গার্ডেনরিচ থেকে তারাতলার দিকে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। শুক্রবার রাত তখন ৮টা। নেচার পার্কের কাছে হঠাৎই তাঁর নজরে আসে, পাশাপাশি চলতে থাকা একটি গাড়ির মধ্যে থেকে কিছু একটা আওয়াজ আসছে। ভাল করে লক্ষ্য করে তিনি দেখেন, গাড়ির বন্ধ জানালার কাচে ধাক্কা মারছেন এক তরুণী। যেন বিপদ থেকে বাঁচতে সঙ্কেত দিচ্ছেন। ওই যুবক বুঝতে পারেন, তরুণী ছাড়াও গাড়ির মধ্যে চালক-সহ রয়েছে আরও চার যুবক এবং তাদের মতলব ভাল নয়।
ওই গাড়িটির সঙ্গে সমান্তরাল গতি বজায় রেখে এগোচ্ছিলেন মোটরবাইক আরোহী যুবক। একটু এগিয়ে তারাতলা রোডে টহলরত একটি পুলিশের গাড়ি দেখতে পান তিনি। মোটরবাইক থামিয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সব জানালে তাঁরা পুলিশভ্যান নিয়ে গাড়িটিকে ধাওয়া করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ধরে ফেলে পুলিশ। গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হন এক তরুণী। তবে চার যুবকের মধ্যে তিন জন পালিয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। গাড়িতে থাকা এক যুবককে ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি ও তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, রাজাবাগান এলাকার বাসিন্দা রাজ আনসারি নামে ওই যুবককে শনিবার আলিপুর আদালতে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত দেওয়া হয়। বাকি তিন জনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। তাদের খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গার্ডেনরিচের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের ওই তরুণী মূক ও বধির। তিনি বন্দর এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পিলখানা মোড়ের পরে সহকর্মীরা যে যাঁর মতো বিভিন্ন দিকে চলে যান। তরুণী তখন একা। তরুণীর কাছ থেকে বুঝে শনিবার তাঁর বাড়ির লোকজন জানান, পিলখানা মোড়ের কাছে একটি মোটরবাইক প্রথমে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তাঁকে। হঠাৎ চার জন দুষ্কৃতী এসে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নেয় তাঁকে। অন্যান্য দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার মধ্যে বা়ড়ি ফেরেন ওই তরুণী। শুক্রবার রাত আটটা বেজে গেলেও তিনি না ফেরায় চিন্তায় পড়েন পরিজনেরা। অবশেষে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পুলিশের ফোন পেয়ে তাঁরা নেচার পার্কের দিকে রওনা দেন।
পুলিশ জানায়, মোটরবাইক আরোহী ওই যুবকের তৎপরতায় শুক্রবার গণধর্ষণের হাত থেকে বেঁচে যান গার্ডেনরিচের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের ওই তরুণী। পুলিশ জানায়, মূক ও বধির ওই তরুণী গাড়ির ভিতর থেকে যতটা সম্ভব বাইরের লোককে বিপদ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তা বুঝেই তৎপর হন ওই যুবক। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ওই যুবকের পরিচয় জানায়নি। বিশেষত তিন দুষ্কৃতী যখন এখনও পলাতক।
শনিবার ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যেরা বার বার কৃতজ্ঞতা জানান মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবকের প্রতি। তাঁদের কথায়, ‘‘ওই যুবক থাকাতেই দুষ্কৃতীরা বড় কোনও অঘটন ঘটাতে পারেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy