শুক্রবার পুলে নামার আগে কাজলবাবু (সিসি ক্যামেরায়)।
কলেজ স্কোয়ার সুইমিং পুলের নীচে থাকা কংক্রিটের স্ল্যাব ও কাঠের পাটাতনে আটকে ছিল সাঁতারু কাজল দত্তের (৬৭) দেহ। শুক্রবার শেষ রাতে সেই দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের অনুমান, কোনও ভাবে ওই স্ল্যাব আর ভারী পাটাতনের ফাঁকে আটকে যান তিনি। এমনও হতে পারে, জলের তলায় থাকার সময়ে কোনও ভাবে চাপ পড়ায় ওই পাটাতন হুড়মুড়িয়ে খুলে পড়ে তাঁর উপরেই। সেই চাপেই শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এমন নানা আশঙ্কার মধ্যে উঠে আসছে কয়েকটি প্রশ্ন। সুইমিং পুলের নীচে কাঠের পাটাতন থাকবে কেন? কে বা কারা রাখল সেই পাটাতন? আর পুলে জল ভরার সময়ে কেনই বা তা দেখা হয়নি?
প্রশ্ন উঠেছে, কলেজ স্কোয়ারের ভিতরেই স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপ্না দাসের অফিস। বিষয়টি তাঁর নজরই বা এড়াল কী করে? স্বভাবতই পুরসভার ভূমিকা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে স্থানীয় মহলে।
আরও পড়ুন: কাপড় ধরে টানতেই বেরিয়ে এল জেঠুর পা
শুক্রবার সকালে কাজলবাবু কলেজ স্কোয়ারের সুইমিং পুলে নেমেছিলেন। বহুক্ষণ পরেও উঠে না আসায় তাঁর খোঁজ শুরু হয়। নিখোঁজ থাকার প্রায় ১৯ ঘণ্টা পরে, রাত তিনটে নাগাদ উদ্ধার হয় বৌবাজার ব্যায়াম সমিতির সাঁতার বিভাগের এই আজীবন সদস্যের দেহ।। বিকেল থেকে পুরসভার দু’টি পাম্প চালিয়ে সুইমিং পুলের জল তত ক্ষণে কমেছে ফুট দেড়েক।
অঘটন: এই কাঠের পাটাতন আর কংক্রিটের স্ল্যাবের মাঝেই আটকে ছিল দেহ। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস’ থেকে সাঁতারে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং ‘ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি’র শংসাপত্র থাকা দক্ষ সাঁতারু কাজলবাবুর মৃত্যু হয়েছে কংক্রিটের স্ল্যাব ও কাঠের পাটাতনের ফাঁকে আটকে পড়ে শ্বাসরোধ হয়ে। তবে, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
সুইমিং পুলের যে জায়গা থেকে শুল্ক দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কাজলবাবুর দেহ মিলেছে, সেই জায়গা অন্য একটি ক্লাবের জন্য নির্দিষ্ট। সম্প্রতি সেই ক্লাবেরও ‘লাইফ সেভার’ করা হয় কাজলবাবুকে। পুলিশের দাবি, ওই জায়গায় যে ‘ডাইভিং প্ল্যাটফর্ম’ রয়েছে, তার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে আরও আট ফুট বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে প্ল্যাটফর্ম বাড়ানোর পরে ঢালাইয়ের তলা থেকে কাঠের তক্তা, পাটাতন, বাঁশ আর খোলা হয়নি। মার্চের শেষ সপ্তাহে কলকাতা পুরসভা সুইমিং পুলে জল ঢালতে শুরু করে। বর্ষায় জল আরও বেড়ে যায়। কাজলবাবু সুইমিং পুলের তলায় ডুব দিয়ে চিংড়ি মাছ তুলে আনতে গিয়েছিলেন কি না, বৌবাজার ব্যায়াম ক্লাবের পাশের ওই ক্লাবকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ দিন রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত জানতে পারেনি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। তাঁর পিঠের দিকে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। কাঠের পাটাতনে আটকে থাকা পেরেক থেকেই ওই ক্ষতগুলি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ দিন বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে কাজলবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বৌবাজার ব্যায়াম সমিতিতে। বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যেরা প্রবীণ ওই সাঁতারুর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন। কাজলবাবুর ভাগ্নে শান্তনু এ দিন বলেন, ‘‘নব্বই বছরের দিদিমাকে নিয়েই আমাদের দুশ্চিন্তা। সকাল থেকে দিদিমার একটাই প্রশ্ন, কাজল কোথায়? কাল দুপুরে খেতে আসেনি, রাতে বাড়ি ফেরেনি। এখনও ফিরছে না।’’ রামনাথ বিশ্বাস লেনের ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থাকতেন অবিবাহিত কাজলবাবু। পাড়ার ও ক্লাবের লোকজনের মুখে একটাই কথা, ‘‘যিনি এত ভাল সাঁতার জানতেন, তাঁরই মৃত্যু হল জলে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy