খুন করে নালায় ফেলে দেওয়া হয়নি। বরং নালায় পড়ার পরেই মৃত্যু হয়েছিল ভবানীপুরের প্রৌঢ়া সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ের। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট তেমনটাই বলছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রৌঢ়ার পাকস্থলীতে জল এবং বালি ও মাটি পাওয়া গিয়েছে। অর্থাত্, নালায় যখন তিনি পড়েছিলেন, তখন জীবিতই ছিলেন সুনন্দাদেবী। পরে সেখানে পড়ে পেটের মধ্যে জল-বালি ঢুকে যায়। পাশাপাশি, ওই প্রৌঢ়ার মাথার ডান দিকের একটা জায়গা ফুলে গিয়ে সেখানে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। কারও হাতে মার খেয়ে, না কি নালার মধ্যে পড়ে সুনন্দাদেবীর মাথায় ওই অবস্থা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
যদিও পুলিশের এই প্রাথমিক দাবির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি পুলিশি তদন্ত দুর্ঘটনা তত্ত্বের দিকেও মোড় নিতে পারে? এ ব্যাপারে অবশ্য পুলিশ সূত্রে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি।
সুনন্দাদেবীকে খুন করা হয়েছিল না কি এটা নিছকই দুর্ঘটনা, এই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, ময়নাতদন্তেও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সে জন্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) এক প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যাবে। তাদের সঙ্গে লালবাজারের গোয়েন্দারাও থাকবেন। ফরেন্সিক দল কেন যাচ্ছে ঘটনাস্থলে? লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা জানান, ওই প্রৌঢ়ার সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যদি কোনও ধস্তাধস্তি হয়ে থাকে, তবে ঘটনাস্থলে তার চিহ্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে অচেতন করে ফেলা যদি হয়ে থাকে তা হলে সেই সময়ে নাক মুখ থেকে রক্ত-লালা বেরনোর কথা। তার কোনও চিহ্ন আছে কি না বা সন্দেহজনক আঙুলের ছাপ আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখবে ওই দল। পাশাপাশি, ধস্তাধস্তির সময়ে কারও জামার বোতাম বা পোশাকের চিহ্ন পড়ে থাকতে পারে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘আমরা গতকাল ঘটনাস্থলে কোনও রকম কোনও ঘাঁটাঘাঁটি করিনি। প্রায় অবিকল রাখার চেষ্টা করেছি। যাতে আজকে এফএসএল-এর বিশেষজ্ঞদের কোনও অসুবিধা না হয়।’’
আরও পড়ুন- এই প্রথম! মুম্বই হামলায় পাকিস্তানি হাত মানল চিন
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, যে নালার মধ্যে সুনন্দাদেবী পড়ে গিয়েছিলেন, তার গভীরতা চার ফুট। প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, অল্প জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অথচ ওই ওই নালার পাশ দিয়েই তিনি প্রতি রাতে শৌচাগারে যেতেন। তা হলে রবিবার রাতেই কেন তিনি পড়ে যাবেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি মেরে তাঁকে ফেলে দিত, তবে তাঁর শরীরে আরও কিছু আঘাতের চিহ্ন থাকত। সেই রকম কোনও আঘাত তাঁর দেহে পাওয়া যায়নি।’’
প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এ দিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু হয়েছে। গোয়েন্দ বিভাগের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘এই ঘটনায় প্রোমোটার চক্রের হাত আছে বলে অভিযোগ। আমরা সব দিকটাই খতিয়ে দেখতে চাই। খুনের মামলা রুজু করলে তদন্ত আলাদা একটা গতি পায়।’’ যে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে সুনন্দাদেবী বছর দু’য়েক আগে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে গতকাল রাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লালবাজারে ডেকে জেরা করা হয়েছে। দু’বছর আগে এই মহিলা তাঁর স্বামী বুদ্ধদেব গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিলেন। তিনি এই মুহূর্তে কলকাতার বাইরে। পুলিশ জানিয়েছে, বুদ্ধদেববাবু কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy