Advertisement
E-Paper

লগ্নি টানার দৌড়ে সেই পিছিয়ে রাজ্য

তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্পায়নের কম চেষ্টা করেনি। নতুন শিল্প নীতি হয়েছে। শিল্পের জন্য এক জানলা ব্যবস্থাকে আইনি তকমা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন হচ্ছে। শিল্পপতিদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কোর কমিটিও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০২

লগ্নি টানার দৌড়ে সেই পিছনের সারিতেই পড়ে পশ্চিমবঙ্গ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তার অতি সামান্য অংশই এসে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের ঝুলিতে।

কারখানা তৈরি বা ব্যবসা শুরুর জন্য বিভিন্ন শিল্প সংস্থা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি থেকে যে ঋণ নেয়, তার ভিত্তিতে বার্ষিক সমীক্ষা করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। দেখে, পুরো অর্থবর্ষে সারা দেশে এবং সেই সঙ্গে কোন রাজ্যে কত বিনিয়োগ হচ্ছে। সামগ্রিক লগ্নি-ছবির আঁচ মেলে তাতে। সেই হিসেব বলছে, ২০১৬-’১৭ সালে শিল্পমহল দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তার মাত্র ১.৭% জুটেছে পশ্চিমবঙ্গের বরাতে! লগ্নি টানার দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ ঠাঁই পেয়েছে ১৪ নম্বরে। মোট ১৮টি প্রকল্পে সিদ্ধান্ত হয়েছে মোট ৩,১০৭.৬ কোটি টাকা লগ্নির।

তা-ও আবার এর পুরোটা যে লগ্নি হয়েছে, এমন নয়। কারণ, সংস্থাগুলি ধার নেওয়ার সময় প্রকল্পের মোট খরচ জানায়। কিন্তু অনেক সময়ই এক বছরে তার পুরোটা খরচ হয় না।

লগ্নিতে প্রথম স্থানে গুজরাত। দেশের মোট লগ্নির ২২.৭ শতাংশের গন্তব্য। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ু—এই সাত রাজ্যই টেনেছে লগ্নির ৬৩.৫%। গত পাঁচ বছর ধরেই প্রথম সাত রাজ্যের ঝুলিতে লগ্নি ৬০ শতাংশের বেশি।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, লগ্নির সিদ্ধান্ত নির্ভর করে কাঁচামাল, দক্ষ কর্মী, পরিকাঠামো, বাজারের মাপ ইত্যাদির উপর। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই জরুরি উপাদানগুলির ঘাটতি রয়েছে এ রাজ্যে।

তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্পায়নের কম চেষ্টা করেনি। নতুন শিল্প নীতি হয়েছে। শিল্পের জন্য এক জানলা ব্যবস্থাকে আইনি তকমা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন হচ্ছে। শিল্পপতিদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কোর কমিটিও।

মঙ্গলবারও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র বেঙ্গল চেম্বারের সভায় দাবি করেন, রাজ্যে নতুন লগ্নি আসছে। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। তেল শোধনাগার গড়তে লগ্নি করবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। অনুসারী শিল্প হবে মিৎসুবিশি কেমিক্যালসের। বিনিয়োগ আসছে চর্ম শিল্পেও।

কিন্তু তা সত্ত্বেও বিনিয়োগের ছবি এমন বিবর্ণ কেন?

কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘আসলে একটি বড় মাপের প্রকল্প জরুরি। যা বাকিদের ভরসা জোগাবে।’’ শিল্পের বড় অংশের মতে, প্রথম সমস্যা জমি। সরকার জমি-ব্যাঙ্কের কথা বললেও, সেখানে এক লপ্তে বড় জমি তেমন মেলে না। পরিকাঠামোও যথেষ্ট নয়। সঙ্গে দোসর, শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের গেরো। সিন্ডিকেট এবং তোলাবাজির সমস্যাও মাথাব্যথার কারণ বলে তাঁদের ধারণা। বণিকমহলের অনেকের আবার দাবি, মূল অন্তরায় রাজ্যের ভাবমূর্তি আর লাল ফিতের ফাঁস। এক শিল্প-কর্তা বলেন, ‘‘একেই ভাবমূর্তি ভাল নয়, তার উপর শাসকদলের নাম করে টাকা চাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।’’

রাজ্যে লগ্নির ছবি অবশ্য নতুন করে খারাপ হয়নি। গত দশ বছর ধরেই সারা দেশে লগ্নির ১-৩ শতাংশ জুটেছে তার বরাতে। ব্যতিক্রম ২০১১-’১২। শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক কর্তার অবশ্য যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান শুধু ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের ভিত্তিতে। তার বাইরেও লগ্নি হয়। অনেকে বিদেশ থেকে ঋণ নেন। শেয়ারে টাকা তোলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারা তা মানছেনও। কিন্তু তাঁদের যুক্তি, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। যেমন, ২০১৬-’১৭ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে লগ্নি হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি। তার সঙ্গে বাকি সব মিলিয়ে মোট ২ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, হিসেব পাল্টালেও ছবি বদলানোর সম্ভাবনা নিতান্তই অল্প।

বিরোধীদের কটাক্ষ, বেঙ্গল গ্লোবাল
বিজনেস সামিটে ২.৩৫ লক্ষ কোটির লগ্নি প্রস্তাব আসার কথা বলেছিল রাজ্য। হিসেব তো বলছে, আসল লগ্নি সারা দেশেই তার চেয়ে কম!

West Bengal Investment Industry পশ্চিমবঙ্গ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy