Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখনও জট পেট্রোকেম খোলা নিয়ে

হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের দরজা খুলবে কবে, এ প্রশ্নের উত্তর পঁচিশ দিন পরেও ঝুলে রইল। বুধবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে পেট্রোকেম পরিচালন পর্ষদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সংস্থার অন্যতম প্রধান অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পেট্রোকেমের পরিচালন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন কারখানার অবস্থা যথেষ্ট ভাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের দরজা খুলবে কবে, এ প্রশ্নের উত্তর পঁচিশ দিন পরেও ঝুলে রইল।

বুধবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে পেট্রোকেম পরিচালন পর্ষদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সংস্থার অন্যতম প্রধান অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পেট্রোকেমের পরিচালন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন কারখানার অবস্থা যথেষ্ট ভাল। তবে সংস্থা খুলতে বাধা কোথায়, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ঋণদাতা সংস্থাগুলির টাকা মেটাতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গোড়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ দর্শিয়েই কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল।

তিন সপ্তাহের বেশি বন্ধ হয়ে রয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের কারখানা। গত ৬ জুলাই ন্যাপথা ক্র্যাকারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানা বন্ধ করার কথা জানিয়েছিল সংস্থা। এ দিন পূর্ণেন্দুবাবুর কথায় অবশ্য যান্ত্রিক ত্রুটির যুক্তি নস্যাত্‌ হয়ে যায়। আর্থিক সঙ্কট, না কি যান্ত্রিক গোলযোগ কোনটা কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আসল কারণ, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। রাজ্য সরকার বা সংস্থা কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ মুখ খোলেননি।

পেট্রোকেমের প্রধান কাঁচামাল ন্যাপথার দর বিশ্ব বাজারে এই মূহূর্তে পড়তির দিকে। একই সঙ্গে, পেট্রোকেমে উত্‌পাদিত পণ্যের বাজারও এখন বেশ ভাল। এই দাবির সমর্থন মিলছে পেট্রো-রসায়ন সংক্রান্ত মার্কিন বাণিজ্য পত্রিকা আর্গাস ডিউইটেও। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই ভাল সময়ের সুযোগ নিতে মূল ত্রুটিটুকু তাড়াতাড়ি সারিয়ে কারখানা খুলতে পারত পেট্রোকেম। তাতে হাতে কিছুটা নগদ আসত আর্থিক সঙ্কটে ভোগা সংস্থাটির।

কিন্তু সংস্থা সূত্রে খবর, সেই পথেও অন্যতম বাধা কার্যকরী মূলধনের অভাব। কারণ, বন্ধ হওয়ার আগে প্রতি ঘণ্টায় টেনেটুনে ১১০-১২০ টন ন্যাপথা ব্যবহৃত হচ্ছিল পেট্রোকেমের কারখানায়। কিন্তু নগদ লাভের মুখ দেখতে ওই পরিমাণ হতে হবে অন্তত ১৮০ টন। অথচ এই বাড়তি কাঁচামাল কিনতে যে-টাকা (কার্যকরী মূলধন) প্রয়োজন, তা পেট্রোকেমের নেই। মালিকানা সমস্যা না-মেটা পর্যন্ত ওই টাকা ধার দিতেও রাজি নয় ঋণদাতা সংস্থাগুলি।

প্রতি ঘণ্টায় ২৬০ টন ন্যাপথা চূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে হলদিয়া পেট্রোকেমের ক্র্যাকার। আর, ১১০ হোক বা ১৮০ টন ক্র্যাকারে তা চূর্ণ করার অন্যান্য খরচ প্রায় একই। বাড়তি খরচ বলতে শুধু ওই ৭০ টন ন্যাপথার দাম। ফলে তা জুগিয়ে ক্র্যাকারকে ঘণ্টা-পিছু অন্তত ১৮০ টন ন্যাপথা জোগাতে পারলে, তবে উত্‌পাদন খরচে পড়তা পড়ে। সম্ভব হয় নগদ মুনাফার মুখ দেখা।

পেট্রোকেমে তৈরি পণ্যের বাজার মোটামুটি চার বছর অন্তর ওঠে-পড়ে। আর এখন সেই বাজার উঠতির দিকে। অর্থাত্‌, চাহিদা বেশ চড়া। ফলে তার সুযোগ নিতে অন্তত কাঁচামাল কেনার টাকা সংস্থানের স্বার্থেই মালিকানা সমস্যা দ্রুত মেটানো জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে।

শুধু তা-ই নয়। হলদিয়া পেট্রোকেমের পণ্যের উপর নির্ভর করে তার শতাধিক অনুসারী শিল্প। ফলে কারখানা যত বেশি দিন বন্ধ থাকবে, তা ফের চালুর খরচ তো তত বেশি বাড়বেই। সেই সঙ্গে উত্তরোত্তর সমস্যা বাড়বে অনুসারী শিল্পগুলিরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haldia petrochem re-opening row
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE