Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বরাহনগর-তদন্ত

ঠাকুরমাকে খুনের পিছনে নাতির ‘উচ্ছৃঙ্খল’ জীবন

বরাহনগরে ঠাকুরমাকে খুনের অভিযোগে ধৃত, ১৮ বছরের দেবাঙ্গন জানার জীবনযাত্রায় উচ্ছৃঙ্খলতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। লক্ষাধিক টাকা দামের মোটরবাইক, অসংখ্য নেশার সামগ্রী, নানা বয়সী মেয়েদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার বিভিন্ন প্রমান— সব মিলিয়ে বরাহনগরের ৫ নম্বর ব্যারিস্টার পি মিত্র রোডের কনিষ্ঠতম এই বাসিন্দার জীবনযাত্রা দেখে ভ্রূ কুঁচকেছেন দুঁদে পুলিশ অফিসারেরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৭:৩৯
Share: Save:

বরাহনগরে ঠাকুরমাকে খুনের অভিযোগে ধৃত, ১৮ বছরের দেবাঙ্গন জানার জীবনযাত্রায় উচ্ছৃঙ্খলতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। লক্ষাধিক টাকা দামের মোটরবাইক, অসংখ্য নেশার সামগ্রী, নানা বয়সী মেয়েদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার বিভিন্ন প্রমান— সব মিলিয়ে বরাহনগরের ৫ নম্বর ব্যারিস্টার পি মিত্র রোডের কনিষ্ঠতম এই বাসিন্দার জীবনযাত্রা দেখে ভ্রূ কুঁচকেছেন দুঁদে পুলিশ অফিসারেরাও। সম্পত্তি লিখে দেওয়ার দাবিতে কী ভাবে সে তার ঠাকুরমার মাথায় চেলা কাঠ দিয়ে মেরেছে এবং বাবা দেবাশিসবাবুকে ইট ছুড়ে মেরেছে, তার বর্ণনা শুনে তাকে বয়ঃসন্ধির বিগড়ে যাওয়া ছেলে বলে মনে করছেন মনোবিদেরাও।

বরাহনগর রামেশ্বর হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্র মোটরবাইক চালাত। বাড়িতে যে ঘরে সে থাকত, সেখান থেকে রাংতায় মোড়া বিভিন্ন নেশার সামগ্রী পেয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে তাই পুলিশ মনে করছে, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে প়ড়েছিল দেবাঙ্গন। তার জন্যই প্রয়োজন ছিল আরও অর্থের।

আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, দেবাঙ্গনের এই জীবনযাত্রার পিছনে সমর্থন ছিল তাঁর মা শিখাদেবীর। শনিবারেই দেবাঙ্গনের পিসি সোমা প্রামাণিক অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘আমার ভাইপোর বিগড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী ওর মা। বৌদিই ওকে মন্ত্রণা দিত সম্পত্তি হাতানোর।’’ শুক্রবারও দেবাঙ্গন তার ঠাকুরমাকে যখন আক্রমণ করে, তখনও তার মা তাতে মদত দিয়েছিলেন, এমনটাই পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন সোমাদেবী।

পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, নিহত মাধবীদেবীর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সেই একমাত্র ছেলে দেবাশিসবাবুর সন্তান হওয়ার সুবাদে এক দিন না এক দিন এই সম্পত্তির মালিকানা পেত দেবাঙ্গন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রায় অর্থের এতটাই প্রয়োজন হয়েছিল যে, এত দিন অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। আপাতত মা ও ছেলে দু’জনেই জেলে।

দেবাঙ্গনের ঘর থেকে বিবিধ সামগ্রী পেলেও কোনও বই বা লেখাপড়ার সরঞ্জাম পাননি তদন্তকারীরা। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়লে ন্যূনতম কিছু পড়াশোনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথায় সে বই-খাতা রাখত, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। অথচ ওই ঘরেই মোটরবাইকের বেশ কিছু পুরনো যন্ত্রাংশ মিলেছে। পুলিশ জেনেছে, নিজের মোটরবাইক আরও আধুনিক করতে, তার খোল-নলচে বদলে বেশ কিছু যন্ত্রাংশ নতুন করে লাগিয়েছিল সম্প্রতি। বাতিল যন্ত্রাংশগুলো সযত্নে ঘরে রেখেছিল দেবাঙ্গন। পুলিশ ওই ঘরটি সিল করে দিয়েছে।

শনিবার সারা দিনেও দেবাঙ্গনের বয়সের প্রমাণপত্র না মেলায়, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হিসেবে ১৮ বছর বয়স ধরে নিয়েই ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত তাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও তার মা শিখাদেবী পুলিশ কিংবা আদালতে মৌখিক ভাবে দাবি জানিয়েছেন, দেবাঙ্গন প্রাপ্তবয়স্ক নয়। কিন্তু সেই দাবির সপক্ষে তিনি কোনও প্রমাণপত্র পেশ করতে পারেননি বলে জানায় পুলিশ।

সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে দেবাঙ্গন ও তার বাবা দেবাশিসবাবুর মধ্যে বাড়ির পাশের রাস্তায় মারামারির সময়ে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন। সেখানে মাধবীদেবীও ছিলেন। কিন্তু তাঁকে কোনও প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তাঁর চুপ করে থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে তদন্তকারীদের। সাধারণ ভাবে চোখের সামনে ছেলে এবং নাতিকে ইট ছোড়াছুড়ি করে মারপিট করতে দেখে মাধবীদেবীর চুপ করে থাকার কথা ছিল না বলেই মনে করেন মনোবিদ মোনালিসা ঘোষও। তাঁর আশঙ্কা, ওই বাড়িতে নিয়মিত এ ধরনের অশান্তি লেগেই থাকত। তাই হয়তো বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। দেবাঙ্গনের বিষয়ে মনোবিদের মন্তব্য, ‘‘সাফল্যের মাপকাঠি তো এখন টাকায়। অসহায়তা মানুষকে ক্ষমতালোভী করে, বয়স যা-ই হোক না কেন। দেবাঙ্গনেরও কোনও ভাবে ছোটবেলা থেকেই ছিনিয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ঠাকুরমাকে মারতেও তাই হাত কাঁপেনি ওই মুহূর্তে।’’

শনিবার রাতেই ময়না-তদন্তের পরে ঠাকুরমা মাধবী জানার দেহ সৎকারের জন্য বরাহনগর শ্মশানে নিয়ে যান আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grandson grandma death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE