Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ের এত সম্পত্তি! মা জানতেনই না

কলকাতা ও তার আশপাশে মেয়ের নামে যে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে, তা জানতেন না মা। ওই মহিলার জানাই ছিল না, যাঁর সঙ্গে মেলামেশা করছেন তাঁর মেয়ে, সেই ব্যক্তি অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দন মাফিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১২
Share: Save:

কলকাতা ও তার আশপাশে মেয়ের নামে যে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে, তা জানতেন না মা।

ওই মহিলার জানাই ছিল না, যাঁর সঙ্গে মেলামেশা করছেন তাঁর মেয়ে, সেই ব্যক্তি অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দন মাফিয়া।

তাঁর মেয়ে সঙ্গীতা চট্টোপাধ্যায় এখন অন্ধ্রপ্রদেশেরই চিত্তুর জেলে। মেয়ের নামে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে জেনে কলকাতার গড়িয়ার একটি বহুতলের তিনতলার ফ্ল্যাটে বসে শুক্রবার অবাক হয়েছেন তাঁর মা।

পুলিশ জানিয়েছে, শুধু ফ্ল্যাট নয়, সোনা-দানা, টাকাকড়ি মিলিয়ে কম সম্পত্তি নেই সঙ্গীতার! আর তার বেশির ভাগই সেই চন্দন মাফিয়া মার্কন্ডন লক্ষ্মণ ওরফে লক্ষ্মণ দাঙ্গের দেওয়া। অথচ, স্বামীকে নিয়ে গড়িয়ার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন মা। সংসার চালাতে নিজেকেও রোজগার করতে হয়।

এ দিন তিনি জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এক বিমানচালকের সঙ্গে তাঁর মেয়ের যখন বিয়ে হয়, তখন সঙ্গীতার বয়স আঠেরো বছর। সেই সময়ে বিভিন্ন ফ্যাশন ক্লাবের শো-তে অংশ নিচ্ছিলেন তাঁর মেয়ে।

এমনই একটি শো-তে সঙ্গীতার সঙ্গে ওই বিমানচালকের আলাপ। পরে বিয়ে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আলাদা থাকেন তাঁরা। আর তার মাঝেই সঙ্গীতার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় লক্ষ্মণের। লক্ষ্মণ নিজেও বিবাহিত। অন্ধ্রপ্রদেশে তাঁর স্ত্রী রয়েছেন।

মায়ের বক্তব্য, ‘‘লক্ষ্মণকে নিয়ে আমার মেয়ে এ বাড়িতে এসেছিল। আমাদের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে আলাপও করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই বন্ধু যে চন্দন কাঠের চোরাচালান করেন, কী করে জানব? তবে পরে জেনেছি, আমার মেয়ের সঙ্গে লক্ষ্মণের মেলামেশা ভাল ভাবে নেননি তাঁর স্ত্রী।’’ ওই মহিলার দাবি, রক্তচন্দন কাঠ বিদেশে পাচার করা নিয়ে সঙ্গীতাকে পরিকল্পনা করে লক্ষ্মণের স্ত্রীই ফাঁসিয়েছেন।

মায়ের আরও অভিযোগ, বছর দুয়েক আগে লক্ষ্মণ তাঁর মেয়ের বিয়ের বেশির ভাগ গয়না কলকাতার ফ্ল্যাটের আলমারি থেকে না বলে নিয়ে চলে যান। সে নিয়ে থানায় অভিযোগও জানিয়েছিলেন সঙ্গীতা। পরে লক্ষ্মণের অনুরোধে তিনি সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। পরে কিছু গয়না ফেরতও পান। কিন্তু যিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক, তিনি কেন সঙ্গীতার বিয়ের গয়না নিয়ে যাবেন, তার সন্তোষজনক জবাব দেননি ওই মহিলা।

লক্ষ্মণের সঙ্গে চোরাচালানে যোগ রয়েছে, এই অভিযোগে ২০১৬ সালের মে মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ এসে নেতাজিনগরের একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছিল সঙ্গীতাকে। সে বার আলিপুর আদালতে সঙ্গীতাকে তোলা হলে বিচারক তাঁকে শর্তাধীন জামিন দেন। বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে চিত্তুর আদালতে হাজির হতে হবে সঙ্গীতাকে।

কিন্তু সঙ্গীতা চিত্তুরে সময় মতো হাজিরা দেননি। অভিযোগ, হাজির হওয়ার জন্য সঙ্গীতাকে ছ’বার নোটিস পাঠানোর পরে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সেখানকার আদালত। সেই পরোয়ানা নিয়ে ২৮ মার্চ কসবা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সোজা চিত্তুর রওনা দেয় সেখানকার পুলিশ।

সঙ্গীতার মা এ দিন জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার সেই দিন সন্ধ্যায় তাঁর মেয়ের মোবাইল থেকেই তাঁকে ফোন করে ওই গ্রেফতারের খবর দেন। দিন দুয়েক আগে চিত্তুর পুলিশের হেফাজত থেকে সঙ্গীতা তাঁকে ফোন করেছিলেন। মাকে জানিয়েছেন, তিনি ভাল আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE