প্রকাশ্যে একটা চড়। সেই চড় খাওয়া জনিত অপমান। সেটাই অনুঘটকের কাজ করেছে মল্লিকবাজারের ইমারতিদ্রব্যের ব্যবসায়ী নূর মহম্মদের খুনে। মূল কারণ অবশ্য ওই তল্লাটে প্রভাব বাড়ানোর লড়াই। ব্যবসায় নূরের অন্যতম অংশীদার ও তাঁর ঘনিষ্ঠ শাগরেদ বলে পরিচিত শামিম আখতার ওরফে কেলোকে গ্রেফতারের পরে এমনটাই দাবি পুলিশের। তারা জেনেছে, কেলোকেই নূর মাস দেড়েক আগে চড় মেরেছিল।
শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ আততায়ীদের গুলিতে নূর খুন হওয়ার পরে কেলোকে শনিবার দুপুর থেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার দুপুর থেকে কড়েয়া এলাকার এক যুবককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। শনিবার থেকে জেরা করা হচ্ছে নুরের ব্যবসার আর এক অংশীদার সফিককে। শামিম ওরফে কেলোকে রবিবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হলে তাকে ২২ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ও ব্যবসায়ী নূরের যথেষ্ট প্রভাব ছিল মল্লিকবাজার ও আশপাশের মহল্লায়। সেই প্রভাবই খর্ব করতে তৎপর হয়েছিল আর এক জন, যার মূলত সুদের কারবার। নূরের হাতে বেশ কয়েক জনের সামনে চড় খেয়ে অপমানিত কেলো যোগাযোগ করে ওই সুদের কারবারির সঙ্গে। কারণ, কেলো জানত, নূরকে ওই ব্যবসায়ী সরিয়ে ফেলার তালে আছে। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’— এই ফর্মুলায় হাত মেলায় দু’জনে। আবার ওই ব্যবসায়ীও জানত, নূর শাসক দলের সক্রিয় কর্মী। তৃণমূল ফের ক্ষমতায় এসেছে। তাই রাজনৈতিক প্রভাবে নূরের সঙ্গে এঁটে ওঠা যাবে না বুঝতে পেরে নূরের ঘনিষ্ঠকেই কাজে লাগায় ওই ব্যবসায়ী। বয়সে ওই ব্যবসায়ী নূরের অর্ধেক। নূরের বয়স ৫৫ বছর আর ওই ব্যবসায়ীর বয়স ২৬।
পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা এসেছিল কড়েয়া এলাকা থেকে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই রাতে মোটরবাইকে এসে নূরের উপরে হামলা চালানো চার দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জনের হাতে নাইন এমএম পিস্তল ছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কার্তুজের খোল থেকে এমনই অনুমান পুলিশের। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসার অর্থ, তাদের মোটা টাকার ‘সুপারি’-ই দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ, এ সব বন্দোবস্ত করেছিল ওই সুদের কারবারি, যাকে মূল চক্রী বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, তার বাড়িও কড়েয়া এলাকার বেকবাগান রো-তে। আর নূরের গতিবিধি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে সাহায্য করেছিল কেলো। বিনিময়ে সে কত টাকা ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কিন্তু কেলোকে কেন থাপ্পড় মেরেছিলেন নূর?
পুলিশ সূত্রের খবর, বান্টি নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে মাস দে়ড়েক আগে দে়ড় লক্ষ টাকা ধার দেয় কেলো। কিন্তু বান্টি যখন টাকা ফেরত দিচ্ছেন, তখন কেলো তার কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। বলে, সুদে-আসলে মিলিয়ে ওই অঙ্কই ফেরত দিতে হবে তাকে। বান্টি তখন কেলো ওরফে শামিমের নামে নালিশ করে নূরের কাছে। মীমাংসার জন্য দু’জনকে ডেকে পাঠান নূর। কিন্তু সেই সময়ে কেলো গলা চড়ালে নূর তাকে অনেকের সামনে চ়ড় মারেন। অপমানিত কেলো তখন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পুলিশ জানাচ্ছে, কেলো যার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে নূরের শত্রুতা দীর্ঘ দিনের। তার উদ্দেশ্য ছিল, এলাকায় নূরের প্রভাব খর্ব করে নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করা। স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক বার হাতাহাতিও হয়। কিন্তু নূরের রাজনৈতিক পরিচয় ও এলাকায় তাঁর প্রভাবের সঙ্গে প্রতিপক্ষ এঁটে উঠতে পারছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy