কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থেকে ‘পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে দাবি কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালের। সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবেই এ বার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ‘বিতর্কিত’ চিকিৎসকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন চেন্নাইয়ে অ্যাপোলোর শীর্ষ কর্তারা। যদিও হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা অংশের পাল্টা অভিযোগ, বেকায়দায় পড়ে হাসপাতাল এখন তাঁদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। অথচ একটা সময়ে হাসপাতাল কর্তারাই তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য চাপ দিতেন।
ইতিমধ্যেই অ্যাপোলোর এক প্রবীণ হৃদ্রোগ চিকিৎসক এবং তাঁর দলের আরও তিন চিকিৎসককে অন্যত্র কাজ খুঁজে নিতে বলা হয়েছে বলে হাসপাতালসূত্রে খবর। ওই প্রবীণ চিকিৎসক অ্যাপোলোর কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগের রিজিওন্যাল ডিরেক্টর-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন ছিলেন। ওই চার জন কলকাতার অন্য এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন।
অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের কথায়, আপাতত বেনোজল সরিয়ে হাসপাতালকে ক্লেদমুক্ত করার প্রক্রিয়া চালু থাকবে। তালিকায় আরও নাম রয়েছে। চেন্নাই থেকে অ্যাপোলো গ্রুপের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা অনেকের সঙ্গে কথা বলে, অনেকের থেকে তথ্য পেয়ে কিছু চিকিৎসককে চিহ্নিত করেছি। আমরা সরাসরি এঁদের বরখাস্ত করছি না। আমরা এঁদের বলছি, ‘দেখুন আপনি এই ভুলগুলি করেছেন।’ তার পর সবিনয়ে মৌখিক ভাবে তাঁকে অন্যত্র কাজ খুঁজে নিতে বলা হচ্ছে।’’
কিন্তু সদর দফতরের কর্তাদের কথা জানাজানি হতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সংস্থার অন্দরে।
কর্তাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনা, চিকিৎসায় গাফিলতির একাধিক মামলা নিয়ে বাইরে এমনিতেই অ্যাপোলো যথেষ্ট চাপে রয়েছে। তার সঙ্গে এ বার নিজেদের ঘরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে সংস্থায় জটিলতা আরও বেড়েছে।
যে সব চিকিৎসক সদ্য অ্যাপোলো ছেড়েছেন তাঁরা তো বটেই, এমনকী এখনও কলকাতার অ্যাপোলোয় কাজ করছেন এমন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ দাবি করছেন, গর্তে পড়ে কর্তৃপক্ষ এখন ডাক্তারদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সাজতে চাইছেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কোনও ডাক্তার কম অস্ত্রোপচার বা কম পরীক্ষানিরীক্ষা করতে দিলে কর্তৃপক্ষের তরফে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সংস্থার লাভ বাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও চিকিৎসককে রাখা হবে।’’
অ্যাপোলো ছেড়ে সদ্য অন্যত্র যোগ দেওয়া প্রবীণ হৃদ্রোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নিজেদের ইচ্ছায় চাকরি ছেড়েছি, কারণ অন্য জায়গায় ভাল সুযোগ পেয়েছি। এত লোক ছেড়ে যাচ্ছে বলে অ্যাপোলো চাপে পড়ে গিয়েছে। তাই এখন ওরা প্রচার করতে চাইছে যে, ওরাই আমাদের ছাড়িয়ে দিয়েছে।’’ আর এক নিউরোলজিস্টের কথায়, ‘‘কলকাতা অ্যাপোলোয় রোগী কমছে। অনেক চিকিৎসকই তাই কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্য হাসপাতালগুলিও অ্যাপোলো ছাড়তে চাওয়া ডাক্তারদের নিয়ে নিচ্ছে।’’
চেন্নাই থেকে অ্যাপোলোর মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, কলকাতা অ্যাপোলোর পূর্বতন কয়েক জন কর্তা অতিরিক্ত লাভের জন্য অনৈতিক কিছু পদক্ষেপ করেছেন তা জানার পরেই তাঁদের সরানো হয়েছে। কিছু চিকিৎসকও কারও চাপ ছাড়া নিজেরা অহেতুক রোগীর চিকিৎসার খরচ বাড়িয়েছেন। তাঁদেরও আর বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আগে কলকাতার হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যাপারে চেন্নাই মাথা গলাত না, কিন্তু এখন গলাতে হবে।’’
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ‘বিতর্কিত’ চিকিৎসকদের তালিকায় হালফিলের সবচেয়ে আলোচিত এক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট এবং তাঁর রেডিওলজিস্ট স্ত্রী নেই কেন? তাঁরা এখনও অ্যাপোলোতে জড়িত। এ ব্যাপারে মুখপাত্রের জবাব, ‘‘যেহেতু ওঁদের ব্যাপারে বাইরে অনেকগুলি তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে তাই সেখানে আমরা কোনও পদক্ষেপ করলে সেটা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই কিছু করা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy