Advertisement
E-Paper

একের পর এক অভিযানে স্বস্তি মিলেছিল, তবে ফের শঙ্কার পরিবেশ বাংলাদেশে

একের পর এক ব্লগার, পুরোহিত, পীর, যাজক, বিদেশি নাগরিক হত্যার পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ছিল ঢাকার গুলশনের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা।

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০০:০০

একের পর এক ব্লগার, পুরোহিত, পীর, যাজক, বিদেশি নাগরিক হত্যার পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ছিল ঢাকার গুলশনের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা। গত বছরের ২ জুলাই সেই হামলায় বিভিন্ন দেশের নাগরিক-সহ ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। হামলাকারী ৬ জঙ্গি পরে কমান্ডো অভিযানে মারা যায়। গুলশন হামলার পরে গত ৭ জুলাই ইদের দিন সকালে কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের উপর বোমা হামলা এবং গুলি চালায় জঙ্গিরা। হামলায় পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল হক এবং আনছারুল নিহত হন। জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গুলিযুদ্ধের সময় নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঝর্না রানি ভৌমিক। পুলিশের গুলিতে হামলাকারী নব্য জেএমবির সদস্য আবির নিহত হয়।

এর পরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সাধারণ নাগরিকদের একাংশ যেমন পথে নেমে এসেছিলেন, তেমনই প্রশাসনিক সাফল্যও মিলেছিল। এক দিনে ৫০ লাখ মানুষ যেমন পথে নেমে এসেছিলেন, তেমনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুঁড়িয়ে তছনছ করে দেয় একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি। সাধারণ মানুষের মনে ফিরে এসেছিল শান্তি।

গত বছরেরই ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের জাহাজ বিল্ডিং নামে একটি বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ অভিযান চালায় পুলিশ। এক ঘণ্টার সেই অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। গত ২৭ অগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে নিহত হয় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মূল হোতা তামিম চৌধুরী-সহ নব্য জেএমবি-র সদস্য ইকবাল ও মানিক। তার পরেই গত ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরের একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নব্য জেএমবি-র সামরিক কমান্ডার মেজর মুরাদ বা জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে অভিযানের সময়ে নব্য জেএমবি-র সক্রিয় সদস্য তনভীর কাদেরি বা শমসেদ ওরফে আবদুল করিম আত্মহত্যা করেন। এখান থেকে তিন নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮ অক্টোবর গাজিপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায় এই অপারেশন চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘স্পেইট-৮’ অভিযানে নব্য জেএমবি-র ঢাকা জেলার কমান্ডার আকাশ ওরফে জাহাঙ্গির-সহ নিহত হয় ১২ জঙ্গি। ২৩ ডিসেম্বর ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামে ১৬ ঘণ্টার অভিযানে নিহত হয় দুই জঙ্গি। এখানে নারী জঙ্গি শাকিরা আত্মঘাতী হামলায় ও আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তনভির কাদেরীর সন্তান আফিফ কাদেরী নিহত হন।

বাংলাদেশের জঙ্গিরা বেশ কিছু দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে ছিল। সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়, দেশে জঙ্গি হানা এ বার বন্ধ করা গেল। একের পর এক আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় সে ধারণা যখন বেশ স্থায়ী হওয়ার পথে, তখনই দেখা যাচ্ছে উল্টো কিছু ঘটনা। গত ৬ মার্চে হরকাতুল জিহাদ নেতা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়ার সময়ে তাদের ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানে হামলা হয়।

আরও পড়ুন: লন্ডনের খুনি একা ছিল না, দাবি পুলিশের

কুমিল্লা জেলায় যাত্রিবাহী বাসে পুলিশ তল্লাশি চালায়। সেই সময় বোমা ছুড়ে ধরা পড়ে নব্য জেএমবি-র দুই জঙ্গি। সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদের একটি বাড়ি থেকে বিস্ফোরক-সহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয় ১৫ মার্চ।

১৯ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পরে প্রেমতলার একটি বাড়িতে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। এখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারী-সহ চার জঙ্গি নিহত হয়। পাওয়া যায় বোমায় ক্ষতবিক্ষত শিশুর লাশ।

১৭ মার্চে শুক্রবার নমাজের সময় আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ে শরীরে বাঁধা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় এক জঙ্গি। পরের দিন ১৮ মার্চ ভোরে মোটরসাইকেল নিয়ে ভোরে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’য় র‌্যাবের গুলিতে নিহত হয় এক ব্যক্তি। সে বেপরোয়া ভাবে আসার সময়ে র‌্যাবের সন্দেহ হলে তারা গুলি চালায়।

সর্বশেষ ২৪ মার্চ সিলেট শহরের শিববাড়িতে চলছে অভিযান এ অভিযানে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরাও যোগ দিয়েছেন। একই দিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন ১ জন। সিলেটের শিববাড়িতে এই প্রতিবেদন লেখার সময়েও চলছে অভিযান। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইটস’। অভিযান চলার সময়েই সন্ধ্যায় শিববাড়ি চেকপোস্ট মোড়ে দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা-সহ মারা গিয়েছেন তিন জন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে যখন অনেকটাই স্বস্তি, তখনই চলতি মার্চ মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কিছুটা শঙ্কা তৈরি করেছে। একইসঙ্গে জঙ্গিদের আত্মঘাতী প্রবণতা চোখে পড়লেও, তামিম চৌধুরী-সহ নব্য জেএমবি চাঁইরা প্রায় সবাই গত কয়েক মাসে নিকেশ হয়েছে বা গ্রেফতার রয়েছে। সে কারণেই জঙ্গিদের সাম্প্রতিক এই প্রবণতা নিভে যাওয়ার আগের শেষ চেষ্টা, এমনটিও বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রবণতা তছনছ হয়ে যাবে অচিরেই।

Terrorist Campaign relieve
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy