Advertisement
E-Paper

লগ্নি প্রস্তাব ২.৩৫ লক্ষ কোটির, শিল্প সম্মেলনে দাবি করলেন মমতা

পরিমাণ যা-ই হোক, তথ্যে কোনও জল নেই। তৃতীয় শিল্প সম্মেলনের (বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৭) শেষে রাজ্যে আসা লগ্নি প্রস্তাবের অঙ্ক নিয়ে এই দাবিই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৭
শিল্পপতিদের সঙ্গে মমতা। শনিবার।  — নিজস্ব চিত্র

শিল্পপতিদের সঙ্গে মমতা। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

পরিমাণ যা-ই হোক, তথ্যে কোনও জল নেই।

তৃতীয় শিল্প সম্মেলনের (বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৭) শেষে রাজ্যে আসা লগ্নি প্রস্তাবের অঙ্ক নিয়ে এই দাবিই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এ বার দেশ-বিদেশ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ২,৩৫,২৯০ কোটি টাকারও বেশি। যা গত দু’বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সম্মেলনের সাফল্য মাপার ক্ষেত্রে শুধু ওই একটি সংখ্যা বিবেচ্য নয়। কারণ মাথায় রাখতে হবে যে, গত দু’বছরের সম্মেলন থেকে যে মোট ৪.৯৩ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছিল, তার ৪০ শতাংশের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, হিসেবে কোনও ‘জল’ নেই। যদিও ওই ৪০% (প্রায় ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ কোথায় কোথায় এসেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ এ দিন তাঁর সরকার দেয়নি।

প্রায়ই অভিযোগ ওঠে যে, লগ্নি টানতে বিস্তর টাকা খরচ করে এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে এখন শিল্প সম্মেলন আয়োজন করে অধিকাংশ রাজ্য। সেগুলির শেষে বিপুল অঙ্কের লগ্নি প্রস্তাব আসা ও সমঝোতাপত্র (মউ) সইয়ের কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, তার ছোট্ট একটি অংশ বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেই ছবি যে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে নয়, সে কথা বোঝাতেই এ দিন আগের দু’বছরের লগ্নি প্রস্তাবে প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হিসেবে জল মেশাই না। প্রস্তাব এক টাকার হোক বা এক লক্ষ কোটির— যেটা পাব, সেটাই বলব।’’

এ প্রসঙ্গে গুজরাতের শিল্প সম্মেলন ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-কে নাম না-করেও খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘অমিতদার (অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র) কাছে শুনেছি কোথাও লগ্নি প্রস্তাবের ১ শতাংশের কিছু বেশি কার্যকর হয়। আর আমাদের ৪০%। আপনাদের মনে হয় না, এটা দারুণ কাজ?’’ ওই প্রসঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘৫০ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব না-পেলেও বিশ্বাস করি, এই পরিস্থিতিতে এটা যথেষ্ট। এই সম্মেলন চূড়ান্ত সফল।’’

এ ক্ষেত্রে কোন ‘পরিস্থিতি’র কথা বলতে চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তার উল্লেখ করেননি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এ বিষয়ে তাঁর নিশানা নোট বাতিল। তাই তার জেরে দেশে উন্নয়ন থমকে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২.৩৫ লক্ষ কোটির লগ্নি প্রস্তাব প্রাপ্তিকে বড় করে দেখাতে চেয়েছেন তিনি।

লগ্নি টানতে নানা সরকারি উদ্যোগ মেলে ধরার পাশাপাশি নিজের ‘ঘরের মেয়ে’ ভাবমূর্তিতে শাণ দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘আমি তো ঘরের মেয়ে। আমার জন্য হাততালির প্রয়োজন নেই।’’ এ রাজ্যকে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করে শিল্পোদ্যোগীদের এখানে আসার আর্জি জানান তিনি।

সম্মেলনের সাফল্য প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন না এর অন্যতম হোতা অমিতবাবুও। মাঝ দুপুরের সাংবাদিক বৈঠকে প্রাপ্তির হিসেব দাখিল করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর দাবি, এটি আশার থেকেও বেশি সফল। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও আলোচনা চলছে। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন অনেক শিল্পকর্তা। যার মধ্যে ৪২৫টি আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ অর্থাৎ ইঙ্গিত, বিনিয়োগের আরও প্রস্তাব আসতে পারে সেখান থেকে।

রাজ্যের হিসেবে, উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্ষেত্রে আসা লগ্নি প্রস্তাবের অঙ্ক হল— উৎপাদন ও পরিকাঠামো: ৬১,৭৬৫ কোটি, নগরোন্নয়ন: ৪৬,৬০০ কোটি, ছোট ও মাঝারি শিল্প: ৫০,৭১০ কোটি, পরিবহণ: ৩৮,৮০১ কোটি, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম: ১৮,৫৪০ কোটি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ: ১০,৬৪৯ কোটি ইত্যাদি। প্রস্তাব প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত অমিতবাবু এ দিন একের পর এক প্রশ্ন তুলে উত্তর দিয়েছেন নিজেই। বারবার বলেছেন, ‘‘আপনারা হয়তো জিজ্ঞাসা করবেন কিংবা আপনাদের হয়তো প্রশ্ন থাকতে পারে...।’’ আর তারপরে নিজেই উত্তর দিয়ে গিয়েছেন সমস্ত প্রশ্নের।

মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং রওনা হওয়ার পরে অমিতবাবু জানান, আগামী বছর সম্মেলন হবে ১৬-১৭ জানুয়ারি। তা ছাড়া, ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর প্রাক্তন কর্তা ফ্রাঙ্ক রিক্টার পৃথক সংস্থা গড়েছেন। এ বছরের শেষে তাদেরও এশীয় বার্ষিক সভা হতে পারে রাজ্যে।

Bengal Global Business Summit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy