নিত্য দিনের ছবি। — নিজস্ব চিত্র
এত দিন উড়ে বে ড়াত রানওয়ের আশপাশে। এখন তারা ফাঁক-ফোকর গলে দিব্যি ঢুকে পড়ছে টার্মিনালের ভিতরে। এই পক্ষী-বাহিনীর জন্য কপালে ভাঁজ পড়েছে কলকাতা বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের।
এক দিকে বিমান ওঠানামার পথ থেকে কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না পাখিদের। সে জন্য মাঝে-মধ্যেই ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে বিমানের মুখ। কখনও আবার রানওয়ে থেকে ওড়ার মুখে বিমানের ইঞ্জিনের ভিতরে ঢুকে পড়ছে উড়ন্ত পাখি। বিমানের তো ক্ষতি হচ্ছেই, প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে যাত্রীদেরও। আর এ বার তারা বিশ্রামের
জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক টার্মিনালকেই।
খানকটা অসহায় হয়েই তাই জুওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (জেডএসআই) দ্বারস্থ হয়েছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জেডএসআই-এর প্রতিনিধিরা কলকাতা বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, পাখি শুধু রানওয়েতেই নেই, দিব্যি উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁ-চকচকে নতুন টার্মিনালের ভিতরেও। এতে তেমন কোনও বিপদের আশঙ্কা না থাকলেও গায়ে-মাথায় আচমকা বিষ্ঠা-পতনের ভয় থেকেই যায়।
সূত্রের খবর, টার্মিনালে মূলত ঢুকছে কাক, পায়রা, শালিখ ও চড়াই। বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত জানিয়েছেন, নতুন কাচে মোড়া টার্মিনালের ছাদ ও দেওয়ালের মধ্যে কিছু ফাঁক রয়েছে। সেখান দিয়েই টার্মিনালে যাতায়াত করে ওই পাখিরা। এ ছাড়া, যে সব গেট দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করেন, সেখান দিয়েও ঢুকছে পাখি। এমনকী টার্মিনাল থেকে যে বারান্দা দিয়ে বিমানে উঠতে হয়, পাখি ঢুকছে সেই অ্যারোব্রিজের দরজা দিয়েও। বিমানবন্দরের কর্মীদের মতে, এই গরমের সময়েই এটি বেশি করে লক্ষ করা গিয়েছে। ভিতরের বাতানুকূল আবহাওয়ায় দিব্যি দিবানিদ্রা দিতে থাকে পাখিরা। কখনও আবার যাত্রীদের চেয়ারে, চেক-ইন কাউন্টারে বা নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছাকাছিও ওড়াউড়ি করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। জেডএসআই-এর বিজ্ঞানী মহেশ্বরন গোপীনাথ বলেন, ‘‘টার্মিনালে পাখিদের ঢোকা-বেরোনোর পথ আটকে দিতে হবে। তা করতে সময় লাগবে।’’
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, রানওয়ের আশপাশেও পাখির সংখ্যা ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ওই রানওয়ের উপর দিয়ে দিনে দু’বার ঝাঁক বেঁধে পাখি উড়ে যায়। খুব ভোরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে উড়ে যায়।
সন্ধ্যায় আবার উল্টো দিকে। পাখি তাড়াতে পটকা ফাটানো হয়। সে জন্য প্রতি মাসে গড়ে ২৪০ প্যাকেট পটকা লাগে। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি জোন-গান। যেখান থেকে কিছু সময় অন্তর অন্তর বোমা ফাটার আওয়াজ বেরোয়। পাখিরা পছন্দ করে না, এমন সব শব্দ তরঙ্গ বেরোনোর দু’টি যন্ত্রও লাগানো রয়েছে রানওয়ের আশপাশে।
কিন্তু পাখি তাড়ানোর কাজে যুক্ত কর্মীদের পর্যবেক্ষণ হল, ভয় পাওয়া তো দূর অস্ত, খোশ মেজাজে জোন-গানের উপরেই বসে থাকছে পাখি। দুম করে আওয়াজ হলে এক বার দু’ফুট লাফিয়ে উঠে আবার বসে পড়ছে জোন-গানের উপরেই।
তা হলে উপায়? বিজ্ঞানী গোপীনাথ বলেন, ‘‘এই পাখিদের আচরণ ঠিক মতো দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সঙ্গে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের চুক্তি হওয়ার পরে ওই কাজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy