Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বাড়ি ভরা পরিজন, খুন ঘুমন্ত বৃদ্ধ

পুলিশ জানায়, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পাশে নিউ আলিপুর ‘ও’ ব্লকের অন্তর্গত ৬৪৫ নম্বর বাড়িটি মুখার্জিস হাউস নামে পরিচিত। ওই তিনতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মলয়কুমার মুখোপাধ্যায় (৮২)।

নিহত বৃদ্ধের বাড়িতে পুলিশ। নিউ আলিপুরে। ফাইল চিত্র।

নিহত বৃদ্ধের বাড়িতে পুলিশ। নিউ আলিপুরে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

নিজের বাড়িতেই খুন বৃদ্ধ। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে নিউ আলিপুরে। আর তা ঘিরেই ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শহরে বয়স্কদের নিরাপত্তা নিয়ে।

পুলিশ জানায়, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পাশে নিউ আলিপুর ‘ও’ ব্লকের অন্তর্গত ৬৪৫ নম্বর বাড়িটি মুখার্জিস হাউস নামে পরিচিত। ওই তিনতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মলয়কুমার মুখোপাধ্যায় (৮২)। তিনতলায় থাকেন মলয়ববাবুর ছেলে পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও পেশায় দন্তচিকিৎসক পুত্রবধূ। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে মলয়বাবুর রক্তাক্ত দেহটি প্রথমে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক মহিলা। ওই মহিলা পরে উপরের তলায় পরিবারকে জানান। পরে পুলিশ এসে বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সম্পত্তি হাতাতেই পূর্ব পরিচিতেরা পরিকল্পনা করে বৃদ্ধকে খুন করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, যে মহিলা প্রথম দেহটি দেখেন, তিনিও স্থানীয় বাসিন্দা। নাম কবিতা দাস। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বৃদ্ধকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজে দোতলার বারান্দায় ঘুমোতে যান। পর দিন সকালে তিনি মলয়বাবুর ঘরে ঢুকে দেখেন, এক পাশে কাত হয়ে বিছানার উপরে পড়ে বৃদ্ধের দেহ। তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। বৃদ্ধের ঘর লণ্ডভণ্ড। আলমারির তছনছ অবস্থা। আলমারি থেকে উধাও একটি স্যুটকেস।

আরও পড়ুন: দ্রুত বিদায় ঘূর্ণাবর্তের, স্বস্তি বঙ্গে

খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী। তিনি জানান, ‘‘এক জন বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঠিক কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, তদন্ত চলছে।’’ তবে পুলিশের সন্দেহ, এটি খুন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের জানায়, বৃদ্ধকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। তাঁর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাতও করা হয়েছে।

পুলিশের সন্দেহ, রাতে আততায়ীরা বাড়ির পিছনে লোহার সিঁড়ি দিয়ে তারজালি ফুটো করে দোতলায় ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু দোতলায় বাধা পেয়ে নীচে নেমে যায় তারা। এর পরে বাড়ির সামনের দিকের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে তারা।

এ দিন বৃদ্ধের দেহ উদ্ধারের পরে একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দিনভর দফায় দফায় পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে পরিচারিকা— সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রশ্ন এক, বৃদ্ধ খুন হওয়ার সময়ে দোতলার বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন কবিতা। তবে আততায়ারীরা দরজা ভেঙে উপরে উঠে ওই বৃদ্ধকে খুন করার সময়ে ওই মহিলা টের পেলেন না কেন? উত্তর পেতে ওই মহিলাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কবিতার ছেলেকেও। খবর পেয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ওই বৃদ্ধের বাড়িতে যান। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তিনি। পরে অরূপবাবু বলেন, ‘‘মলয়বাবুর পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। ওঁর পুত্রবধূ আমার পারিবারিক চিকিৎসক। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক।’’

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালেও হাতে ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন মলয়বাবু। মাথায় রকমারি সাহেবি টুপি প়রা ছিল তাঁর শখ। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতেন না তিনি। কিন্তু এ ভাবে তাঁকে খুন হতে হবে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। স্থানীয় বাসিন্দা অভয় লাহা বলেন, ‘‘শহরে যে ভাবে বৃদ্ধ খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে, তাতে বয়স্ক নাগরিকেরা তো খুবই আতঙ্কে ভুগবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE