প্রতীকী চিত্র
বিপজ্জনক বাড়ির সংস্কারে মালিক কোনও ভাবে অক্ষম হলেও বাসিন্দা বা ভাড়াটে সেই ভার পাবেন না। সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভাই বাড়ি অধিগ্রহণ করে সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করবে। তারাই পুরনো বাসিন্দা বা ভাড়াটেদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দেবে এবং মালিকের প্রাপ্য অংশ ও টাকা তাঁর হাতে তুলে দেবে। কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে শুক্রবার বিল পাশ হল বিধানসভায়।
কলকাতা পুরসভার বর্তমান আইনের ৪১২ ধারার পাশে ৪১২এ ধারা যুক্ত করতেই এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল। এ দিন সকালে বিলটি পেশ করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, এ শহরে হাজার তিনেক বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন সে সব বাড়ির বাসিন্দারা। নতুন ওই সংশোধনী কার্যকর হলে জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থেকে রেহাই পাবেন কলকাতাবাসী।
এমন একটা বিলের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে বিধানসভায় কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি উত্তর কলকাতার একটি এলাকায় বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর মতে, শহরে এমন ঝুরঝুরে বাড়ি আর যাতে কারও প্রাণহানির কারণ হয়ে না ওঠে, তা নিশ্চিত করতেই এই আইন সংশোধন করাটা জরুরি ছিল।
বিলের নতুন ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে মেয়র জানিয়েছেন, পুর প্রশাসন ওই সব বাড়ি চিহ্নিত করে অনেক আগেই সেগুলির গায়ে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস টাঙিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ওই সব বাড়িতে বসবাসকারী মানুষজন সেখান থেকে সরতে না চাওয়ায় মানবিক কারণে সেগুলি ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর আইনেও তেমন কোনও সুযোগ ছিল না।
আরও পড়ুন: পড়েই নষ্ট ৩৫ লক্ষের ওষুধ
নতুন ধারায় তাঁদের যেমন প্রয়োজনে সরানোর ক্ষমতা থাকবে পুর প্রশাসনের, তেমনই যাঁদের সরানো হবে, তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে। বাড়িটির সংস্কার বা পুনর্গঠনের জন্য প্রথমেই মালিককে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তিনি রাজি না হলে পুর প্রশাসন দরপত্র ডেকে ওই কাজে পারদর্শী কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে সেই কাজের বরাত দিতে পারবে।
পাথুরিয়াঘাটায় জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনার পরে বিশিষ্ট জনেদের নিয়ে কলকাতার পুরভবনে একটি সভা হয়। সমাধানসূত্র বার করতে রাজ্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি নতুন বিলের খসড়া তৈরি করে। তাতে প্রথমে ছিল, ওই ধরনের বাড়ি সংস্কারে মালিক গররাজি হলে ভাড়াটে (যাঁদের ‘অকুপায়ার’ বলে খসড়া বিলে উল্লেখ করা হয়েছিল) তা সংস্কার করতে পারবেন। মালিক এবং ‘অকুপায়ার’ অক্ষম হলে তখন পুরসভা তার সংস্কারের দায়িত্ব কাউকে দিতে পারবে। আইন দফতরের পরামর্শে নবান্ন খসড়ার অংশে অকুপায়ারের সেই ক্ষমতা কেটে দেয়। অকুপায়ারের হাতে দায়িত্ব গেলে তা নিয়ে মামলা হতে পারে ভেবেই সেটি কেটে দেওয়া হয় বলে খবর। ঠিক হয়, বিপজ্জনক বাড়ির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব পাবেন মালিক। তাতে তাঁরা রাজি না হলে পুরসভা নিয়ম মেনে দরপত্র ডেকে তৃতীয় কোনও পক্ষকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ভাড়াটেদের প্রত্যেককে নতুন বাড়িতে জায়গা দিতে হবে। পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে ওই বাড়ির পরিমাণ যত বর্গফুট ছিল, তার সমপরিমাণ জায়গা বাড়তি ছাড় অর্থাৎ ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর মিলবে। নতুন আইন হওয়ার পরে পুর প্রশাসন নিয়মাবলী তৈরির কাজ শুরু করবে। বিধানসভায় পেশ হওয়া বিলটি নিয়ে প্রশংসা করেছেন বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস বিধায়কও।
কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার এটিকে ভাল উদ্যোগ জানিয়ে বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলিতেও এই আইন চালু করুক সরকার।’’ প্রোমোটারেরা এই সুযোগে যাতে সরকারের বা পুরসভার উপরে কোনও রকম আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে বলেও অধিবেশনে উল্লেখ করেন বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy