Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উরি থেকে সার্ক, কী বলছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা

ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে যোগ দেবে না ঢাকা। এই সিদ্ধান্তে কী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের? ভারতে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকেই বা তাঁরা কী চোখে দেখছেন? এ সব নিয়েই আনন্দবাজার ডিজিটাল মুখোমুখি হয়েছিল কয়েক জন বিশিষ্ট নাগরিকের। কী বললেন তাঁরা?

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে যোগ দেবে না ঢাকা।

এই সিদ্ধান্তে কী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের? ভারতে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকেই বা তাঁরা কী চোখে দেখছেন?

এ সব নিয়েই আনন্দবাজার ডিজিটাল মুখোমুখি হয়েছিল কয়েক জন বিশিষ্ট নাগরিকের। কী বললেন তাঁরা?

আরও খবর

আজ রাতেই পাল্টা হানার শঙ্কা, তৈরি ভারত

কী ভাবে হল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? দেখুন বিশদে

মন্জুরুল আহসান বুলবুল
সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন

সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে অন্য কোনও দেশের কারণে বাংলাদেশ সরে এসেছে, এমনটা নয়। ওই সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব অনেক কারণ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, এই পাকিস্তানই কমনওয়েলথের সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলেছে। বাংলাদেশ সব সময়েই আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে সরব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য যখন আহ্বান জানিয়েছেন, তখন পাকিস্তান তাত সাড়া দেয়নি। অন্য দিকে, উরিতে পাকিস্তানের মদতে যা হয়েছে তাতে ও-দেশে সন্ত্রাস লালনের বিষয়টিই আবারও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এক দিকে সন্ত্রাস লালন এবং রফতানি, অন্য দিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলা— এ হতে পারে না।

সীমান্তে সন্ত্রাস দমনে ভারত যে অবস্থান নিয়েছে, সেটিই সঠিক। ভারত প্রতিটি তথ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের কোথায় কোথায় জঙ্গিদের লালনপালন, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উরির ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক সন্ত্রাসী হামলা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙতে এটি করা হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশের সেনা ঘাঁটিতে হামলার জন্য সাফাই না গেয়ে পাকিস্তানের লজ্জিত হওয়াই উচিত।

মোহম্মদ জমির
কূটনীতিক ও প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার

দক্ষিণ এশিয়ার সবাই যাতে একসঙ্গে এগোয়, সেটা দেখাই সার্কের মূল লক্ষ্য।

কিন্তু পাকিস্তানের যা ভূমিকা, তাতে সেটা কি সম্ভব? পঠানকোট বা উরির ঘটনা আমরা দেখেছি। জৈশ-ই-মহম্মদ বা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা কী, তা সকলের জানা। পাকিস্তানের এই সব তৎপরতার যে সকল তথ্য ভারত হাতে পেয়েছে, সেগুলো তাদের উচিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সিকিউরিটি কাউন্সিলে উত্থাপন করা।

অন্য দিকে, ভারতের আকাশে পাক বিমান উড়তে দেওয়া আমার কাছে ঝুঁকিপুর্ণ মনে হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতের বিষয়টি ভাবা দরকার।

মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রশিদ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক

প্রতিটি দেশের নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে। পাক সামরিক বাহিনীর পোষা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভারতের সারজিক্যাল অপারেশন তাদের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানের পোষা সন্ত্রাসের উৎপাটন জরুরি।

পাকিস্তান সন্ত্রাসকে নিজের স্বার্থ হাসিলের সস্তা হাতিয়ার হিসেবে অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করছে। সন্ত্রাস নির্মূলে বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানের ব্যর্থতাই ভারতকে অভিযান চালাতে বাধ্য করেছে। সুচারু ভাবে পরিচালিত সারজিক্যাল অভিযানে ভারত কৌশলগত সক্ষমতা দেখিয়েছে।

যুদ্ধের পরিবর্তে পাকিস্তান নিজ ভূমিকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শান্তির পথে হাঁটবে বলে মনে করি। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের নীতি থেকে পাকিস্তানকে সরে আসতে এই অভিযান যথাযথ ভূমিকা নেবে আশা করি। বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও জাতীয় স্বার্থে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস রফতানি থেকে বিরত করতে ভারতের পাশে থাকবে।

পাক জনগণ যুদ্ধের ভয়াবহতা বিবেচনা করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত ভাবে দাঁড়াবে, এটাই আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা।

অধ্যাপক আমেনা মহসিন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের অবস্থানটি অবশ্যই আমাদের নিজস্ব।

পাকিস্তান ধারাবাহিক ভাবে বাংলাদেশের জন্মের অস্তিত্বে আঘাত করে চলেছে। বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে পাক পার্লামেন্টে কেন কথা হবে? ওটা বলেই তারা নিজেদের অপরাধ প্রমাণ করেছে।

কাশ্মীর প্রশ্নে দুটো বিষয় রয়েছে। এক, সেখানে সমস্যা রয়েছে এটি মানতে হবে। কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মানবাধিকার কর্মীদেরও বক্তব্য রয়েছে। দুই, পাকিস্তান তার ভূমি জঙ্গিদের ব্যাবহার করতে দিয়েছে, ভারতের এই অভিযোগের জবাব পরিষ্কার ভাবে দিতে পারেনি তারা। পঠানকোট ও মুম্বইয়ের হামলাকারীদের বিষয়ে ভারতের অভিযোগে এটা তো পরিষ্কার ওই ঘটনাগুলিতে পাক যোগ ছিল।

পাকিস্তান যদি তার ভূমি জঙ্গিদের ব্যাবহার করতে না দেয় এবং তারা যদি অঙ্গীকার করে এ সব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবে, তবেই স্বস্তি আসতে পারে।

মনে রাখতে হবে, দু’টি দেশের হাতেই কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
প্রবীণ সাংবাদিক, ডিরেক্টর, নিউজ একাত্তর টেলিভিশন

সন্ত্রাসের শিকড় উপরে ফেলতে হবে সব জায়গা থেকে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাতে হয়। পাকিস্তান এর মধ্যেই ওই অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গেই তার সদ্ভাব নেই। ভারতে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তানের একক কর্মকাণ্ডের কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বানচাল হয়ে গিয়েছে। তার পরেও আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই।

আশা করব, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ আলোচনার টেবিলে বসবে। শান্তির পথ খুঁজবে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও কট্টরপন্থীদের রাজনৈতিক প্রভাবকে কমিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তানের বিদগ্ধ মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব সে দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে কোনও ভিত্তি না পাওয়ার কারণেই সেখানকার বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতি রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে আসতে পারছে না।

সুভাষ সিংহরায়
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদের পাশাপাশি নীতিগত কারণে এ বার সার্ক সম্মেলনে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে নাক গলানো পাকিস্তানের পুরনো অভ্যাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে পাকিস্তান নাক গলিয়ে বিরোধিতা করে। বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়ানোর চেষ্টাও করে তারা প্রতিনিয়ত। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্যে তাদের নাক গলানো কোনও ভাবেই আইনসম্মত নয়। তাদের হস্তক্ষেপ মেনে নেয়নি বাংলাদেশের জনগণও। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন শোভা পায় না।

এ বারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ-সহ কয়েকটি দেশের বয়কটের এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বেশ প্রভাব ফেলবে।

মোবাশ্বের হোসেন
প্রাক্তন সভাপতি, কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্ট

ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি পাকিস্তান রাষ্ট্রের এখনও পর্যন্ত সরকারগুলির প্রায় প্রতিটিরই জন্ম সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। শুরু থেকেই প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে সে দেশেরই সন্ত্রাসী সশস্ত্রবাহিনী। সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৭১-এ গণতান্ত্রিক রায়কে পদদলিত করে সন্ত্রাসী সরকার পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের উপর বিশ্বের ভয়ঙ্করতম নগ্ন আক্রমণ চালায়। পরিণতিতে বিশ্ব মানচিত্রে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় এক প্রতিবাদী দেশ— বাংলাদেশ।

সন্ত্রাসী পাকিস্তান সরকার এখনও সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে নিজ দেশের বালুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আপামর জনগণের উপর।

যে দেশের সরকার জন্ম থেকেই সন্ত্রাসী, সেই পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়স্থল হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এ ক্ষেত্রে তারা সারা বিশ্বে বিশেষ ভাবে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ন’মাসের যুদ্ধে পরাজিত আত্মসমর্পনকারী সেই পাকিস্তানে ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্মেলন’-এ যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের সিদ্ধান্তটি সময় উপযোগী ও অভিনন্দনযোগ্য।

বাংলাদেশে ফাঁসির কাঠে ঝোলানো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে পাকিস্তান সংসদের ‘কান্না’ প্রমাণ করে এ দেশের আন্তর্জাতিক বিচারের সচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানাতেই পারি, তাদের দোসরদের শনাক্ত করিয়ে দেওয়ার জন্য!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SAARC Bangladesh SAARC summit boycott
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE