে হেঁটে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়েছে, যে চেতনা বাংলাদেশকে বিশ্বের ইতিহাসে বিরল স্থানে বসিয়েছে, সেই চেতনার হয়েই আজও লড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হয়তো আরও অনেক লড়াই বাকি। কাঙ্খিত সকালটা দেখতে হয়তো অতিক্রম করতে হবে আরও অনেকটা পথ। কিন্তু অঙ্গীকার বলছে, প্রত্যয় বলছে, সে পথে কেউ একা নয়। মাথা তুলছে মানব-শৃঙ্খল। হাতে হাত পদ্মা-মেঘনা-যমুনার।

news letter anjan bandopadhyay murder threat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy