আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। এ বার একই কারণে জাতীয় পরিবেশ আদালতের (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) ক্ষোভের মুখে পড়ল পুরসভা। দূষণ ঠেকাতে তৎপর না হলে পুরসভার শীর্ষ পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে রাজ্য দূষণ পর্ষদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলেও বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ।
কালীঘাট মন্দির এলাকায় দূষণ নিয়ে কলকাতায় ট্রাইব্যুনালের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন এক আইনজীবী। পরে সেই মামলায় আদিগঙ্গার সামগ্রিক দূষণ ঢুকে পড়ে। তাতেই উঠে আসে- নাকতলা, গড়িয়ার মতো দক্ষিণ শহরতলির এলাকাগুলি থেকে অপরিশোধিত বর্জ্য নিকাশি নালা দিয়ে আদিগঙ্গায় মেশায় দূষণ বাড়ছে। এ ব্যাপারটি সামনে আসার পরেই কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সক্রিয় হতে বলেছিল ট্রাইব্যুনাল। দূষণ ঠেকানোর পরিকল্পনা জানিয়ে পুরসভাকে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল। এ দিন সেই মামলার শুনানির সময় হলফনামা জমা না পড়াতেই ক্ষুব্ধ হয় আদালত।
কলকাতা পুরসভার আইনজীবী গোপালচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য আমাদের ফের তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। ৩০ নভেম্বর মামলাটির ফের শুনানি রয়েছে।’’ এই মামলায় আদিগঙ্গার পাশে অবৈধ কলকারখানা এবং হোটেলের নিকাশি ব্যবস্থা পর্ষদকে খতিয়ে দেখতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। সেই কাজ কত দূর হয়েছে তা এ দিন জানতে চেয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী জানান, সেই কাজ চলছে। এ দিন অর্পিতাদেবীকে আদালত বলেছে, দূষণ ঠেকাতে পুরসভা কী করছে, তার উপরে পর্ষদকেও একটি রিপোর্ট দিতে হবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিবের কাছ থেকেও রিপোর্ট তলব করেছে ট্রাইব্যুনাল।
পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, অপরিশোধিত বর্জ্য মেশার ফলে আদিগঙ্গার সর্বত্রই দূষণের ছবিটা মারাত্মক। কালীঘাট থেকে যতই দক্ষিণ শহরতলির দিকে এগোনো যাবে, ততই দূষণের ছবিটা খারাপ হতে থাকবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যেও একই ছবিটা উঠে এসেছে। পর্ষদের এক বিজ্ঞানী বলেন, জলের পরীক্ষার অন্যতম মানদণ্ড ফিক্যাল কলিফর্ম নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি। প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে এর সর্বোচ্চ স্বাভাবিক মাত্রা ২৫০০। আদিগঙ্গার জলে এই ব্যাক্টেরিয়ার ন্যূনতম সংখ্যা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ২০ লক্ষ। পরিবেশবিদদের মতে, মানুষ এবং গবাদি পশুর মল থেকেই এই ব্যাক্টেরিয়া জলে মেশে। নিকাশি নালার পাশাপাশি আদিগঙ্গার দু’পাশে অবৈধ বসতি রয়েছে। রয়েছে খাটালও। তার ফলে মানুষ ও গবাদি পশুর মল সরাসরি জলে মেশে। আদিগঙ্গার অপরিশোধিত নিকাশি ফেলা বন্ধ করার পাশাপাশি ওই অবৈধ নির্মাণ ভাঙা এবং খাটাল সরাতেও নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। নিকাশি নালার কাজ তো দূর অস্ত, অবৈধ নির্মাণ ও খাটাল সরানোর কাজও একচুল এগোয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুরসভার একটি সূত্র দাবি করেছে, আদিগঙ্গার দু’পাশে বসতি বহু দিনের। নিকাশি নালাও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। এগুলি চট করে বদলানো সম্ভব নয়। বসতি উচ্ছেদ করতে গেলে শহরে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিকাশি নালা শোধনের জন্য বন্ধ করে দিলে দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। ‘‘পরিকল্পনা তৈরির আগে এ বিষয়গুলিও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে,’’ বলছেন এক পুরকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy